Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Saturday, 22 Jan 2022 06:00
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়

‘সম্প্রতি দেশের পোশাকশিল্পে ট্রানজেকশন বেড়েছে, প্রচুর অর্ডারও আসছে, এক্সপোর্টও বাড়ছে। ফলে কোভিড ১৯ এর প্রভাব কাটিয়ে ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছে এ শিল্প। তাই আমি মনে করি, ক্যাপিটাল মার্কেটেও টেক্সটাইল সেক্টরের যতগুলো কোম্পানী আছে, তারা অলমোস্ট সবাই ভাল করবে। আগামীতে তারা একদিকে যেমন ডিভিডেন্ড দিবে, অন্যদিকে শেয়ারগুলোর প্রাইসও স্ট্যাবল পর্যায়ে চলে আসবে। সবমিলিয়ে দেশের পোশাক খাত সামনে আরও ভাল হবে বলে আমার দৃঢ বিশ্বাস।’

 

বিনিয়োগবার্তা’র সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর সভাপতি ফারুক হাসান।

 

রাজধানীর শেরাটন ঢাকা হোটেলে সম্প্রতি ‘বিজয়ের ৫০ বছর উদযাপন’ উপলক্ষ্যে বিজিএমইএ আয়োজিত ‘সাবেক সভাপতিদের সম্বর্ধনা’ অনুষ্ঠানের ফাঁকে বিনিয়োগবার্তা’র সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শামীম আল মাসুদ, আর সহযোগিতায় ছিলেন দেওয়ান ফজলে এলাহী।  

 

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, কোভিড শুরু হওয়ার পরে আমরা কিন্তু ফ্যাক্টরিগুলোকে চালু রেখেছি। কখনও আমাদের মেম্বাররা, আমাদের এন্ট্রাপ্রেনাররা লস দিয়েও ফ্যাক্টরি চালু রেখেছেন। বায়ারদেরকে ধরে রাখার জন্য, ফ্যাক্টরি চালু রাখার জন্য, ওয়ার্কারদের রিটেইন করে রাখার জন্য আমরা কিছুটা ঝুঁকি নিয়েও কারখানা চালু রেখেছি। এটারই আমরা এখন একটা রেজাল্ট পাচ্ছি। আমি বলবো, এটা একটা ইন্টারন্যাশনাল রিকগনিশন যে, আমরা কোয়ালিটি ডেলিভারি দিয়েছি লস দিয়ে। আমি যে জিনিসটা মনে করি, আগামী মাসগুলোতে আমরা এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারবো। আরেকটা বিষয় হলো, আমাদের পোশাক শিল্পের এখন যে গ্রোথ হচ্ছে, ইন রিয়েল সেন্সে আমাদের পুরোটাই সেই গ্রোথ না। কারণ, আমাদের মেটেরিয়েলের দাম অনেক বেড়ে গেছে এবং ফ্রেইট কস্ট অনেক বেড়ে গেছে। এর কারনে এতদিন আমাদের প্রাইস কমেছিল। আল্লাহর রহমতে এখন আমরা প্রাইসটা কিছুটা বেশি পাচ্ছি। কিন্তু আসলে সেই প্রাইসটা মেটেরিয়ালসের কস্টে চলে যাচ্ছে। তবে গ্লোবালি আমাদের গ্রোথটা ভাল। আমরা মনে করি যে, আমরা ভাল কাজগুলি করেছি, আমাদের মেশিনারি আপগ্রেডেশন করেছি, আমরা টেকনোলজি আপগ্রেডেশন করেছি, আমরা প্রসেস আপগ্রেডেশন করেছি এবং আমাদের মার্কেটিংও করছি। একইভাবে আমাদের নতুন বোর্ড্ দায়িত্ব নেয়ার পরে প্রোডাক্টের ডাইভার্সিফিকেশন নিয়ে কাজ করেছি। মার্কেট অভজার্ভেশন নিয়ে কাজ করেছি। আর ব্রান্ডিং ইমেজ নিয়েও কাজ করছি। মিডিয়াও আমাদেরকে খুব ভালমতে সাপোর্ট্ দিচ্ছে, মিডিয়াগুলো পজিটিভলি ওইগুলোকে তুলে ধরছে।

