নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ঝুঁকি আছে, তাই বিনিয়োগকারীদের জেনে বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে৷ আমেরিকা বা পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের সাথে যদি তুলনা করা হয়, তাহলে আমাদের দেশে নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা অনেক কম, এর একটা বড় কারণ হল ঝুঁকি নিতে আত্মবিশ্বাসের অভাব৷ এই ধারনাটাকে ওভারকাম করতে হবে৷ তাহলেই পুঁজিবাজারে নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা এবং তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে৷
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ডিএসই ট্রেনিং একাডেমি নারী বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগকারী সচেতনতামূলক কর্মশালার সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ড. রুমানা ইসলাম এসব কথা বলেন৷
এসময় উপস্থতি ছিলেন ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার, ডিএসইর উপ মহাব্যবস্থাপক ও ট্রেনিং একাডেমির প্রধান সৈয়দ আল আমিন রহমান৷
তিনি আরও বলনে, সাবধানতা অবলম্বনের ক্ষেত্রে ও সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে বা যেকোন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে মেয়েরা ঝুঁকি কম নিতে পছন্দ করে যা বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত৷ সঞ্চয়কৃত অলস টাকা হতে পারে শেয়ারবাজারের মূলধন৷ মেয়েরা বাবার কাছ থেকে, স্বামীর কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ বা চাকুরী করে প্রাপ্ত অর্থের একটা অংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে৷
ড. রুমানা ইসলাম আরও বলেন, পুঁজিবাজারে অলস টাকা বিনিয়োগ করতে হবে৷ এই অলস টাকা হতে পারে আপনাদের সঞ্চয়ের একটা একক অংশ৷ এমন টাকা যা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করা যাবে৷ দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগে ঝুঁকির মাত্রা কমিয়ে লাভবান হওয়া যায়৷ তাই ঝুঁকি কমাতে ধৈর্য্য সহকারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে মনোযোগী হতে হবে৷
আজ বিনিয়োগ করে কালই মুনাফা ঘরে তোলার মনোভাব বর্জন করতে হবে৷ এক্ষেত্রে কোন শেয়ার কখন কিনবেন এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে আপনাদের সহায়তাকরণের জন্যই এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে৷
অবশেষে তিনি বলেন, “নারী পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণের প্রয়াসে ও মহিলা বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারের সক্রিয় অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে এ ধরনের সচেতনতামূলক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে৷
পুঁজিবাজার বলতে আমরা শুধু শেয়ার বুঝি, কিন্তু পুঁজিবাজারে আরো অনেক বিনিয়োগযোগ্য প্রডাক্ট রয়েছে যেখানে আপনি বিনিয়োগ করতে পারবেন, কোথায় বিনিয়োগ করবেন তা আপনি কতটুকু ঝুঁকি নিতে পারছেন তার উপর নির্ভরশীল৷
মেয়েদের পুঁজিবাজারে অংশ গ্রহণ করা উচিত কারণ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক ডিগ্রিধারী, যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়া স্বত্তেও দেখা যায় তাদের চাকুরী করা হয়ে ওঠেনা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে৷ অনেক সময় কর্মজীবনে উন্নতি করার জন্য যতটুকু সময় বা মেধার বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন সেই সুযোগ মেয়েরা পায়না
পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে৷ আর তাই মহিলা বিনিয়োগকারীরা যদি পুঁজিবাজারে সক্রিয় থাকেন তাহলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অন্য কাজের পাশাপাশি শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করে ফেলতে পারবেন৷
আর তাছাড়াও প্রত্যেকটা নারীর অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া খুবই প্রয়োজনীয় তাদের যেকোন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সামলানোর জন্য৷ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে যতক্ষণ পর্যন্ত না জনগনের অর্ধেক নারীদের সম্পৃক্ত করতে পারছি ততক্ষন পর্যন্ত এই উন্নয়ন সম্পূর্ণকরণ সম্ভব নয়৷ মহিলাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ যতই সম্পৃক্ত করতে পারব ততই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সমৃদ্ধ হবে৷
তার আগে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার, এফসিএ, এফসিএমএ বলেন, এই ট্রেনিং প্রোগ্রামটি হলো আপনাদের এ বিষয়ে স্টার্টিং পয়েন্ট৷ পরবর্তীতে আপনাদের এ বিষয়ে অনেক অনুশীলন করতে হবে৷
এছাড়াও, আমাদের বিশেষ বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয়৷ আমরা আশা করি এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা থেকে যে জ্ঞান অর্জন করেছেন তার উপর ভিত্তি করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবেন৷ পরবর্তীতে আমাদের অন্যান্য প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহন করবেন৷
পুঁজিবাজারে এখন পর্যন্ত নারী অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা অনেক কম৷ আশা করি আগামীতে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক বাড়বে৷
এই কর্মশালায় প্রশিক্ষণ প্রদান করেন ডিএসইর উপ মহাব্যবস্থাপক ও ট্রেনিং একাডেমির প্রধান সৈয়দ আল আমিন রহমান এবং বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম৷
বিনিয়োগবার্তা/এমআর//কেএইচকে//