মোঃ শাহাদাৎ হোসেন রাজু, নরসিংদী: দীর্ঘ ১৪ বছর পর আজ রোববার (৭ মে) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নরসিংদী জেলা আওয়ামী যুবলীগের ত্রি-বাষিক সম্মেলন।
নরসিংদীর মোছলেউদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে আওয়ামী যবলীগের ত্রি-বার্ষিকী সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি।
সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন পানি সম্পদ প্রতি মন্ত্রী লেঃ কর্ণেল (অবঃ) নজরুল ইসলাম হীরু বীর প্রতিক, নরসিংদী-৫ (বায়পুরা আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য রাজি উদ্দিন আহম্মেদ রাজু, ও নরসিংদী-৪ (বেলাব-মনোহরদী) আসনের সাংসদ এড. নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, নরসিংদী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ভূঁইয়া, নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনের সাংসদ সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনের সাংসদ কামরুল আশরাফ খান পোটন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এ বি এম রিয়াজুল কবির কাউছার প্রমূখ। সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক হারুন অর রশিদ।
এ সম্মেলন কে ঘিরে নরসিংদীর আওয়ামী যুবলীগসহ অন্যান্য সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীর মাঝে বিরাজ করছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। সম্মেলন স্থলকে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন রঙে। তবে সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে ঘোড়পাক খাচ্ছে কে হবেন এ জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এ সম্মেলন কে সামনে রেখে ইতোমধ্যে নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলা, পৌরসভাসহ ৭১টি ইউনিয়ন সম্মেলন সমাপ্ত হয়েছে। এ কমিটি যার যার এলাকার জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলা সম্মেলনের জন্য কাউন্সিলর বাছাই করেছেন। এসব কাউন্সিলররাই হবেন জেলা আওয়ামী যুবলীগের নেতৃত্বের ভোটার।
এদিকে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনকে সামনে রেখে অভ্যন্তরীন কোন্দলে জর্জড়িত জেলা আওয়ামীলীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে নরসিংদীর রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা।
বর্তমানে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী লে. কর্ণেল (অব.) নজরুল ইসলাম হীরু এবং সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর দ্বন্ধে বিভক্ত হয়ে পড়া জেলা আওয়ামী যুবলীগের পূর্ণ গঠনে নেতৃত্ব¡ কার হাতে দিবেন সে জন্য সাধারণ নেতাকর্মীরা তাকিয়ে আছেন দলীর নীতি নির্ধারকদের দিকে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের ২৪ এপ্রিল শহরের মিতালী সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল জেলা আওয়ামী যুগলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। ওই সম্মেলনে কমিটি গঠনের পর দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বর্তমান কমিটি। একসময় এ কমিটির নিয়ন্ত্রণে ছিলেন রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজু। নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হত্যাকান্ডর পর ধ্বস নামে তার নেতৃত্বে। বর্তমানে জেলা আওয়ামী যুবলীগের একক নিয়ন্ত্রণ নজরুল ইসলাম হীরুর হাতে। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন ভূঁইয়া, দলীয় কয়েকজন এমপি ও পৌর মেয়রসহ অধিকাংশ নেতাকর্মী রয়েছেন মন্ত্রী হীরুর সঙ্গে। অপরদিকে কেবল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এড. আসাদুজ্জামান জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার পর রাজুর নেতৃত্বাধীন গ্রুপটি চাঙ্গা হয়ে উঠলেও বিধিবাম তার মৃত্যুতে তাদের সেই চাঙ্গা ভাব বেশী টিকে থাকতে পারেনি।
এবারের সম্মেলনে সভাপতি পদে বেশ কয়েকজনের নাম শুনা গেলেও বর্তমানে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় গোস্বামী ও রায়পুরা উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির ছাড়া আর কোন প্রার্থী নেই। এর আগে সভাপতি পদে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল বাছেদ ভূঁইয়া ও শীলমান্দি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাকিরের নাম ব্যাপক ভাবে শুনা গেলেও তারা প্রার্থী হচ্ছেনা বলে জানান।
অপর দিকে সাধারণ সম্পাদক পদে একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমান নরসিংদী পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল এর ছোট ভাই শামীম নেওয়াজ।
