Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Thursday, 01 Dec 2022 06:00
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়

শিল্পখাতে বিদ্যমান জ্বালানি সমস্যার সমাধানে এলএনজি ও এলপিজির ডিউটিতে কিছুটা ছাড় দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফেকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) পরিচালক আসিফ আশরাফ।

তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, এলএনজি-এলপিজির ওপর যে ডিউটি ফি আছে- এটা যদি কমানো যায়, তাহলে চলমান জ্বালানি সমস্যা কিছুটা হলেও নিরসন হবে। যেহেতু, এটি সরকারের রেভি্নিউ, তাই এক্ষেত্রে আপাতত কিছুটা ছাড় দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে একটা স্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে সরকার। এরফলে ব্যবসাটা অন্তত টিকে থাকবে, একইসঙ্গে এম্প্লয়মেন্টটাও ঠিক থাকবে। এ ব্যাপারে সরকারের বিশেষ সহযোগিতা দরকার এবং খুব ফোকাসভাবে কাজ করা দরকার।’

ব্যবসা-বাণিজ্যের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে নিজ কার্যালয়ে বিনিয়োগবার্তা’র সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন দেশের বিশিষ্ট শিল্প ব্যক্তিত্ব, বিজিএমইএ’র পরিচালক ও উর্মি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ।

বিজিএমইএ’র এই পরিচালক বলেন, বৈশ্বিক যে মন্দা চলছে তার কারনে অনেক ক্রেতা তাদের অর্ডার কমিয়ে দিচ্ছে কিংবা ডেফার করে দিচ্ছে। এই কারনেই আমাদের এখানে কিংবা পৃথিবীর অনেক দেশের ফ্যাক্টরিতে কম-বেশি স্টক কমে যাচ্ছে। আর এই স্টক জমে যাওয়াটা দুইভাবে আমাদের উপর প্রভাব ফেলছে। একটি হচ্ছে, আমাদের আমদানিকৃত জিনিসের দাম মেটানোর জন্য যথেষ্ট পরিমান ডলার থাকছে না, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে- সেই পরিমান গুডস রাখার মত ক্যাপাসিটি আমাদের নাই। মোটাদাগে এই দুটি হচ্ছে বর্তমানে গার্মেন্টস সেক্টরের জন্য বড় সমস্যা। একইসঙ্গে বন্ডের একটা বিষয়ও আমাদেরকে কিছুটা সমস্যায় ফেলছে।

তিনি বলেন, চলমান অস্থির অবস্থাটা কতদিন চলবে ৬ মাস না ১ বছর আমরা ঠিক জানিনা। তবে আমরা আশা করছি যে, ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ খুব শিগগীরই বন্ধ হয়ে যাবে। ফলশ্রুতিতে পৃথিবীজুড়ে যে অর্থনৈতিক মন্দার দিকে যাচ্ছে সেখান থেকে আমরা উদ্ধার পাব। কিন্তু এটা যেহেতু আমাদের কারও কন্ট্রোলে নাই, তাই সরকারি মহল থেকে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলে চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

আসিফ আশরাফ বলেন, এখানে আমরা সরকারের কাছ থেকে বড় ধরনের একটা সাপো্র্ট চাই। প্রথমত, পেমেন্টগুলো যাতে ওভারডিউ না হয়ে যায় তার জন্য সাহায্য দরকার। দ্বিতীয়ত, অনেক সময় কাস্টমার পণ্য নিয়ে বিক্রি করতে না পেরে টাকা দিতে পারছে না। সেক্ষেত্রে এই রিপাট্রিয়েশন পিরিয়ডটা সরকার ইতোমধ্যে বাড়িয়েছেন এবং সেটা আরেকটু বাড়ানো দরকার বলে আমি মনে করি, যাতে কেউ ফোর্সলোন কিংবা মানিলন্ডারিং কিংবা এ্ই জাতীয় কোন কিছুতে না জড়ায়। কেউ যাতে যথাসময়ে রিপাট্রিয়েট না হলেও সরকার যাতে তাদের যথেষ্ট সময় দেয়। টাকাটাতো আমাদের। তাই এই দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ নজর দিতে হবে। তৃতীয়ত, বন্ডেড ওয়্যার হাউজ ফেসিলিটিজ দরকার। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বিজিএমইএর বসে একটা ম্যাকানিজম বের করতে হবে, যাতে বন্ডের বাইরেও মালগুলো রাখা যায়।

দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী উর্মি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমরা একটা জিনিস বুঝতে পারছি যে, বিশ্বের রেসিশন চলে যাওয়ার পরে, অর্থনৈতিক গতিশীলতা আসার পরে, একটা ডিমান্ড হবে। সেখানে বাংলাদেশকে যদি এগিয়ে থাকতে হয়- তাহলে এখন থেকেই সেই উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশ আসলে এগিয়েই থাকবে। কারণ, বাংলাদেশের মত প্রোডাকশন প্রতিযোগিতায় এত বেশি ফ্যাসিলিটিজ খুব বেশি দেশের নাই। তবে এর জন্য আমাদেরকে কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। এখানে সরকারের দিক থেকে নীতিগত সহায়তা আসতে হবে এবং আমাদের ব্যাংকগুলো থেকেও সহায়তা আসতে হবে। এটা একটা রাফ প্যাচ। এই ১ বছর কিংবা ৬ মাস- ঠিক জানিনা কতদিন, দিস ইজ এ রাফ প্যাচ ফর দি ইন্ডাস্ট্রি, ফর দা কান্ট্রি, ফর দি ওয়ার্ল্ড। সো, এই রাফ প্যাচের মধ্যে ব্যাংক এন্ড দি গভার্ণমেন্ট হ্যাব টু সাপোর্ট, সো দ্যাট উই ক্যান সারভাইভ এন্ড গেট রেডি টু টেক দি নেক্সট লেভেল অব চ্যালেঞ্জেস।

এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ আশরাফ বলেন, গ্যাস, বিদ্যুতের যে সমস্যা আমাদের চলছে এবং প্রোডাকশনের যে ক্ষতি হচ্ছে তা থেকে উত্তোরনের বিকল্প পদ্ধতি হিসাবে আমাদেরকে কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবসা করতে গেলে গ্যাস, বিদ্যুৎ দুইটাই লাগবে। আমার মনে হয় আমরা গত ১৫/২০ দিনে বিদ্যুতের যথেষ্ট উন্নতি দেখতে পেয়েছি, এখন বিদ্যুৎ আগের মত যাচ্ছে না, এক্ষেতেও আমরা কিছুটা বেটার সিচ্যুয়েশনে আছি। তার মানে এ বিষয়ে সরকার কোনো না কোনো স্টেপ নিয়েছেন। আমার জানা মতে ডিজেল প্লান্টগুলো চালিয়ে দিয়েছেন-এটা প্রশংসার দাবিদার। একইভাবে গ্যাসের সরবরাহটাও নিশ্চিত করতে হবে। আমি জানি যা বাস্তবায়ন অনেক কঠিন, কিন্তু চেষ্টা করার দায়িত্বটা সরকারেরই। কিভাবে এ বিষয়ে আরও উন্নতি করা যায়-তা একসাথে বসে রোডম্যাপ করতে হবে। বিকল্প হিসাবে আমরা ডিজেলে ফ্যাক্টরি চালাচ্ছি। কিন্তু যাদের সেই ফ্যসিলিটিজট আছে তারা ডিজেলে চালাচ্ছি, সেটা আসলে ইকনমিক্যালি ভায়াবল না, এভাবে বেশিদিন চালাতে পারবো না। বেশিদিন এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিতে হবে। তাই এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদেরকে শিগগীরই ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের এখন দেখা দরকার যে এলপিজিতে এটা করা যায় কিনা। এছাড়া এলএনজি ও এলপিজির ডিউটিতে আপাতত কিছুটা ছাড় দিতে হবে। বর্তমান সমস্যা কেটে গেলে প্রয়োজনে আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে আসা কিংবা অন্য আরেকটা পথ আবিষ্কার করতে হবে।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই/এসএএম//