Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Tuesday, 11 Jan 2022 00:00
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়

নিজস্ব প্রতিবেদক: তৈরি পোশাক রপ্তানিতে একের পর এক রেকর্ড হচ্ছে। এর সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই প্রথমবারের মতো এক বছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতে আয় ৬০০ কোটি ডলার ছাড়াল। সদ্য বিদায়ী ২০২১ সালের প্রথম ১১ মাসে (জানুয়ারি-নভেম্বর) ৬৩৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় ৫৪ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) সম্প্রতি এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। বিদায়ী বছরের এক মাসের হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। সেই হিসাবে বলা যায়, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি ৭০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি চলে যাবে।

অটেক্সার তথ্য-পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৯৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ২০১৯ সালে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৪০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয় ২০১৮ ও ২০১৫ সালে। যদিও গত এক দশকে বাজারটিতে রপ্তানি খুব বেশি বাড়েনি। যেমন ২০১১ সালে ৪৫১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে উত্থান-পতন দেখা যায়। ২০২০ সালে এই বাজারে রপ্তানি দাঁড়ায় ৫২৩ কোটি ডলার।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সামগ্রিকভাবে সর্বোচ্চ পরিমাণে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে একাধিক রেকর্ড হয়েছে। অর্থবছরের তৃতীয় মাস অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি মাসে ৪০০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় গত মাসে ৪৯০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির রেকর্ড হয়েছে। কোনো এক মাসে এই পরিমাণ রপ্তানি আগে কখনোই হয়নি। এর আগে গত অক্টোবরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৭২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশি পোশাকের বড় বাজার। তবে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বাজারটিতে রপ্তানি কমে যায়। তবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৯ সালে অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে। ইতিমধ্যে কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নেও ব্যাপক অগ্রগতি হয় বাংলাদেশের। বদৌলতে ২০১৯ সালে ৫৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। পরের বছরও শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত করোনার থাবায় রপ্তানি নিম্নমুখী হতে থাকে।

অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী বছরের প্রথম ১১ মাসে—জানুয়ারি-নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ৭ হাজার ৪২৯ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছেন। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।

মোটা দাগে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা সামগ্রিকভাবে পোশাক আমদানি যে হারে বাড়িয়েছেন, সেটি ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের রপ্তানি। কারণ, বিদায়ী বছরের প্রথম ১১ মাসে দেশটিতে ৬৩৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। এই রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি। অবশ্য ভালো প্রবৃদ্ধির পরও বাংলাদেশ এই বাজারে তৃতীয় অবস্থানেই রয়েছে। চীন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ভিয়েতনামও তাদের রপ্তানি ধরে রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে চীন। আলোচ্য ১১ মাসে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার ৭৯০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। রপ্তানিতে তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫ শতাংশ। আর দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক ভিয়েতনাম রপ্তানি করেছে ১ হাজার ৩২০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। তাদের ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় কারখানা খোলা রাখার সাহসী সিদ্ধান্তের কারণে ক্রেতাদের আস্থার জায়গায় নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। ফলে ভারত, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও চীন থেকে প্রচুর ক্রয়াদেশ সরে আসছে বাংলাদেশে। যদিও একই সময় কাঁচামালের দামও প্রচুর বেড়েছে। তবে ক্রেতারা সে অনুযায়ী দাম দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, করোনার নতুন ধরন অমিক্রন যদি বড় সমস্যা তৈরি না করে, তাহলে সামনের মাসগুলোতেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভালো রপ্তানি হবে। কারণ, আগামী জুন পর্যন্ত কারখানাগুলোতে প্রচুর ক্রয়াদেশ রয়েছে।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//