 

সবকিছু মিলে আমরা মনে করি যে, ইন্টারন্যাশনালি একটা ভালো রিকগনিশন আমরা পেয়েছি। আর এসব কারনে আগামীতে আমরা এই প্রবৃদ্ধিটাকে ধরে রাখতে পারবো বলে আমি বিশ্বাস করি।

প্রোডাক্টের প্রাইস সম্পর্কে ফারুক হাসান বলেন, প্রোডাক্টের প্রাইস ইদানিং একটু বাড়ছে, কিন্তু সেই আকারে নয়। আমাদের ‘র’ মেটেরিয়েলের দাম অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু ভ্যালু এডিশনটা সেইভাবে এখনও হচ্ছে না। তবে এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।

 

আমি মনে করি, বায়াররা এটার প্রাইসটা অবশ্যেই দিবে। আমরা আসলে এক্সপোর্টে ঘুরে দাড়িয়েছি, বেশ ভালো গ্রোথ আমাদের- এই গ্রোথটাকে আমরা ধরে রাখতে পারলে আরও ভাল করতে পারবো।

 

আমাদের মেম্বারদেরকে বলেছি যে, কম প্রাইসে এবং কম কস্টে কোন অর্ডার নয়। ব্যবসা ক্ষেত্রে কস্টিং একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। আমি মনে করি, আমাদের পণ্যের প্রাইসটাও অচিরেই ঘুরে দাড়াবে।

 

নতুন বছরের অর্থনীতি ও আরএমজি’র বাজার সম্পর্কে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, সদ্য সমাপ্ত বছর আমাদের ফিনান্সিয়াল যে অবস্থাটা ছিল, আর জুলাই-জুন (২০২১-২২) যেটা আমাদের টার্গেট নেয়া হয়েছে, সেটার থেকে আমরা ইনশাল্লাহ এবার বেশি ভালো করতে পারবো। আর ২০২২ এ আমি মনে করি, ইনশাল্লাহ আমরা অবশ্যই ভাল করবো।

 

নতুনভাবে ওমিক্রনের প্রাদূর্ভাব সম্পর্কে ফারুক হাসান বলেন, অভিয়াসলি ওমিক্রন বা কোভিড নিয়ে আমাদের শঙ্কা আছে। আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত, কিন্তু আমরা সাহসিকতার সাথে এটাকে এড্রেস করছি। আপনারা জানেন যে, যখন পিক কভিড ছিল, ডেল্টা ভেরিয়েন্টস ছিল, তখন কিন্তু আমদের ফ্যাক্টরিতে ইনফেকশন রেট অলমোস্ট ছিলই না। আর আমাদের ডেথ রেটতো নাই-ই। তো সেভাবেই আমরা এবার অনেক প্রিপারেশন নিয়েছি।

 

তিনি বলেন, আমাদের হেলথ প্রটোকল ডেভেলপ করা হয়েছে। ডব্লিউএইচও, আইএলও এবং হেলথ মিনিস্ট্রি এবং বিজিএমইএ মিলে একসাথে কাজ করছি। সেই জন্য আমি মনে করি যে, যেকোনো অবস্থাই আমরা হ্যান্ডেল করতে পারবো ইনশাল্লাহ।

 

তবে আমরা চিন্তিত হল এই ভেবে যে, গ্লোবালি যদি এইটা বেশিভাবে ইমপেক্ট হয়, তাহলেতো আমাদেরও সমস্যা। আদারওয়াইজ আমি মনে করি যে, আমরা ২০২২ এ আমরা অনেক ভাল করবো, পাজিটিভ গ্রোথ করবো। আমরা সব স্টেকহোল্ডারদের সাথেও কাজ করছি, সরকারের পলিসি সাপোর্টগুলা নিয়ে আমরা কাজ করছি। গত ২ বছরে আসলে সবাই লস দিয়ে কাজ করেছে। সুতরাং ব্যাংকেরও আমাদের অনেক সাপোর্ট্ দরকার, গভর্নমেন্টেরও সাপোর্ট্ দরকার।

 

