Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Wednesday, 09 Nov 2022 06:00
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়

পুঁজিবাজারে প্রচলিত ইক্যুইটি মার্কেটের বাইরে কিংবা বিকল্প বিনিয়োগের উৎস হিসেবে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) আকর্ষণীয় প্লাটফর্ম হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে আমাদের মূল মার্কেট থেকে নানা কারণে সকল কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানকে পুঁজি সংগ্রহের সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। একইসাথে আমরা এটিও চাই যে, পূঁজিবাজার সবধরনের প্রতিষ্ঠানই ঝুঁকি নিরসন করে পূঁজির সরবরাহ করবে। যেহেতু, মূল মার্কেট থেকে সবাইকে মূলধনের চাহিদা পুরণ করে দেওয়া সম্ভব নয়, তাই বিকল্প প্লাটফর্ম হিসেবে এবং পণ্য বৈচিত্র‌্যকরণের অংশ হিসেবে আমরা পুঁজিবাজারে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) চালু করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের ছোট ও মাঝারি এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো নির্বিঘ্নে মূলধন সংগ্রহ করতে পারবে। পাশাপাশি, যেসব বিনিয়োগকারী মূল মার্কেটের বাইরে বিনিয়োগের বিকল্প জায়গা সন্ধান করেন তাদের বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় প্লাটফর্ম হিসেবে আবির্ভূত হবে। এতে দেশের পুঁজিবাজারে অংশীজন বাড়বে এবং বাজার অনেক গতিশীল হবে।

সম্প্রতি রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নিজ কার্যালয়ে বিনিয়োগবার্তার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন বিএসইসির অন্যতম কমিশনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

ড. শেখ শামসুদ্দিন বলেন, এ কাজটি করতে হলে আমাদেরকে অনেক ধরনের কনফিডেন্স বিল্ডআপ করতে হবে। আইনানুগভাবে বিএসইসি একটি আস্থা সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করে থাকে। কারণ, বিএসইসি যখন কোনো প্রতিষ্ঠানকে যেকোনো ধরনের স্বীকৃতি দেয়, উৎসাহ দেয়- তখন সেটি ঐ প্রতিষ্ঠানের জন্য একটা আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করে।

'আমরা সবধরনের প্রতিষ্ঠানকেই মূল বাজারের আইপিওতে আনতে চাইনা। কারণ, সব প্রতিষ্ঠানের আইপিওতে আসার সক্ষমতা থাকে না। কিন্তু তারা আবার ব্যাংক লোনের বিকল্প উৎস থেকে মূলধন সংগ্রহের সুযোগ পাক এটাও আমরা চাই। কিংবা বিনিয়োগ যারা করতে চায়, কিন্তু তারা পূঁজিবাজারের এই গতানুগতিক ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ করতে চায় না, তারা আরো ঝুকি নিয়ে, অনান্য প্রোডাক্টেও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী- আমরা তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করে দিতে চাই।"

তিনি বলেন, এটি শুধু আমাদের দেশে নয়, এটা হচ্ছে গ্লোবাল একটা বিজনেস ডাইমেনশন, এটা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই হয়ে থাকে।

বিএসইসির এই কমিশনার বলেন, এই লক্ষ্যটাকে অর্জন করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে কতগুলো কাজ সম্পন্ন করেছি। তার মধ্যে একটি হচ্ছে- এটিবি বোর্ডটাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালু করতে সহায়তা করা। এটিবির মাধ্যমে পুঁজি সংগ্রহে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করা।

