দেশর পুঁজিবাজারে শিক্ষিত ও সচেতন বিনিয়োগকারী সৃষ্টিই বিএএসএম’র মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন করেছেন বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট (বিএএসএম) এর মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, দেশের সার্বিক অগ্রগতির সাথে এখনো তেমনভাবে তাল মেলাতে পারেনি দেশের পুঁজিবাজার। এ বাজারে শিক্ষিত ও সচেতন বিনিয়োগকারীর যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলা। সেইসাথে বাজারে ট্রেডয়ের সাথে জড়িত অনুমোদিত প্রতিনিধিদের আরও সচেতন এবং যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তোলা আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।
বিনিয়োগবার্তা’র সাথে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা জানান বিএএসএম’র প্রথম মহাপরিচালক। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শামীম আল মাসুদ।
ড. তৌফিক আহমেদ বলেন, বিএএসএমে প্রায় ৭ মাসের অধিক সময় ধরে কাজ করছি। পুরোনো প্রতিষ্ঠান হলে নতুন লোক এসে শুধু কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। কিন্তু নতুন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার একটা আলাদা আনন্দ রয়েছে। সবকিছুই নতুনভাবে সাজাতে হয়, নতুন পথ পরিক্রমা তৈরি হয়। আর সেই পথ ধরেই নতুনদের এগুতে হয়। আমরা সেভাবেই কাজ শুরু করেছি। এরআগে আমি এখানে এক্সটার্নাল এমপ্লয়মেন্ট হিসেবে যোগদান করি। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির প্রথম মহাপরিচালক হিসাবে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে ফ্যাকাল্টি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের লোকজন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একাডেমিক কাউন্সিল করা হয়েছে। কাউন্সিলে ১৭জন সদস্য রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিএসইসির ২জন কমশিনার, ডিএসই, সিএসই, আইসিবিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। শুরু থেকে তারা পুঁজিবাজারে শিক্ষিত ও সচেতন বিনিয়োগকারী তৈরিতে নানা কর্মপরিকল্পনা করে চলেছেন।
ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিনিয়োগকারীরা সাধারণত অনুমোদিত প্রতিনিধিদের ওপর নির্ভর করেই তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকেন। সেক্ষেত্রে তারা যা বলেন, তা-ই বিশ্বাস করে অনেক সময় ভুল খাতেও বিনিয়োগ করে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। আমরা তাদেরকে সে অবস্থা থেকে বের করে আনতে চাই। এ কারণে শুধু বিনিয়োগকারীদেরকেই নয়, অনুমোদিত প্রতিনিধিদেরও প্রশিক্ষনের আওতায় নিয়ে আসবো আমরা। এ লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। প্রাথমিভাবে প্রতি মাসে অন্তত দুটি প্রশিক্ষন কর্মশালার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কর্মশালাগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে একদিন, কোনোটা ৩-৫ দিন কিংবা আরও বেশি সময়েরও হতে পারে। এছাড়া শিক্ষিত তরুনদের পুঁজিবাজার বিষয়ে ধারণা প্রদানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে কাউন্সিলিং করার চিন্তাভাবনা করছি। এছাড়াও ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টরদেরকে নিয়ে কর্মশালা করবো। তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য ও দায়বদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন করাটাও জরুরী। তাদেরকে আরও সচেতন করতে কাউন্সিল সদস্যদের বিশেষ পরামর্শ রয়েছে। এছাড়া নবগঠিত এসএমই প্লাটফর্ম, বন্ড মার্কেটসহ পুঁজিবাজারের বিভিন্ন প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান বৃদ্ধি করতে আমাদের প্রচেষ্ঠা থাকবে। প্রতিনিয়তই আমাদের এসব কর্মশালা অব্যাহত থাকবে।
বিএএসএম’র মহাপরিচালক বলেন, দেশ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। সারাবিশ্ব এখন আমাদের উন্নয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। দেশের পুঁজিবাজারকে সেই উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে থাকলে হবে না। দেশের অনান্য সেক্টরের সাথে পুঁজিবাজারকেও সমান তালে এগিয়ে নিতে হবে। আর তাই বিনিয়োগ শিক্ষা প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের চেয়ারম্যান মহোদয়সহ ফ্যাকাল্টি মেম্বাররাও এ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। বিএএসএম’র পাঠ্যক্রমও সেভাবে সাজানো হয়েছে।
তৌফিক আহমেদ বলেন, বিএএসএম ছাড়াও বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারের ওপর ডিপ্লামা ও মাস্টার্স কোর্স চালু করেছে। কিন্তু বিএএসএম আপাতত ডিপ্লোমা বা মাস্টার্স কোর্স কিংবা দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষনের দিকে যাচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি বিভিন্ন প্রশিক্ষনের ওপরই গুরুত্ব দিচ্ছে বিএএসএম। পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারী, অনুমোদিত প্রতিনিধি, বিএসইসি, ডিএসই, সিএসই, আইসিবি, বিভিন্ন শ্রেনীর উদ্যোক্তা, নারী উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষকে বিনিয়োগ শিক্ষার আওতায় আনাই আমাদের মূল লক্ষ্য। নিজস্ব ক্যাম্পাস ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিনিয়োগ শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। লক্ষ্যে পৌছাতে আমাদেরকে সার্বাত্নক সহযোগিতা করা হবে বলেও ঊর্ধ্বতন মহল থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
বিএএসএম’র ডিজি বলেন, দেশের ব্যাংকগুলো দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে যেয়ে আটকে যাচ্ছে। খেলাপি ঋণের ভারে নূজ্ব্য হযে পড়ছে তারা। অথচ, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের কাজ ব্যাংকের নয়। এটি করবে পুঁজিবাজার। পৃথিবীর সব উন্নত দেশেই পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থ উত্তোলন করা হয়। কিন্তু আমাদের এখানে ব্যতিক্রম। কিন্তু এ অবস্থা দীর্ঘসময় চলতে দেয়া যায় না। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ব্যাংকের সাথে সাথে উদ্যোক্তাদেরও বিষয়টি বুঝতে হবে। আমরা উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করবো।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বিএএসএম’র মহাপরিচালক বলেন, তালিকাভূক্ত কোম্পানিগুলোর পারফরমেন্স মূল্যায়নের জন্য অডিট ফার্ম, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিসহ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। বিনিয়োগকারীদের এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্পর্কে বুঝতে হবে। আর এসব বুঝতে হলে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। বুঝে-শুনে কিংবা বিচার-বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ না করলে পুঁজি হারানোর ঝুঁকি থাকে। তাই পুঁজিবাজার থেকে লাভবান হতে হলে শিক্ষিত ও সচেতন বিনিয়োগকারীতে রূপান্তরিত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার কোশাইয়াম গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া অধ্যাপক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৭৯ সালে ছাত্রজীবন শেষ করার পর তিনি ১৯৮১ সালের বিআইবিএমে যোগদান করেন। ৩৯ বছর তিনি বিআইবিএমে যথাক্রমে প্রভাষক, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপকের দায়িত্ব পালনের পর ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর সর্বশেষ ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর বিএসএসএম’র ডিজি হিসেবে যোগদান করেন তিনি। তিনি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সদস্য। এছাড়াও তিনি ঢাকা স্কুল অব ইকোনোমিক্সের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
(ডিএফই/এসএএম/২৬ জুন ২০২১)