ফারুক হাসান বলেন, আমরা রিয়েল সাসটেইনেবল নিয়ে কাজ করছি। রিয়েল সাসটেইনেবল বলতে একদিকে আমরা এনার্জি এফিশিয়েন্ট হচ্ছি, এনভায়রনমেন্ট ফ্রেন্ডলি হচ্ছি এবং আমরা সমাজের সব ধরনের লোককে এম্প্লয়মেন্টের মধ্যে আনছি। আমরা এর মধ্যে আরও ট্রেনিং সেন্টার করছি, এডুকেশনের উপরও কাজ করছি, ইনোভেশন সেন্টারের কাজ শুরু করেছি। আমরা মনে করি, এতে একদিকে প্রোডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন হবে, আরেকদিকে সমাজে যারা কাজ পায়না, তাদেরকে আমরা কর্মে ফেরত আনতে পারবো। সমাজে যারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আছে তাদেরকে আমরা সামনে নিয়ে আসবো।

 

আমি মনে করি যে, আমাদের এখানে গত ২ বছর যেখানে পাবলিক প্রজেক্ট ছাড়া সেই ধরনের ইনভেস্টমেন্ট হয় নাই, এম্প্লয়মেন্ট হয় নাই, সেই জায়গাতে আমরা এখন কাজ করছি। আমি মনে করি, আগামী এক বছর আমরা বেশ কিছু এম্প্লয়মেন্ট অপরচুনিটি ক্রিয়েট করতে পারবো। সেখানে ইনভেস্টমেন্টতো হবেই এবং এইটা আমাদের ইকোনমি আর জিডিপি থেকে শুরু করে সবকিছুতেই এটা একটা ইতিবাচক ইমপ্যাক্ট পড়বে।

 

শেয়ারবাজারে বস্ত্র খাতের অবদান সম্পর্কে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, দেশের শেয়ারবাজারে বস্ত্রখাতের বিশাল একটা অবদান আছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একক খাতের কোম্পানি হিসাবে বস্ত্রখাতের সবচেয়ে বেশি লিস্টেড কোম্পানি। তবে গত বেশ কয়েক বছর যাবৎ গার্মেন্টসের সিচুয়েশন ভাল ছিল না। টেক্সটাইল এবং স্পিনিংয়ের সিচুয়েশনও ভাল ছিল না। কোভিড ১৯সহ বৈশ্বিক মন্দাবস্থার কারণে এই নেতিবাচক অবস্থায় পড়েছিল বস্ত্র খাত। এখন আর সেই অবস্থা নেই।

 

বিজিএমইএ সভাপতি জানান, সম্প্রতি পোশাকশিল্পে ট্রানজেকশনও বেড়েছে, অর্ডারও এসেছে, এক্সপোর্টও বেড়েছে। সবদিক মিলিয়ে পোশাক খাত সামনে আরও ভাল হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

 

তাই আমি মনে করি যে, ক্যাপিটাল মার্কেটে আমাদের যে টেক্সটাইল সেক্টরের যতগুলো কোম্পানী আছে, তারা অলমোস্ট সবাই ভাল করবে। আগামীতে তারা একদিকে যেমন ডিভিডেন্ড দিবে, অন্যদিকে শেয়ারগুলোর প্রাইসও স্ট্যাবল পর্যায়ে চলে আসবে।

 

সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাথে মতবিনিময় হয়েছে জানিয়ে বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট বলেন, বিএসইসির সম্মানিত চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের সাথে মতবিনিমিয়কালে আমরা বেশ কিছু সুপারিশ করেছি। তারাও আমাদেরকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা সেভাবেই কাজ করছি।

 

আমি যেটা মনে করি যে, আমাদের এখন আরও ইমপ্রুভ করা দরকার। আমাদের দেশের ৫০ বছর হয়ে গেলো। সবদিক দিয়েই আমরা এখন বিশ্বে আলোচিত। বাংলাদেশকে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সুতরাং আমাদেরকে সবক্ষেত্রেই আরও ম্যাচিউরড হতে হবে। আর তাহলেই আমরা একটি সাসটেইনেবল উন্নত দেশের কাতারে শামিল হতে পারবো।

 

বিনিয়োগবার্তা/মুনীর/শামীম//