নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের কৃষি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে রফতানিমুখী কৃষি অর্থনীতি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
রোববার জাতীয় সংসদের বছর শুরুর অধিবেশনে দেয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। প্রতিবারের মতো এবারো মন্ত্রিসভার ঠিক করে দেয়া ১৬৯ পৃষ্ঠা ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পড়েন রাষ্ট্রপতি।
বিকাল ৪টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবার বছরের শুরুর অধিবেশনে প্রথম দিন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে তা করা হচ্ছে না। অধিবেশন শুরুর পর শোক প্রস্তাব গ্রহণ হয়। এরপর সভাপতিমণ্ডলীর মনোনয়ন হয়। পরে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর একটি ধন্যবাদ প্রস্তাব আনা হয়। অধিবেশনজুড়ে ওই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
মূল ভাষণের সংক্ষিপ্তসারে রাষ্ট্রপতি অর্থনীতি, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, খাদ্য-কৃষি, পরিবেশ-জলবায়ু, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের কার্যক্রম ও সাফল্য তুলে ধরেন। এছাড়া দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, কৃষি উন্নয়নে সরকারি সহযোগিতা ও কৃষিবান্ধব নীতির কারণে করোনা পরিস্থিতিতেও বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়ে বর্তমানে ৪৫৫ দশমিক শূন্য-পাঁচ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে, যা ২০০৯ সালে ছিল ৩২৮ দশমিক নয়-ছয় লাখ টন। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে ধান, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয়, আলু ও আম উৎপাদনে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে রয়েছে। আমাদের কৃষি ‘জীবন নির্বাহী’ থেকে ‘বাণিজ্যিক’ কৃষিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।
সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে আবদুল হামিদ বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাঙালি অর্জন করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য তার অব্যাহত সংগ্রাম, নির্ভীক ও দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং গভীর দেশপ্রেম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত। জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে তারই যোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে আজ বাঙালি জাতি এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্ন সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার পথে।
জনপ্রতিনিধিদের সবকিছুর ঊর্ধ্বে জনস্বার্থকে স্থান দেয়ার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, জনগণই সব ক্ষমতার উৎস এবং তাদের সব প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদ। জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে।
সংসদে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান সাবেক স্পিকার আবদুল হামিদ। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য। এ লক্ষ্যে গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং উন্নয়নের মতো মৌলিক প্রশ্নে দল-মত, শ্রেণী ও পেশা নির্বিশেষে আপামর জনগণকে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমি উদাত্ত আহ্বান জানাই। আসুন লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল মহান স্বাধীনতা সমুন্নত রেখে দেশ থেকে সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি।
স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন প্রকার বিধি-নিষেধ আরোপ ও প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি ১৫৬টি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। এছাড়া করোনা পরীক্ষার জন্য ১৫১টি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়। স্বাস্থ্যসেবা খাতে গত অর্থবছরের তুলনায় বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে ১৩ শতাংশ। দেশের সাত কোটি মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া হয়েছে। দেশের অধিকাংশ জনগণকে টিকার আওতায় আনা হবে।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//