নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের জনগণকে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে মাধ্যমিক পর্যায় থেকে পাঠ্যপুস্তকে ‘বিনিয়োগ শিক্ষা’ হিসেবে পুঁজিবাজার, ব্যাংক, বিমা ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এরই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানসমূহকে চিঠি দিয়েছে কমিশন।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটস (বিএএসএম), বাংলাদেশ ইনস্টিটিট অব ক্যাপিটাল মার্কেট, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠাপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ২০১৭ সালে উদ্বোধনকৃত দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নিয়মিতভাবে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এরই ধারাবহিকতায় জাতীয় পাঠ্যক্রমে বিনিয়োগ শিক্ষা অন্তর্ভুক্তিকরণ বিষয়ক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে, আগামী ৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুর ১টায় বিএসইসির ৫ম তলার সভা কক্ষে একটি আলোচনা সভা হবে।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, জাতীয় পাঠ্যক্রমে বিনিয়োগ শিক্ষা অন্তর্ভুক্তিকরণ বিষয়ক আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটসের (বিএএসএম) মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ইনস্টিটিট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তার, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠাপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন নীলাঞ্জন কুমার সাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকুল ইসলাম, ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. গোলাম ফারুক ও এসিসিএ বাংলাদেশের হেড প্রমা তাপসী খান।
বিএসইসির মতে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়টি স্কুল কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করাই শ্রেয়। স্কুলপর্যায়ের বিনিয়োগ শিক্ষা, একজন নাগরিককে পরিণত বয়সে আয়, ব্যয়, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। তাই দেশে জনগণকে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে বিশেষ ধরনের ‘ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম’ গড়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিক পর্যায় থেকে সচেতনতা বাড়াতে মাধ্যমিক থেকে পাঠ্যপুস্তকে বিনিয়োগ শিক্ষা তুলে ধরা হবে। পরবর্তী সময়ে কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ে বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়টি সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সর্বোপরি বিনিয়োগ শিক্ষা বিষয়ে মাস্টার্স বিভাগ চালু করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।এছাড়া, দেশের শেয়ারবাজারে অধিকাংশই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। আরা তারা যথাযথ বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত নয়। তারা তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক বিবরণী এবং অন্যান্য প্রাপ্ত তথ্যাদি সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে পারেন না। তাই তারা গুজব, ধারণা ও আবেগের ভিত্তিতে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেয়। শুধু তাই নয়, বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা বৃহৎ বিনিয়োগকারীদের অনুসরণ করে থাকে। এর ফলে বাজার কারসাজির সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়। পুঁজিবাজারে ভুল বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পুঁজিবাজারের তথ্য অসামঞ্জস্য কমছে। তাই বিনিয়োগ শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হলে, শেয়ারবাজারে তথ্য অসামঞ্জস্য কমবে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরা সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে সামর্থ্য হবেন। এতে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল ও দক্ষ হবে। বাজার কারসাজির সম্ভাবনা কমবে।
বিএসইসি ২০১২ সালে একটি ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে, যেখানে বিনিয়োগ শিক্ষার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এই উদ্যোগকে ফলপ্রসূ করার জন্য স্কুলপর্যায় থেকে শুরু করার কথা বলা হয়েছে। তাই জাতীয় পাঠ্যক্রমে আর্থিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি জাতীয় নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের প্রাথমিক পাঠ (অ, আ, ক, খ) শেখাতে দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বিএসইসি। ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে। বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমকে বাস্তব রূপ দিতে বিএসইসি ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি বিভাগ চালু করেছে। আর ওই বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিএএসএম।
বিনিয়োগবার্তা/কেএইচকে/এসএএম//