প্রতিবেদক, বিনিয়োগবার্তা, চট্টগ্রাম: ইনল্যান্ড ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগাং (আইভোয়াক) নামে নতুন সংগঠনের ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রামের জাহাজ মালিকরা।
আগামী রোববার থেকে লাইটারেজ জাহাজের সিরিয়াল এবং জাহাজ বরাদ্দ দেওয়ার সব সিদ্ধান্ত দেবে নতুন সংগঠনটি। একইসঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন খাতে পণ্য পরিবহনের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) থেকে বের হয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রামের জাহাজ মালিকরা।
অন্যদিকে ডব্লিউটিসি থেকে বের হওয়া জাহাজ মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করতে চট্টগ্রামে যাবেন বলে জানিয়েছেন আরেক সংগঠন বাংলাদেশ কোস্টাল ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিভোয়া) সদস্যরা। তারা বলেন, কোনো ভুল বুঝাবুঝি থাকলে- তার অবসান করা হবে। একটি চক্র ডব্লিউটিসি ভাঙ্গতে চাচ্ছে। তবে সেই চক্রান্ত কোনোভাবেই সফল হবে না।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে প্রায় ১২০০ লাইটারেজ জাহাজ বন্দর চ্যানেলের নানা ঘাট এবং ঢাকা, মিরপুর, নগরবাড়ী, বাঘাবাড়ী, নোয়াপাড়া, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন করে। আর জাহাজগুলোকে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল বা ডব্লিউটিসির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
ডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, জাহাজ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোস্টাল ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিভোয়া), কোস্টাল-শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (কোয়াব) এবং ইনল্যান্ড ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগাং (আইভোয়াক) যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ২০০৩ সালে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল গঠন করে।
চেম্বার অব কমার্স থেকে ডব্লিউটিসি যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তীতে চেম্বার থেকে বেরিয়ে জাহাজ মালিকদের ৩ সংগঠনের নেতাদের তত্ত্বাবধানে ডব্লিউটিসির কার্যক্রম চলছিল। ডব্লিউটিসির মাধ্যমে দেশের সব লাইটারেজ জাহাজই সিরিয়াল মেনে চলাচল করছে। প্রত্যেক জাহাজ মালিক নিজেদের জাহাজ ডব্লিউটিসিতে উপস্থাপন করে। আমদানিকারকদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিদিন বিকেলে বার্থিং সভায় জাহাজ বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ কোস্টাল ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিভোয়া) এক চিঠিতে জানানো হয়েছে, ডব্লিউটিসির ৯০ শতাংশ জাহাজের মালিক চট্টগ্রামের বাইরের। চট্টগ্রামের জাহাজ মালিকরা ডব্লিউটিসিতে থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
এ ধরনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেন ডব্লিউটিসি চট্টগ্রামের কো-কনভেনার শফিক আহমেদ। পরে চট্টগ্রামের জাহাজ মালিকরা ডব্লিউটিসি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। গতকাল রোববার দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদের সেন্টমার্টিন হোটেলে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
গতকালের সভায় শেখ আবদুল্লাহ বাবুলসহ কয়েকজন ডব্লিউটিসির মূল ধারার সঙ্গে থাকার উপর গুরুত্বারোপ করলেও চট্টগ্রামের অধিকাংশ জাহাজ মালিক আলাদা প্ল্যাটফর্ম করার পক্ষে মত দেন।
শফিক আহমেদ জানান, ডব্লিউটিসির জন্মলগ্ন থেকে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু সম্প্রতি একটি চিঠি দিয়ে বলা হলো, চট্টগ্রামের জাহাজ মালিকরা এই সংগঠনে থাকার সুযোগ নেই। তাদের এ ধরনের চিঠির পাওয়ার পর আমি ওই সংগঠনের কোনো পদেই থাকতে পারি না। তাই বৈঠকে আমরা সবদিক আলোচনা করে ডব্লিউটিসি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ডব্লিউটিসির আদলে আমরাও জাহাজের সিরিয়াল এবং জাহাজ বরাদ্দ দেব। ভাড়াও একই থাকবে।
বাংলাদেশ কোস্টাল ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিভোয়া) সেক্রেটারি মোহাম্মদ নুরুল হক জানান, একটি চক্র ডব্লিউটিসি ভাঙ্গার চেষ্টা করছে। আমরা ডব্লিউটিসিকে ভাঙ্গতে চাই না। শিগগির চট্টগ্রামে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে জাহাজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করবো। আমরা ডব্লিউটিসিতে একযোগে কাজ করতে চাই।
তবে এই খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন কোনো সংগঠন লাইটারেজ জাহাজ ভাড়া দিলে এই খাতে সমস্যা আরও বাড়বে। তাছাড়া একটি চক্র ডব্লিউটিসি ভাঙ্গার পিছনে দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র করছে। সামনে রমজান। দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে এই লাইটারেজ জাহাজ সংকট দেখা যেতে পারে। এতে ভোগ্যপণ্যের দামও বাড়বে।
(এমএ/এসএএম/ ১৫ মে ২০১৭)