সহজ এক্সিট রুটের কারণে স্ট্রাটেজিক ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড্ (এটিবি) আকর্ষণীয় বিনিয়োগের প্লাটফর্ম হয়ে উঠবে বলে মনে করেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের (ডিএসই) ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. সাইফুর রহমান মজুমদার। দেশের পুঁজিবাজার সদ্য চালু হওয়া অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড্ সম্পর্কে বিনিয়োগবার্তা’র সঙ্গে একান্ত আলোচনায় তিনি এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এম. সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে আমরা অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড্ চালু করেছি, এটা মূলত বিশ্বের অনেক স্টক এক্সচেঞ্জেই প্রচলিত। যে কোম্পানিগুলো মূল মার্কেটে তালিকাভুক্ত থাকে না, তাদের একটা ট্রেডিং প্লাটফরম করার জন্যই অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডটা দেয়া হয়। আমরাও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড দিয়েছি মূলত সেই কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দেয়ার জন্য যারা মার্কেট থেকে ফান্ড রেইজ করে নাই বা করবে না। এটি করা হয়েছে তাদের জন্যই যারা মূল মার্কেটে তালিকাভুক্ত নয়, কিন্তু তারা চাইলে তাদের যে সিকিউরিটিজ আছে সেই সিকিউরিটিজ নির্ধারিত রেগুলেটরি কাঠামোর মধ্যে ট্রান্সফার করতে পারবে। এই অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ, ব্যাক সিকিউরিটিজ এবং ওপেন ইনড মিউচ্যুয়াল ফান্ড হাতবদলের সুবিধা রাখা হয়েছে। যদিও ওপেন ইনড মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন বা কাঠামো সেটা এখনও বাস্তবায়নাধিন আছে, এটার ওপর আমরা কাজ করছি। আর ডেট সিকিউরিটিজ এবং ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ অলরেডি একটা একটা করে এটিবিতে তালিকাভুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, অল্টারনেটিভ রেগুলেশনের শুরুতেই কিছু ট্রাবল আমরা দেখছি। বিশেষ করে একটি প্রভিশন আছে যে, এই বোর্ডে কোন বিনিয়োগকারী যদি কোনো সিকিউরিটিজ কিনেন তবে ৩ মাস পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হবে। এটা ইনডাইরেক্টলি প্রভিশনে বলা হয়েছে, ৩ মাসের মধ্যে কোনো সিকিউরিটিজ হস্তান্তরের মাধ্যমে যদি কোনো লাভ হয়, তাহলে সেটা ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ডে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আমরা লক্ষ্য করছি, এই বিধানটি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা কনফিউশন বা কিছুটা নিরুৎসাহ তৈরি করছে। এই বিধানটা পরিবর্তনের জন্য আমরা ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আমরা আশা করছি, উনারা যদি বিষয়টা বিবেচনা করেন তাহলে এই বিধানটা উঠে যাবে। আর এটি গেলে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে যেই সিকিউরিটিজগুলো তালিকাভুক্ত হবে, সেখানে একটা ভাল লেনদেনের সুবিধা তৈরি হবে। এখানে সবচেয়ে সুবিধাজনক যেই বিষয়টা সেটা হচ্ছে, অনেক ধরনের প্রজেক্ট আছে যে প্রজেক্টগুলো মূল মার্কেটে তালিকাভুক্ত হয় না বা মূল মার্কেট থেকে ফান্ড রেইজ করে না, কিন্তু সেই প্রজেক্টে বিদেশি বিনিয়োগ বা প্রফেশনাল বিনিয়োগ থাকার সুযোগ থাকে। যদি বিনিয়োগকারীর জন্য কোন এক্সিট রুট না থাকে তাহলে সেই জায়গায় সংকট তৈরি হয়, বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ থাকে না। এই অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডের একটা গুরুত্বপুর্ণ লক্ষ্য হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের একটা এক্সিট রুট দেওয়া। এখানে বিনিয়োগকারী কারা, এ্ই বিনিয়োগকারী হচ্ছে আদার দ্যান স্পন্সর এন্ড ডাইরেক্টর। কোম্পানিতে বা প্রজেক্টে যারা বিনিয়োগ করছেন, যারা উদ্যোক্তা, তারা ছাড়াও ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট বা স্ট্রাটেজিক ইনভেস্টররা এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে যে কোনো প্রজেক্টে বিনিয়োগ করতে পারবেন। অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুবাদে ওই বিনিযোগকারীরা এক্সিট রুট পান বা পাবেন। এই এক্সিট রুটের সুবিধাটা থাকলে শুধুমাত্র শেয়ার হস্তান্তরেরই যে সুবিধা হবে তা নয়, যে কোনো প্রজেক্টে বিদেশি বিনিয়োগ, স্ট্রাটেজিক বিনিয়োগকারী বা ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট- এই বিনিয়োগগুলো আসার সুযোগ থাকবে।
ডিএসইর এই ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড্ যদি আমরা একটা ভাইব্রেন্ট বোর্ড্ হিসাবে এন্টারপ্রিনিয়ারদের কাছে বা বিনিয়োগকারীদের কাছে এস্টাবলিশ করতে পারি তাহলে এই বোর্ডের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ এবং স্ট্রাটেজিক বিনিয়োগ আসার সুযোগ থাকবে বলে আমরা আশা করছি।
তিনি বলেন, এখনও এন্টারপ্রিনিয়ারদের কাছে কনসেপ্টটা পুরোপুরি খুব একটা যে জানা হয়েছে এমন নয়। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। আরও কিছু কোম্পানি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে এই অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডটাকে সমৃদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। এটার উদ্দেশ্য, এটার সুবিধা সম্পর্কে যারা স্টেকহোল্ডার আছেন তারা বিস্তারিত জানতে পারবেন, আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। আশা করছি, আরও কিছু সিকিউরিটিজ যখন এটাতে তালিকাভুক্ত হবে, তখন এটা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাজানি হবে এবং সকল স্টেকহোল্ডাররা এটা থেকে বেনিফিট পাবেন।
এখানে মূলকথা যেটি তা হচ্ছে- অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডের মাধ্যমে ওই প্রজেক্টগুলোকে সুবিধা দেওয়া, শেয়ার হস্তান্তরের একটা ফেসিলিটিজ দেওয়া- যারা তালিকাভুক্ত নয় বা মূল মার্কেট থেকে ফান্ড রেইজ করেন নাই, কিন্তু সেখানে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার হস্তান্তরের প্রয়োজন আছে, তাদের জন্যই এই অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডটা দেয়া হয়েছে।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//