শামীম-আল-মাসুদ, বিনিয়োগবার্তা, ঢাকা: বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি খাতের (আইটি) প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে দক্ষ লোকবল তৈরী করা প্রয়োজন। আর এ খাতে দক্ষতা বাড়িয়ে আইটি সমৃদ্ধ জাতি গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নে তৃনমূলে আইটি জ্ঞান বাড়াতে হবে। সরকারও এ বিষয়ে সম্প্রতি যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছে। এখন কাজ হলো এটিকে ভালোভাবে মনিটরিং করতে হবে। দেশে প্রচুর পরিমানে আইটি প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষন দিচ্ছে। কিন্তু তারা আসলে কি শিখাচ্ছে, তাদের শিক্ষা কি বাস্তবসম্মত কি না, এ শ্ক্ষিা দিয়ে দেশে বা বিদেশে কর্মসংস্থান হবে কিনা এসব বিষয় মনিটরিং করতে হবে। মোটকথা দক্ষ লোকবল তৈরী করতে পারলে এ খাতে প্রচুর লোক কাজ পাবে এবং প্রচুর পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।’
বিনিয়োগবার্তার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এ কথাগুলো বলছিলেন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পরিচালক ও বিশিষ্ট আইটি উদ্যোক্তা মো: সাফকাত হায়দার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিনিয়োগবার্তার হেড অব নিউজ শামীম-আল-মাসুদ।
বর্তমানে দেশে ক্লোজ সার্কিট ক্যামারার (সিসি) টিভির চাহিদা বেড়ে উঠা প্রসঙ্গে সাফকাত হায়দার বলেন, বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে যেসব জিনিসের চাহিদা বাড়ে সেসব পন্যের মান নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়। বর্তমানে দেশে সিসি টিভির চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এর মাধ্যমে কতটা অপরাধ নিয়ন্ত্রন হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এসব সিসি টিভির অপারেটিং সিস্টেম ভাল মানের হতে হবে। আসলে সিসি টিভির ব্যবহার বাড়ানোর মানে হলো অপরাধীদের মধ্যে একটি আতঙ্ক দিয়ে দেওয়া। এরফলে কোন অপরাধ করার আগে অবশ্যই তারা ভাববে যে, তাদেরকে ফলো করা হচ্ছে। তাদের কার্যক্রম রেকর্ড রাখা হচ্ছে। আর এই আতঙ্কের কারণে তারা হয়তো যেখানে সেখানে অপরাধ প্রবণতা থেকে কিছুটা দূরে সরে আসবে।
বর্তমানে সিটি করপোরেশনগুলো সিসি টিভি ব্যবহারের কথা বলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাই যদি হয়, তবে আমি বলবো- এটি একটি ভাল উদ্যোগ। কিন্তু সম্প্রতি যেসব ঘটনা ঘটছে সেগুলো সিসি টিভিতে ক্যাচ করার পরেও কি অপরাধীদের ধরে আনা গেছে। আমার প্রশ্ন হলো-একটি চিহ্নিত অপরাধীকে ধরতে এত সময় লাগবে কেন? তবে এসব সিসি ক্যামারা ব্যবহারের ফলে কিছুটা হলেও অপরাধ কমে আসবে বলেও আমি বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ধারণ করতে হবে। কম্পিউটার বা সিসি টিভি এসবের নিজস্ব কোন ক্যাপাসিটি নাই। তাদেরকে সফটওয়ার বা নিজেদের মেধার মাধ্যমে যেভাবে সেটআপ করা হবে সেভাবেই কাজ করবে। তাই কোন প্রযুক্তি কিভাবে- কোথায় কাজ করবে, তা আগে নির্ধারণ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি। অথচ, আমাদের অনেক সরকারি অফিসে ডিজিটাল সেটআপ আছে, কিন্তু কোন ব্যবহার নাই। কারণ, সরকারি স্টাফদেরই