নিজস্ব প্রতিবেদক: যে কোন অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, সামনে কী হতে যাচ্ছে সেটা একটা আশঙ্কার ব্যাপার। উন্নত দেশ যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমাদের তো ভুগতেই হবে। আমি তো বলেছি যেকোনো অবস্থায় আমাদের তৈরি থাকতে হবে। আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

রোববার জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

সরকার প্রধান তার বক্তব্যে দেশের আমদানি রফতানি পরিস্থিতি, রিজার্ভ, বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিসহ সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

ডলারের ওপর চাপ বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের ওপর একটা চাপ আছে। অবশ্য ঋণপত্র খোলার জন্য যে বাড়তি চাপ তা ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি।

দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতির বিশদ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, করোনার কারণে কমে যাওয়ার পর সব কিছু উন্মুক্ত হওয়ায় আমাদের আমদানি বাড়তে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের রিজার্ভ কমতে থাকলো। আমাদের যে রিজার্ভ আছে সেটা নিয়ে অন্তত ৫ মাসের আমদানি করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে যদি তিন মাসের আমদানি করার মত রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট।

তিনি আরো বলেন, রিজার্ভ গেল কোথায়? শুধু বললে তো হবে না। আমরা বিনা পয়সায় করোনার ভ্যাকসিন দিয়েছি। এ ভ্যাকসিন ডলার দিয়ে কিনতে হয়েছে। সিরিঞ্জ কিনতে হয়েছে। করোনাকালে চিকিৎসাকর্মীদের আলাদা ভাতা দিয়েছি। সরকার সার্বিক বিষয়ে সতর্ক রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থমন্ত্রী থেকে শুরু করে সকলের সঙ্গে বসেছি। সামনে কী হতে যাচ্ছে সেটা একটা আশঙ্কার ব্যাপার। এখন থেকে প্রতিনিয়ত আমাদের এ বিষয়টি পর্যালোচনা করা। ভবিষ্যতে আমাদের কী করণীয় সেটা আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের বিলাস দ্রব্যের আমদানি কমাতে হবে। এর ওপর আমাদের ট্যাক্সও বসাতে হবে বেশি করে।

দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, দামি গাড়ি না চালালে বা আমাদের আঙ্গুর-আপেল না খেলে কী হয়? এখন তো আমাদের দেশীয় ফলতো প্রচুর আছে। আমাদের তরমুজ, আমরা কত কিছু আছে। আমাদের নিজেদের তো আছে। সবাইকে বলবো এ বিষয়ের প্রতি সকলকে দৃষ্টি দিতে হবে।

সরকারের ঋণ পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক নয় এমনটি জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, সরকারি ঋণ জিডিপির মাত্র ৩৬ শতাংশ। বৈদেশিক ঋণ ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। আমরা কোনদিনই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। আমরা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে যাই। আমরা কখনো ডিফল্টার হইনি। ভবিষ্যতেও হবো না।

অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে বলবো প্রত্যেকে কিছুটা কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে। অর্থ সাশ্রয় করতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া বিদ্যুতের সুইচ বন্ধ রাখতে হবে। মোবাইল, টিভি, টেলিফোন যা কিছু। আসলে লালবাতিটা যদি জ্বলা থাকে বিল ওঠে। প্রতিটি পরিবার এ ব্যাপারে সচেতন হয়। এ সুইচগুলি বন্ধ রাখতে বিলটা কম উঠবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তো দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এক কোটি মানুষকে ফ্যামিলি কার্ড দিয়েছি। তাদের ৩০ টাকা কেজিতে চাল দিয়ে যাচ্ছি। তেল, চিনি, ডাল কম মূল্যে সরবরাহ করে যাচ্ছি।

দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, খাদ্য উৎপাদনটা বাড়াতে হবে। আমদানিকৃত জিনিসের ওপর নির্ভরশীলটা কমানো-সেই জিনিসটা আমাদের করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে রফতানি বাড়ানো-কোনে দেশে কী পণ্য রফতানি করা যায় তার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু এজন্য প্রত্যেক ঘরে ঘরে ডেঙ্গুর বিষয়ে সুরক্ষা নিতে হবে। নিজের ঘরে যেন ডেঙ্গু উৎপন্ন না হয়। মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে।

বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পরিবহন ধর্মঘটের প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন, বাস মালিকরা যদি বাস না চালায় তাহলে আমরা কী করতে পারি? ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের অগ্নিসন্ত্রাসের প্রসঙ্গ টেনে সরকার বলেন, তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। এই যাদের অবস্থা তাদের কী জনগণ ভোট দেবে? খালেদা জিয়া কেন জেলে? তিনি তো ‍দুর্নীতির দায়ে জেলে। অর্থ পাচারে তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত। জানি না বাংলাদেশের মানুষ যদি ভোট দেয়া আমার কিছু বলার নেই।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। আমদানি পণ্য বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্য, সার, বীজ ও তেল আমদানিতে খরচ বেড়েছে।

সংসদ নেতা বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে। প্রতিনিয়ত ডলারের দাম বেড়েছে। এতে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশ বা যারা জ্বালানি তেল, গ্যাস, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করতে হয়, তাদের সকলেই সংকটে পড়েছে। তারপরও আমাদের সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

বাজেটে সরকার ভর্তুকি ধরে রেখেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি, পরিবহন খরচ বাড়ায় ভর্তুকির চাহিদা বেড়েছে। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার কোটি টাকা। আজকে সেখানে অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হয়েছে ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যদি আমরা সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ দিতে চাই তাহলে, এ ভর্তুকি দিতে হবে। জ্বালানি তেলে অতিরিক্ত ভর্তুকি লাগছে ১৯ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। খাদ্য আমদানিতে লাগছে ৪ হাজার কোটি টাকা। টিসিবিসহ জনবান্ধব কর্মসূচিতে অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে ৯ হাজার কোটি টাকা। ১ কোটি মানুষকে কার্ড দিয়েছি। স্বল্পমূল্যে তাদের খাদ্য দিচ্ছি। মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেই জন্য দিচ্ছি। কৃষিখাতে অতিরিক্ত ভর্তুকি লাগছে ৪০ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার ১০৫ কোটি টাকা শুধু ভর্তুকি চাহিদা বেড়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, গ্যাসে প্রতিঘন মিটারে ১০ টাকা ৬০ পয়সা করে ভোক্তা পর্যায়ে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। শিল্প কারখানার এলএনজির গ্যাসের প্রতি ঘনমিটারে ৪৮ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।  গত একবছরে প্রয়োজনীয় নিত্য পণ্যে দাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ দাম বিশ্ববাজারে বেড়েছে। চাল, গম ও আটার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ করে। আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহন ব্যয় ৪০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানান তিনি।

বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//