ড: মিহির কুমার রায়: বর্তমান সরকার ২০৪১ সালকে মাথায় রেখে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ পরিকল্পনার মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত, যেখানে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো নানাভাবে বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে এবং সেই সঙ্গে বাড়বে কর্মসংস্থান। পাশাপাশি রপ্তানি আয়ের দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। এসব অর্থনৈতিক সফলতা নির্ভর করছে সম্পূর্ণ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ওপর। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ২৫৮ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৩১ কোটি ডলার অর্থাৎ প্রায় ১১ শতাংশ কম। আর যতটুকু বিনিয়োগ এসেছে, তার বেশিরভাগই দেশে বিদ্যমান কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফা পুনঃবিনিয়োগ করেছে। নতুন বিনিয়োগ একেবারেই কম। আঙ্কটাডের এ তথ্যের মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে দেশে বিনিয়োগে মন্দাবস্থার বিষয়টিই প্রকাশ পেয়েছে। এটা ঠিক, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বেই বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। তবে করোনার মধ্যেও চীন ও ভারতে বিনিয়োগ বেড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বিনিয়োগ বেড়েছে ২০ শতাংশ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কী কী কারণে পিছিয়ে পড়েছে, তা খতিয়ে দেখা জরুরি।
বস্তুত দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই ভালো নয়। করোনার কারণে তা আরও খারাপ হয়েছে, কারন বিদেশিরা অনেক কিছু দেখে বিনিয়োগ করে, এর মধ্যে অন্যতম হলো বিশ্বব্যাংকের ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট। ডুয়িং বিজনেসের বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো নয়। নানা ধরনের প্রক্রিয়াগত ও আইনি জটিলতার কারণে শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে এখানে। কখনোবা প্রলম্বিত হচ্ছে প্রক্রিয়া। অথচ এমনটি হওয়ার কথা নয়। দেশে ব্যবসা সহজীকরণে ডুয়িং বিজনেস সংক্রান্ত জাতীয় সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া একই উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। কথা ছিল, ডুয়িং বিজনেস সংস্কার কমিটির কার্যক্রম সরাসরি মনিটর করবে বিডা। এর ফলে আমরা আশা করেছিলাম, উদ্যোক্তারা শিল্প গড়ে তুলতে অতিদ্রুত তাদের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, দেশীয় উদ্যোক্তাদের এখনো বিভিন্ন জায়গায় হয়রানির শিকার হতে হয়, দেশি বিনিয়োগ বাড়লে বিদেশিরা এ দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে, এটাই স্বাভাবিক। সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার পরও দেশে ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি হচ্ছে না কেন, তা খতিয়ে দেখতে হবে। প্রকৃত সমস্যাগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে। সাধারণভাবে বলা যায়, দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দেশে সহজে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বড় বাধা এখনো। তাছাড়া কর দেওয়ার ক্ষেত্রে হয়রানি, জমির নামজারি করতে মাত্রাতিরিক্ত টাকা-এসবও উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে ব্যবসার পরিবেশ এখনো অনুকূল নয় এ কারণে নতুন শিল্পদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহবোধ করেন না। শিল্পায়নের স্বার্থে সরকারের উচিত অবিলম্বে এসব দিকে দৃষ্টি দেওয়া। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়লে, শিল্পায়ন ঘটলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। দৃঢ় হবে দেশের অর্থনীতির ভিত। ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নত হলে উন্নয়নশীল এবং পরবর্তী ধাপে উন্নত দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার পথটিও মসৃণ হবে ।