এখনো ডিজিটাল জ্ঞান আহরণ বাধ্যতামূলক করা নাই। অনেক সরকারি অফিসে গেলে দেখা যাবে, তারা এখনো সেই পুরোনো পদ্ধতি নিয়েই আছে। তারা আইটি কাজের জন্য আলাদা সেকশন করে রেখেছে। কোন বিষয়ে নোট দিলে তা একবার টাইপ করা হয়, পরে তা সংশোধনের জন্য আনা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এটাকে চেক দিয়ে কেটে বা সংশোধন করে আবার ওই শাখায় পাঠান। আবারো কারেকশন করে প্রিন্ট আউট দিয়ে বসের কাছে পাঠানো হয়। এখানে যেমন সময়ের অপচয় হয় তেমনি কাগজ কালিরও অপচয় হয়। আামদের অনেক উর্ধতন কর্মকর্তাদের এ সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব রয়েছে। এসবের আরো উন্নয়ন করা দরকার।
দেশে ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রচুর লোক কাজ করছে উল্লেখ করে সাফকাত হায়দার বলেন, আগে এই পদ্ধতিতে কাজের পারিশ্রমিক হিসাবে অনেক টাকা পাওয়া গেলেও দিন দিন তা কমে আসছে। বিদেশি কোম্পানিগুলো আগে ঘন্টাপ্রতি ৮/১০ ডলার করে দিলেও বর্তমানে তা কমিয়ে ১/২ ডলারে নামিয়ে এনেছে। অথচ, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই পদ্ধতিতে কাজ দিতে পারলে কিন্তু অনেক বেকার লোকের কর্মসংস্থান হতো; পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ ডলার আয় হতো। তাই এদিকটায় সরকার ও সংশ্লিষ্টদের নজর দিতে হবে।
ফেসবুকের অপব্যবহার সম্পর্কে তিনি বলেন, ফেসবুক একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এখানে ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের উপকারে আসে এমন যেকোন বিষয়াদি যেকেউ শেয়ার করতে পারে। অথচ, আমাদের এখানে যত আজেবাজে জিনিস আছে; সবই ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া হয়। একজন মানুষ একাধারে কয়েক ধরনের ছবি দিয়ে একটি পোস্ট দিয়ে দেয়। এতে আত্নতৃপ্তি ছাড়া আর কি পাওয়া যায়? অথচ বিদেশে সকল হাই প্রোফাইল লোকেরা নিজেদের ব্যক্তিগত চিন্তা ভাবনা বা মতামত ফেসবুকে পোস্ট দেন। এতে দেশ, সমাজ ও জনগন সবাই উপকৃত হন।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় পাশ বা ফেলের রীতি পরিবর্তন প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাশ বা ফেলের রেওয়াজ পরিবর্তন করতে হবে। আসলে ফেলের যে রেওয়াজ আমাদের এখানে প্রচলিত তাতে শিক্ষার্থীর ওপর সামাজিক বা পারিবারিকভাবে একটি বড় ধাক্কা লাগে। এটি ঠিক নয়। এখানে দক্ষ বা অদক্ষ এমন রীতির প্রচলন দরকার। তাতে শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থা ভাল থাকবে। পরবর্তীতে সে সকল কাজেই ভাল করবে।
প্রসঙ্গত, মো: সাফকাত হায়দার বিশিষ্ট আইটি প্রতিষ্ঠান সিপ্রোকো কম্পিউটার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ এসোসিযেমন অব কল সেন্টার এন্ড আউটসোর্সিং (বাককো) এর মনোনীত প্রতিনিধি হিসাবে দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্টির (এফবিসিসিআই) নির্বাচিত পরিচালক। তিনি দীর্ঘ ৩৭ বছর যাবৎ কম্পিউটার জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। দেশ বিদেশের আইটি খাত নিয়ে তার রয়েছে বিশাল অভিজ্ঞতা।
(শামীম/ ১৫ নভেম্বর ২০১৫, পূণ:প্রকাশ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)