‘যদি বলেন- সেটা কি রকম, তাহলে আমি বলবো- এটি একটি অল্টারনেটিভ বোর্ড, আমাদের যে মেইন বোর্ডটা আছে সেটার ভিন্ন প্রেক্ষাপট। এই বোর্ডে যেগুলো আনলিস্টেড কোম্পানি আছে, ডিলেস্টেড আছে কিংবা এই ধরনের কোন পার্টিকুলার টাইপ অব জিনিস আছে, সেগুলো যেন সেখানে গিয়ে বলতে পারে যে, আমার এরকম একটা ব্যবসা আছে, এরকম একটা প্রতিষ্ঠান আছে, এটা আমাদের লিস্টেড না, এটা কমিশন লিস্টিং বা রেজিস্ট্রেশন করেনি, কিংবা আমাদের এই ধরনের লিস্টিং করার প্রয়োজন নাই অথবা সক্ষমতা নাই - এই ধরনের যত বিষয় আছে তাদেরকে আমরা এখান থেকে পুঁজি সংগ্রহের সুযোগ দিতে চাই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, আমরা চাই যে, নানা ধরনের পণ্যের সমাহার ঘটিয়ে যেন বিনিয়োগকারীরা আমাদের এখানে বিনিয়োগ করেন। এক্ষেত্রে আস্থা রাখার মতো নুন্যতম দক্ষতা বা সক্ষমতা নিশ্চয়ই প্রতিষ্ঠানগুলোর থাকবে। আর যারা উদ্যোগী হয়ে এবং নিজেরা বিচার-বিশ্লেষণ করে ওইসব কোম্পানিগুলোর প্রতি আস্থা রাখবে বা বিনিয়োগ করবে তাদেরকে অবশ্যই লাভবান করার প্রক্রিয়াও কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিতে হবে। আমরা চাই সবাই যেন একটা সুযোগ পায়।

'কঠিন নিয়ম-কানুনের আওতায় পরে পূঁজিবাজার থেকে সম্ভাবনাময় কোম্পানিগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাক- এটি আমরা কোনোভাবেই চাই না।' 

আমরা চাই আমাদের পূঁজিবাজার ব্যবসা-বাণিজ্য শিল্প বিনিয়োগের সব জায়গায় থাকুক। সেটা থাকতে হলে এরকম নতুন নতুন প্রোডাক্ট দরকার। সেগুলো মূল মার্কেটের সমস্ত বৈশিষ্ট্যকে যতক্ষন পর্যন্ত না ধারন করতে পারছে ততক্ষন পর্যন্ত তাদেরকে আমরা অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে রেখে ট্রেড করার একটা সুবিধা দেব।'

বিএসইসির অত্যন্ত নিষ্ঠাবান এই কর্মকর্তা জানান, এটিবিতে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত থাকবে- তারা তাদের মূলধন পাবে, আবার ঐ সমস্ত প্রতিষ্ঠানে যারা বিনিয়োগ করেছিল, যদি তারা সেসব প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যেতে চায় তাহলে তারাও এক্সিট পাবে। কারো কাছে তাদের অর্ধসমাপ্ত বা প্রায় সমাপ্ত, এমনকি সমাপ্ত প্রতিষ্ঠানও যা লিস্টেড না, ওইসকল প্রতিষ্ঠান তাদের মূলধন বা সম্পদ বিক্রি করে চলে যেতে চায়, সে সুযোগটা তারা এখানে পাবে।

এটি এ্যাকচুয়ালি একটি গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড। এই ধরনের প্রোডাক্ট পৃথিবীর প্রায় সব জায়গায়ই থাকে। আমাদের দেশে ওই অর্থে সেটি ছিল না।'

আমরা এটি বাস্তবায়নের জন্য আইনকানুন ও বিধিবিধান করে ফেলেছি। এজন্য যে বোর্ডটা দরকার সেটিও আমরা সম্পাদন করেছি। কিছু কিছু রুলস-রেগুলেশনের টিউনিংয়ের দরকার ছিল, সেগুলো্ও আমরা সম্পাদন করে ফেলেছি। তাই আমার মনে হয়, এটি শিগগীরই চালু করা যাবে।’