সরকার কয়েক মাস আগে ‘সেকেন্ড পারসপেকটিভ প্ল্যান ২০২১-২০৪১’ ঘোষণা করেছে। ভবিষ্যতে ৩০ বছরে অর্থনীতির আকার কেমন হবে, সেটা এই পরিকল্পনায় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩১ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৯ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে এবং ২০৪১ সালে জিডিপির বৃদ্ধির হার হবে ৯.৯০ শতাংশ। এ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব, যদি এখন থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আমরা আকৃষ্ট করতে পারি। কয়েক বছর আগে থেকে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ বাড়তে শুরু করলেও করোনা মহামারি সে গতিকে থামিয়ে দিয়েছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য মোটেই ভালো সংবাদ নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, করোনা ভাইরাসের কারণে ২০২০ সালে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ ১০.৮০ শতাংশ কমে গেছে। আইএলওর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে ‘গ্রিন ফিল্ড’ বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে ৮৪ শতাংশ। অথচ ২০১৮ সালে বিদেশি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে পুঁজি এনেছে ৩৫০ কোটি ডলারের বেশি। এ ধরনের পুঁজিপ্রবাহের রেকর্ড আগে কখনো দেখা যায়নি। ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া হলো বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থনীতি, বিশেষ করে, তৈরি পোশাকের বাজারের ক্ষেত্রে বিশ্বে পোশাক রফতানিতে একক দেশ হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থান এখন ভিয়েতনামের। আর বাংলাদেশ নেমে গেছে তৃতীয় অবস্থানে। করোনা ভাইরাস দেখা দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অনেক প্ল্যান্ট ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় স্থানান্তর হয়েছে। কারণ, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য দ্রুত গতিতে বিভিন্ন পলিসি বা নীতিমালার সংস্কার করেছে। এ ধরনের ‘রিলোকেশন সুবিধা’ বাংলাদেশ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তার অনেক কারণ আছে, যেমন- এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের তুলনায় ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও ভারতে করপোরেট ট্যাক্স অনেক কম। অত্যন্ত দুঃখজনক হলো, ২০২০ সালের বিশ্বব্যাংকের দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে ১৯০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ১৬৮তম। তবে ২০১৯ সাল থেকে কিছুটা ভালো করেছে। ২০২০-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে ভারত ৬৩তম, ভিয়েতনাম ৭০তম, ইন্দোনেশিয়া ৭৩তম, ভুটান ৮৯তম, নেপাল ৯৪তম, শ্রীলঙ্কা ৯৯তম, পাকিস্তান ১০৮তম, মালদ্বীপ ১৪৭তম। তাহলে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়া এবং প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থনীতিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বনিম্নে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে নতুন একজন উদ্যোক্তার বৈদ্যুতিক সংযোগ নিতে সময় লাগে ১৫০ দিন— সেখানে ভিয়েতনামে সময় লাগে ৩১ দিন, সিঙ্গাপুরে ৩০ দিন, মালেশিয়ায় ২৪ দিন, ভারতে ৫৫ দিন। এছাড়াও, ‘ট্রেড লজিস্টিক পারফরমেন্স’-এর দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে।
অবশ্য বিদেশিদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার জন্য ইদানীং কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যে, বাণিজ্য সংক্রান্ত আইনি জটিলতা সমাধান করতে বাংলাদেশ অনেক সময় নেয়। বাণিজ্য সংক্রান্ত জটিলতা দ্রুত সমাধান করতে না পারলে বর্তমান বিনিয়োগকারীদের ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। অতি সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশ হওয়া ‘২০২১ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট স্টেটমেন্ট’ অনুযায়ী বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ বিগত এক দশক ধরে বিনিয়োগ পরিবেশ ভালো করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে। এ চেষ্টা অব্যাহত থাকলে খুব শিগিগরই দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ হবে সবচেয়ে ভালো স্থান। এযাবত্ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, চীন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পুঁজি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। তাদের অবদান অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু ইদানীং কিছু দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করছে। অনেক দেশ প্রধানদের সঙ্গে বাংলাদেশে উৎ্পাদন এবং ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো হচ্ছে। এ আমন্ত্রণে অনেক দেশ সাড়া দিয়েছে। ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডসহ অনেক দেশ পুঁজি আনা শুরু করেছে। শ্রীলঙ্কায় ব্যবসায় পরিচালনা খরচ অনেক বেশি হওয়ায় তারা এ দেশে বিনিয়োগ করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। জাপান ও চীন ইদানীং বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১৬.