নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইটি খাতের কোম্পানি ইনটেক লিমিটেডের বিগত তিন বছরের আর্থিক বিবরণীর উপর বিশেষ নিরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ লক্ষ্যে একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেসি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ নিরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে কমিশন।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) কোম্পানিটির ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনের উপর বিশেষ নীরিক্ষা চালানোর জন্য জি কিবরিয়া অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে নিয়োগ দিয়েছে বিএসইসি। এদিনই প্রতিষ্ঠানটির কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। চিঠিতে
আগামী এক মাসের মধ্যে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে কোম্পানিটির সর্বশেষ তিন অর্থবছরের উপর বিশেষ নিরীক্ষা সম্পন্ন করে বিএসইসির কাছে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনা অনুসারে, বিশেষ নীরিক্ষক বিগত তিন বছরে ইনটেকের আর্থিক বিবরণীর বস্তুনিষ্ঠতা পরীক্ষা করবে। কোম্পানিটি ওই সময়ে যে মুনাফা ও শেয়ার প্রতি আয় দেখিয়েছে তা যথাযথ ছিল কি-না তা যাচাই করবে। পাশাপাশি কোম্পানিটির সম্পদ ও দায়-দেনাও খতিয়ে দেখবে।
ইনটেকের সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম মাহবুবুল আলম এবং তার পরিবারের সদস্যরা কোম্পানির নগদ অর্থ এবং অন্য সম্পদ সরিয়ে নিয়েছে কি-না তা-ও তদন্ত করবে জি কিবরিয়া অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস। এছাড়াও তিনি নিজে এবং তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণাধীন দুই কোম্পানি উইনটেল ও উইন সোর্সেস অ্যান্ড সলকোয়েস্ট এর লাভের জন্য ইনটেকের কোনো সম্পদ ব্যবহার করা হয়েছে কি-না সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।
আলোচিত সময়ে এটিএম মাহবুবুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যরা কোনো অনিয়ম করে থাকলে সেগুলোর সাথে কোম্পানির অন্য পরিচালক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও কোম্পানি সচিবের কোনো যোগসাজশ বা দায়িত্বে অবহেলার বিষয় ছিল কি-না তাও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে বিশেষ নীরিক্ষককে।
জানা গেছে, সম্প্রতি ইনটেক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করে। ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে নিরীক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়।
প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই রকিব সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে ইনটেক লিমিটেডের সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগ করেন।
অভিযোগে বলা হয়, সাবেক চেয়ারম্যান পারিবারিক স্বার্থে কোম্পানির সম্পদ ব্যবহার করেছেন। তবে কত টাকা আত্মসাৎ করেছে তা উল্লেখ ছিল না।
২০০২ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানিটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ গ্রাহকদের ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে থাকে। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি সফটওয়্যার ব্যবসাতেও বিনিয়োগ করেছে। মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার অতিমাত্রায় বৃদ্ধির কারণে কোম্পানিটি ক্ষতির মুখে পড়ে। এরপর এর নীতিনির্ধারকরা কোম্পানিটির ব্যবসা মাছ চাষের দিকে স্থানান্তর করে। ময়মনসিংহে কোম্পানিটির প্রায় ৪০ একর জমিতে মাছ চাষের প্রকল্প রয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানিটি একটি রিসোর্টও তৈরি করে। কিন্তু করোনার কারণে কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।
তথ্যপ্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান হয়ে মাছ ও রিসোর্ট ব্যবসা করার কারণে এর আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ২০২০ সালে জরিমানা করে ইনটেক লিমিটেডকে। দুর্বল কোম্পানিটিকে সবল করতে নতুন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়া এস আলম এবং কেডিএস গ্রুপ কোম্পানিটির ৩০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়।
এদিকে কোম্পানিটির রাজস্বও প্রতিবছর কমছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ইনটেকের আয় ছিল ৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ কম। এ ছাড়া গেল অর্থবছরে কোম্পানিটির নিট মুনাফা ছিল ৪৬ লাখ টাকা যা আগের বছরে ছিল ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়ায় ০.০১ পয়সা।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//