Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Saturday, 19 Apr 2025 05:04
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়

আরিফুল হক মল্লিক: বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে দুই ধরনের বিনিয়োগকারী রয়েছে। এগুলো হলো- প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও সাধারণ বিনিয়োগকারী।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিয়ে বলার কিছু নেই; অনেক শিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ পোর্টফোলিও ম্যানেজার তাদের বিনিয়োগ পরিচালনা করেন। কিন্তু বিপদগ্রস্ত হচ্ছের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাদের অনেকেরই কোন প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নাই। বিনিয়োগ করার মত অনেকেই আছেন, হয়তো কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতাও নাই। কিন্তু কে তাদের দেখাশোনা করবে?

সেলসম্যান অথবা অনুমোদিত প্রতিনিধিরা এসব বিনিয়োগকারীদের বুঝিয়ে-সুজিয়ে আমাদের শেয়ারমার্কেটে  নিয়ে আসছেন। কিন্তু তাদের কি সেই সময় আছে যে, প্রতিদিনের ব্যস্ততা রেখে সারাক্ষণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ অবলোকন করতে পারবেন?  অথচ, তাই হচ্ছে।  সকল দায়িত্ব পড়েছে অনুমোদিত প্রতিনিধির উপর। তারাই সাহায্য করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। আর এখানেই আরও বড় বিপদ!! দূষিত হচ্ছে আমাদের অনুমোদিত প্রতিনিধিদের একটা বড় অংশ।

অনুমোদিত প্রতিনিধি কারা ?

অনুমোদিত প্রতিনিধি হতে যোগ্যতা লাগে। বর্তমানে স্নাতক পাস- তা যেকোনো বিভাগেরই হোক না কেন, যা আগে ছিল এইচএসসি অথবা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা। আগের দিনগুলোতে মাত্র তিন দিনের একটি ট্রেনিং নিয়ে দেওয়া হতো অনুমোদিত প্রতিনিধির লাইসেন্স। এখন হয়তো আরো কিছুদিন বেশি ট্রেনিং করানো হয়।

আমার মনে হয়, একজন ট্রেডার হওয়ার জন্য এই শিক্ষা যথেষ্ট নয়। যেহেতু, নীতিনির্ধারকদের  নীতিমালার অভাবে বিনিয়োগকারীরা  আমাদের শেয়ার মার্কেটে  বিনিয়োগ করতে এসে অথৈ সাগরে পড়ে যান;  তখন বিনিয়োগকারীদের একমাত্র আশ্রয়স্থল হয় এসব অনুমোদিত প্রতিনিধিরা। যারা তাদের বিভিন্নভাবে সেবা দিয়ে থাকেন। সকল সেবার মধ্যে একটি সেবা হচ্ছে- বিনিয়োগকারীকে গাইড করা; যা আইনত কোন অনুমোদিত প্রতিনিধি দিতে পারেন না।

কিন্তু বিনিয়োগকারীরা যাবেন কোথায়?

কোন উপায়ন্ত না পেয়ে ছুটে যান অনুমোদিত প্রতিনিধিদের কাছে। আর তখনই শুরু হয় বিপর্যয়। অনুমোদিত প্রতিনিধিরা মার্কেটের সকল সত্য-মিথ্যা তথ্য বিনিয়োগকারীদের সাথে শেয়ার করেন। আর তখনই বিনিয়োগকারীগণ শুরু করেন ভুল খাতে বিনিয়োগ করা।

এটাই সত্যি যে,  অনুমোদিত প্রতিনিধিরা বারবার ধ্বংসস্তূপ থেকে তুলে নিয়ে আসেন আমাদের অবশিষ্ট শেয়ারবাজারকে। দ্বারে দ্বারে গিয়ে আবার বোঝান বিনিয়োগকারীদের, আশা দেন এবং বলেন- আসুন আপনারা, আমরা আপনাদের পাশে থাকব এবং সুন্দর একটা মুনাফার ব্যবস্থা করে দিব।

বেশ কিছুদিন যাবত দেখা যাচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অথবা বিনিয়োগকারী আমাদের সম্মানিত অনুমোদিত প্রতিনিধিদের সত্তা বা চরিত্র নষ্ট করে দেবার একটা পন্থা বের করেছেন- যা আমি আমার ২০ বছর অভিজ্ঞতায় দেখিনি।