তিনি বলেন, কেবলমাত্র ব্যাংকভিত্তিক ঋনের ওপর ভিত্তি করে কোনো দেশ উন্নত অর্থনৈতিক অবস্থায় যেতে পারে না। ব্যাংকগুলো তাদের যা করনীয় ছিল, কর্তব্য ছিল- গত ৫০ বছরে তার চেয়ে অনেক বেশি করেছে। সেই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা তাদের ঘাড়ে বিপদও ডেকে এনেছে। আর সেটি হলো নন পারফরমিং লোন! সেটা কিন্তু তারা করেছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে আজকে তাদের ননপারফর্মিং লোনের ব্যাপারে আমাদেরকে অনেক কথা বলতে হয় বা শুনতে হয়।

আমি মনে করি, এ ধরনের জিনিসগুলো মূলত ম্যাচু্উরিটি মিসম্যাচের ব্যাপার ছিল। এখন ব্যাংকগুলো যদি রক্ষা পেতে চায়, তাদের প্রফিটেবিলিটি যদি বাড়াতে চায়, তাহলে যারা লোন নিতে আসে তাদেরকে বলতে পারে যে, তোমরা আমাদের কাছ থেকে লোন না নিয়ে এটিবি বোর্ডে যাও। তারা তোমার মতো প্রতিষ্ঠানকে লোন দিতে পারবে, তারা দেয়ার মত সক্ষমতা রাখে এবং আগ্রহ রাখে। তারা তোমাদেরকে লোন দিবে, ইক্যুইটি দিবে- যা চাও তা দিবে। আর এটিবির মাধ্যমে ব্যবসা করলে তোমরা ভাল করবে। এটা ব্যাংকের জন্যও লাভ, ঐ প্রতিষ্ঠানের জন্যও লাভ এবং যারা বিনিয়োগ করবে তাদের জন্যও লাভ এবং যারা বিনিয়োগ চাচ্ছে তাদের জন্যও লাভ।

'এটা সকলের জন্যই একটা কল্যাণকর জিনিস। কিন্তু আরও আগেই এই ব্যবস্থার দরকার থাকলেও দুঃখজনকভাবে তা আমাদের ছিল না! আমরা এটিকে এখন সর্বতোভাবে প্রস্তুত করেছি এবং আমি সবাইকে এটিতে যোগদানের করার জন্য আহ্বান জানাই।'

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যান্য বোর্ডগুলোর বিনিয়োগকারীদের জন্য যে রেস্ট্রিকশন আছে এই বোর্ডের বিনিয়োগকারীদের জন্য তা অনেক সহনীয় করা হয়েছে। কারণ, আমরা চাই, যারা বিনিয়োগকারী তারা যেন ঝুঁকি বুঝে নিতে পারে। এই অর্থে বলছি যে, অল্টারনেটিভ বোর্ডের যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো বিচার বিবেচনা করেই যেন তারা বিনিয়োগ করতে পারে। যেমন- কোনো ডিলিস্টেড প্রতিষ্ঠানও যদি এই বোর্ডে আসে, কেন এই কোম্পানিটির ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে, সেটা বিনিয়োগকারীকে জেনে-বুঝেই বিনিয়োগ করতে হবে, ঝুকি না নিলেতো লাভ হবে না। তবে ঝুঁকি আন ক্যালকুলেটেড নিলে হবে না, আবার সবাই সমান ঝুকি নিলেও হবে না।

তিনি বলেন, আমার ১০ টাকা হারিয়ে গেলে আমার তেমন একটা কষ্ট হয় না, কিন্তু ১০ হাজার টাকা হারিয়ে গেলে আমার অনেক কষ্ট হবে! আবার এমন মানুষ আছে যাদের ১০ লাখ টাকা হারিয়ে গেলেও কষ্ট হয় না! একেক জনের একেক ধরনের সক্ষমতা থাকে, সেটার উপর ভিত্তি করেই তারা বিভিন্ন পর্যায়ে বিনিয়োগ করবে। তবে সব বিনিয়োগকারীকেই আমি মনে করি যে, পোর্টফোলিও করেই করতে হবে, এক জায়গায় সব বিনিয়োগ না রেখে বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করতে হবে।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই/এসএএম//