তবে লোক মুখে শোনা যাচ্ছে এবার বিজয় গোস্বামীকে সভাপতি ও শামীম নেওয়াজকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হবে। কারণ বিজয় গোস্বামী নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নজরল ইসলাম হীরু ও সাধারণ সম্পাদক মতিন ভূইয়ার আস্থাভাজন। এছাড়াও তিনি যুবলীগের একজন পরিক্ষীত নেতা। তিনি দীর্ঘ ৯ বছর জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ১৪ বছর ধরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছ্নে। অপর দিকে শামীম নেওয়াজ প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেন এবং বর্তমান মেয়র কামরুজ্জাম কামরুলের ছোট ভাই। বর্তমানে নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগে এই পরিবারের একটি একচ্ছত্র প্রভাব রয়েছে। তাছাড়াও তিনি নরসিংদী সরকারী কলেজের ভিপি ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
সম্মেলনকে সামনে রেখে বিজয় গোস্বামীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,‘ পদের প্রতি আমার কখনও লোভ ছিলনা, এখনও নেই। তবে দলীয় নেতা-কর্মী এবং কাউন্সিলরা যদি চায় তবে আমি সভাপতি পদে প্রার্থী হবো’।
মির্জানগর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ন কবিরে সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আমি ছাত্র জীবন থেকে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। আমি নরসিংদী সরকারী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, রায়পুরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ছিলাম। বর্তমানে আমি মির্জানগর ইউনিয়ননের পরপর দুইবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান। কেন তিনি যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী এই প্রশ্লের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমত: রাজনীতি করতে গেলে পদে প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমানে আমার কোন রাজতৈনিক পদ নেই। দ্বিতীয়ত: নরসিংদী জেলা যুবসমাজ আজ একতাবদ্ধ নয়। বিভিন্ন জন বিভিন্ন নেতার ছায়া তলে আছে। আমি চাই সবাই একত্র করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে শুধু মাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনার ছায়াতলে আনতে। তিনি আরো বলেন রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের কোন স্থান নেই। নরসিংদী মানুষ আজ বুঝতে পারছে নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতে বর্তমানে সে পথে চলছে।
সম্মেলনকে সামনে রেখে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা নাম প্রকাশ না করা সত্ত্বে বলেন, রোববারের সম্মেলন শুধু মাত্র লোক দেখানো। মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলে কোটি টাকা ব্যয়ে এই সম্মেলন করা হচ্ছে। যেখানে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আগ থেকে সিলেক্ট করা হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে নাম ঘোষণা করাটাই কি সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য। তবে নরসিংদী বাসি আজ তাদের এই বেলকিবাজি ধরে ফেলেছে।
নরসিংদী জেলার অনেক বিজ্ঞজন মনে করেন নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের বিভাজন নিরসনের ক্ষেত্রে যুবলীগের সম্মেলন মূখ্য ভুমিকা পালন করতে পারতো। কিন্তু বর্তমান কমিটির আন্তরিকতার অভাবেই তা সম্ভব হবেনা।
আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, সকল প্রভাবশালী নেতারাই যার যার এলাকায় নিজেদের মতো করে কমিটি বানিয়েছেন। পানি সম্পাদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম নরসিংদী সদর উপজেলা, সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু রায়পুরায় তার বিরোধী কোন পক্ষকে দলের কোন পর্যায়ের কমিটিতে রাখেননি। রায়পুরা উপজেলার ২৪টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা এবং খোদ রায়পুরা উপজেলা আ’লীগের কমিটি রাজু তার নিজের একান্ত লোকদের দিয়ে গঠন করে নিয়েছেন।
মনোহরদী উপজেলায়ও সেখানকার প্রভাবশালী নেতারা নিজেদের মতো করে কমিটি বানিয়েছেন। পলাশ উপজেলায় সাবেক এমপি ডাঃ আনোয়ারুল আশারাফ খান দিলীপ ও তার ছোট ভাই বর্তমান এমপি কামরুল আশরাফ খান পোটন একচেটিয়াভাবে কমিটি বানিয়েছেন। এ অবস্থায় জেলা আওয়ামীলীগকে উপদল মুক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই নিরপেক্ষদের অভিমত হচ্ছে দলের ঐক্য ছাড়া দলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।
(এসএইচআর/এসএএম/ ০৭ মে ২০১৭)