আর তা হলো- কোন একটি বিশেষ শেয়ারের বড় একটা অংশ কিনে বা বিক্রি করে দিতে পারলে গ্যাপমানি। এই গ্যাপমানির নেশায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করছেন অনুমোদিত প্রতিনিধিরা বুঝে অথবা না বুঝে। এভাবে এই অসাধু বিনিয়োগকারীরা আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভালো শেয়ারগুলোকে হাতিয়ে নিচ্ছেন। তাদের পোর্টফলিওতে অথবা তাদের খারাপ শেয়ারগুলোকে দিয়ে দিচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে। এভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

আমি বিশ্বাস করি, অসাধু ব্যবসায়ী অথবা বিনিয়োগকারীরা খুব সহজেই আমাদের অনুমোদিত প্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে ফেলেছে। তার বড় কারণ হল-আমাদের অনুমোদিত প্রতিনিধিগণ সুবিধাবঞ্চিত। অল্প কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ব্রোকারেজ হাউজ ছাড়া বড় একটি অংশের নেই কোন অনুমোদিত প্রতিনিধির স্বার্থ রক্ষার কোনো ব্যবস্থা। যেমন- গ্রাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড লাইফ, ইন্স্যুরেন্স, এমনকি বছর শেষে প্রফিট বোনাসও নেই। তাদের একমাত্র অবলম্বন হলো তাদের মাসিক বেতন।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বড় কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ব্রোকার হাউজ ছাড়া চাকরিরত অনুমোদিত প্রতিনিধি গড় বেতন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা যেখানে একজন অনুমোদিত প্রতিনিধির গড় অভিজ্ঞতা পাঁচ থেকে দশ বছর। দেখার বিষয় হলো- শুধু এই ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় কি একটি মানুষের পক্ষে তার পরিবার পরিচালনা করা সম্ভব?

আমরা যদি বেতনটাকে একটু ভেঙে দেখি তাহলেই বোঝা যাবে:

রাজধানী শহরে একজন মানুষের জীবন চালানোর জন্য নূন্যতম খরচ:

বাড়ি ভাড়া (দুই রুম):            ১৫,০০০

ছেলে মেয়ের স্কুল খরচ:            ৫,০০০

দৈনন্দিন খাবার খরচ:            ১০,০০০

যাতায়াত খরচ:                       ৫,০০০

চিকিৎসা খরচ:                       ৫,০০০

বিবিধ খরচ :                          ৫,০০০

সর্বমোট খরচ:                       ৪৫,০০০ (অতিরিক্ত ১০,০০০)

জীবন চালাতে আরো কত আনুষঙ্গিক খরচ আছে। আমি আসলে জানিনা কিভাবে সম্ভব- এই স্বল্প বেতনে একজন অনুমোদিত প্রতিনিধি ও তার পরিবার পরিচালনা।

তাই হয়তো ঐসব অসাধু বিনিয়োগকারীদের কথায় রাজি হয়ে অনুমোদিত প্রতিনিধিগণ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করছেন।

পরিশেষে বলতে চাই, সবাই যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে চাই- তাহলে আমরা হয়তো শেয়ারবাজারকে একটি সুন্দর বিনিয়োগের জায়গা হিসেবে তৈরি করতে পারবো।

কিভাবে পারি আমরা এই অবস্থা থেকে একটি সুন্দর বিনিয়োগ উপযোগী শেয়ারবাজার গড়ে তুলতে?

সকল সম্মান রেখেই নীতিনির্ধারকদেরকে বিনীত অনুরোধ করছি, আপনারা যদি আরেকটু দায়িত্বশীল হন-তাহলে হয়তো এই শেয়ারমার্কেটটি একটা সুন্দর বিনিয়োগের জায়গা হিসেবে তৈরি হবে; আরো অনেক বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট হবেন।

তবে কিভাবে একজন অনুমোদিত প্রতিনিধি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবেন- তার একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করুন। যদি অনুমোদিত প্রতিনিধি কোন বিনিয়োগকারীকে গাইড করতে না পারে, তাহলে ব্রোকার হাউজের কোন ব্যক্তি বা কোন ডিপার্টমেন্ট তাদের গাইড করবে-তার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করুন।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে আমাদের আকুল আবেদন- অবিলম্বে অনুমোদিত প্রতিনিধির সকল সুবিধা (প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি, লাইফ ইন্সুরেন্স) বাস্তবায়ন করে সকল অনুমোদিত প্রতিনিধিকে একটি সৎ পথে জীবন চালানোর ব্যবস্থা করে দিন। একটি সুন্দর শেয়ারমার্কেট তৈরি করতে আপনাদের সকলের আন্তরিকতা ও সহযোগিতা অতি প্রয়োজনীয়।

লেখক: সাবেক হেড অব রিটেইল সেলস এন্ড ট্রেডিং, ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড।

(বিনিয়োগবার্তা/আরিফ/শামীম/২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০)