নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ জার্নালিজম এ্যালামনাই এসোসিয়েশন (পিবজা) এর দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২ জুন (শুক্রবার)। ইতোমধ্যে এ নির্বাচনের ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণ, মনোনয়নপত্র সরবরাহ ও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছেন নির্বাচন পরিচালনার উদ্দেশে গঠিত নির্বাচন কমিশন। এছাড়া নির্বাচনে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের হলরুম বুকিং সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরাও এরইমধ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয়ের আওতাভূক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)। দেশে সাংবাদিকদের পেশাগত মানোন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণসহ স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা ও মাস্টার্স কোর্স চালু করা প্রতিষ্ঠান পিআইবি। আর প্রতিষ্ঠানটি থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা (পিজিডি) সম্পন্ন করা সাবেক ছাত্র-ছাত্রীদের সংগঠন হলেf পিবজা।
জানা গেছে, দেশের সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ২০০০ সাল থেকে এক বছর মেয়াদী স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্স চালু করে পিআইবি। কিন্তু ২০০০ সালে চালু হওয়া পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম কোর্সটি ২০০৩ সালে এসে শুধু ডিপ্লোমা হিসেবে ঘোষণা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক আলাপ-আলোচনার পরেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কারণ হিসাবে উল্লেখ করে কোর্স অনুমোদনের সময় ডিপ্লোমা কোর্স অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তিন ব্যাচের মার্কশীট ও ফলাফল এবং সার্টিফিকেট পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইন জার্নালিজম শব্দ লিখে সরবরাহ করে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইন জার্নালিজম হিসাবে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ছাত্র ভর্তি করতো। তাই তাদের এ ধরনের ভুলত্রুটি ২০০৩-২০০৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারেনি। এ কারণে ২০০৩-২০০৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা রিট করার সিদ্ধান্ত নেন। পিআইবির প্রথম ও দ্বিতীয়সহ ২০০৩-২০০৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শাখাওয়াত হোসেন, সরোয়ার হোসেন, রফিকুল ইসলাম বাদল, গাজী আব্দুল হাদী ও আবুল হোসেন বাদী হয়ে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল কাইয়ুমের মাধ্যমে এ বিষয়ে রিট করেন। দীর্ঘসময় মামলা চলার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও পিআইবির লিখিত দেওয়ার প্রেক্ষিতে মামলা তুলে নেওয়া হয়। পরে ২০০৭ সালে চার ব্যাচের পরীক্ষা একত্রে অনুষ্ঠিত হয়। যার ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
আরও জানা গেছে, পিআইবির সাবেক ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ২০১৫ সালে পিআইবি জার্নালিজম এ্যালামনাই এসোসিয়েশন (পিবজা) গঠন করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে সভাপতি ও এ্যাডভোকেট রুহী শামসেদ আরাকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছরের কার্যকাল নির্ধারণ করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। প্রথম দু/এক বছর এই কমিটি পিবজার বার্ষিক সাধারণ সভা ও বাৎসরিক পিকনিকসহ কিছু সামাজিক কর্মকান্ড করলেও পরবর্তীতে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তাদের কার্যক্রম মুখ থুবরে পরে। এরপর থেকে কার্যত অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পরে পিবজা। দীর্ঘদিন এমন অবস্থায় থাকর পর সম্প্রতি পিবজার সাবেক কমিটির সমাজকল্যান সম্পাদক মো: মমিনউল্লাহ, মেজবাহ উদ্দিন: মিজানুর রহমান, শরিফুল ইসলাম শাকিল, নেসার উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র সদস্যের উদ্যোগে একটি পিকনিক ও ইফতার পার্টির আয়োজন করাসহ পিবজার দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২ জুন নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করে তফসিল ঘোষণা করেন এ উদ্দেশে গঠিত নির্বাচন কমিশন। এরআগে নির্বাচন পরিচালনার উদ্দেশে মোহাম্মদ লুৎফুল কবিরবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-প্রিন্সিপাল আশরাফুল ইসলাম ও ধীমান সাহা। আর নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য ডি জেড এম মিজানুর রহমানসহ আবরও দুই জনকে নিযুক্ত করা হয়।
জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, মনোনয়ন ফরম বিক্রি, প্রার্থী যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে কমিশন। এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে এক পদের বিপরীতে তিনজন প্রার্থী হয়েছেন। তারা হলেন- অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, এডভোকেট রুহী শামসেদ আর ও সালেহ আহমেদ মিয়া। সহ-সভাপতি তিন পদের বিপরীতে চারজন। তারা হলেন-ড. আবুবক্কর সিদ্দিকী (দিপু), অধ্যক্ষ এম এ মোনায়েম, মো: মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া ও রাকিব খান। সাধারণ সম্পাদক পদে এক পদের বিপরীতে তিনজন। তারা হলেন- তানিয়া সুলতানা হ্যাপি, ডা. রথিন্দ্রনাখ সরকার ও সাহাবুদ্দিন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দুই পদের জন্য প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন পাঁচজন। তারা হলেন- মো: শামীম আল মাসুদ, আনিসুর রহমান, কামাল মোশারফ, ইঞ্জি. দানিয়েল মো: আওরঙ্গজেব ও কামরুজ্জামান। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দুইজন প্রার্থী। তারা হলেন- কাজী শরিফুল ইসলাম ও বশিরুল ইসলাম। অর্থ সম্পাদক পদে মরণ চাঁদ রায় ও তাসলিমা খাতুন। প্রচার সম্পাদক পদে রবিউল ইসলাম রবি ও আমির হোসেন। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে নাসরিন আক্তার ও সেলিনা আক্তার। স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক পদে শাহেদুল ইসলাম ও মো: জাভেদ আহমেদ।
এছাড়া কার্যকরি সদস্যসহ বেশ কয়েকটি পদে একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন কয়েকজন। তারা হলেন-আইন ও কল্যান বিষয়ক সম্পাদক মো: ইব্রাহীম খলিল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রাজিবুল হাসান, দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সুমন, নির্বাহী সদস্য এ আরএম মামুন, আদম মালিক, মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান, আলম শামস, মারুফ নেওয়াজ, সাইফুল ইসলাম, সারোয়ার হোসেন, তানভীর হোসেন, জামশেদ আকবর, মোস্তাফিজুর রহমান, মীর মো: কবির হোসেন, মো: সাইফুল ইসলাম ও এসএম আলাউদ্দিন আল আজাদ।
জানতে চাইলে পিবজার প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ লুৎফুল কবির বিনিয়োগবার্তা’কে বলেন, দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর অবশেষে পূণরায় জাগ্রত হয়েছে পিবজা। সংগঠনটিকে আরও গতিশীল করতে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে। পাশাপাশি আনুসঙ্গিক সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। আশা করছি আগামী ২রা জুন জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনে ভোটাররা স্বতস্ফূর্ত ভোট প্রদানের মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচন করবেন। আর এর মাধ্যমে আগামীতে একটি সুসংগঠিত ও বড় মাপের সংগঠন হিসেবে আত্নপ্রকাশ করবে পিবজা।
বিনিয়োগবার্তা/কায়েস/শামীম//