৯ বিলিয়ন ডলার। দুঃখজনক হলো, এশিয়ার মধ্যে বিদেশি পুঁজি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বনিম্নে। ২০১৯ সালে মাত্র ১.৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশি পুঁজি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, যা মোট জিডিপির মাত্র ০.৫৩ শতাংশ। চলমান পাঁচটি হাইটেক পার্কের মাধ্যমে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের আইসিটি রপ্তানি করা হবে। জাপানের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুত করা সরকারের একটা ভালো উদ্যোগ। শুধু জাপান কেন, আরো অনেক দেশের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুত করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আমার মনে হয় পেছনের সারির কিছু দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে, যদি তাদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুত করা হয়। কারণ, ‘রিজিওনাল কানেকটিভিটির’ কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন দেশ এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করছে। দেশের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২১ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে যথাক্রমে ৭.৪ শতাংশ, ৭.৭ শতাংশ, ৮.০ শতাংশ, ৮.৩ শতাংশ এবং ৮.৫ শতাংশ। এ ছাড়াও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গড়ে ১১ শতাংশের কাছাকাছি রপ্তানি প্রাক্কলন করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস থেকে কখন রেহাই পাব জানি না, তবে এ প্রাক্কলন প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে ব্যষ্টিক অর্থনীতির অনেক সূচকের ধনাত্মক প্রবৃদ্ধি রাখতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের সন্তোষজনক প্রবাহ যে কোনো অবস্থায় নিশ্চিত করতে হবে। এর সঙ্গে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ যুক্ত হলে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতভাবে অর্জন করা সম্ভব। কয়েক বছর আগে থেকে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করলেও করোনা ভাইরাসের কারণে তা থেমে গেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে মুদ্রানীতিতে বলা আছে যে, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের দিক থেকে দক্ষিণ এবং পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে, বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে ১৪.৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ঋণপ্রবাহ ৮.৬ শতাংশ, যেখানে ভারতে ৬.৩ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ২.৭ শতাংশ মাত্র। উল্লেখ্য, ২০২০-এর জুন পর্যন্ত ৩৭.৭ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫৩.৩ শতাংশ। বাংলাদেশ সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের মর্যাদা পাওয়ার জন্য ইতিমধ্যে যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তা ১৭ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি পুঁজি দিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এছাড়াও ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ার পর অর্থনৈতিকভাবে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এজন্য এই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে না পারলে চোখে পড়ার মতো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কোনোভাবেই অর্জিত হবে না। গবেষকরা বলছেন মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে মাত্র ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ছোট ও মাঝারি শিল্প খাত ভালো নেই। আয় ও মজুরি কমায় মানুষের ভোগ কমেছে। খাদ্যব্যয় কমিয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ। ফলে পিছিয়ে পড়াদের সঙ্গে আরও মানুষ যুক্ত হওয়ার চাপ বাড়ছে। এছাড়া রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বগতিতে এক ধরনের ভাঙন ধরেছে। সরকার সাম্প্রতিককালে ২০২০-২১ সালে প্রণোদনার যে বড় হিসাবটা ঢুকিয়েছে, এর ভেতরে এমন সব প্রকল্প আছে যেগুলো আদৌ প্রণোদনা হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়। সরকার একটা বড় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প করেছে। এটাকে প্রণোদনা হিসাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এটা সরকারের সাধারণ উন্নয়ন কর্মসূচির অংশ। স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষ্যে সরকার এই মুহূর্তে ঘর নির্মাণ করছে, এটাকে প্রণোদনার মধ্যে ঢোকানো হচ্ছে, এটা আদৌ কোভিড প্রণোদনার অংশ হতে পারে কি না যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
লেখক: গবেষক ও অর্থনীতিবিদ।