Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Saturday, 03 Jun 2023 06:00
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়

কামাল মাহমুদ: সব মানুষের স্বপ্ন থাকে সুন্দর একটা বাড়ি করার। সারা দিনের ক্লান্তি শেষে ঘরে ফিরে সবাই চায় একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস। নিজের একটা বাসস্থান মানুষের স্থিতিশীলতা, আত্মমর্যাদা এবং ব্যক্তিত্বকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত সবারই নূন্যতম চাওয়া একটা সুন্দর ফ্ল্যাট তথা নিজস্ব ঠিকানা। কিন্তু এবার বাজেট প্রস্তাব এর পর অসংখ্য নাগরিকের ফ্ল্যাট এর স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। আমাদের বেসরকারি ডেভেলপাদের একান্ত চেষ্টায় অনেক স্বল্পবিত্ত নাগরিকও ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছে। আবাসন ব্যবসায়ীদের কাছে মনে হচ্ছে ফ্ল্যাট আবার উচ্চ বিত্তের পণ্য হয়ে যাবে। সবার জন্য যে আবাসন এই শ্লোগান এখন শ্লোগানই থেকে যাবে। 

এবার বাজেটে অনেক এলাকায় ২০ লক্ষ টাকা প্রতি কাঠা সরকারি ট্যাক্স ধরা হয়েছে। অথবা চুক্তি মূল্যের ৮ শতাংশ। এটা আগে ৪ শতাংশ ছিল। আবার শর্ত আছে যেটা বেশি হবে সেটা দিতে হবে। তার মানে কমপক্ষে কাঠা প্রতি ২০ লক্ষ টাকা ট্যাক্স। ক্ষেত্র বিশেষ এটা আরো বেশি দিতে হবে। এটা গেলো জমির ক্ষেত্রে। ফ্ল্যাট এর ক্ষেত্রে আগে ১০-১২.৫ শতাংশ ট্যাক্স ছিল এটা এবার হবে ১৪-১৬.৫ শতাংশ। আবাসন খাতে কি অবস্থা দাঁড়াবে চিন্তা করা যায়?  

আমরা আবাসন ব্যবসায়ীরা রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(রিহ্যাব) থেকে এই ট্যাক্স ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। দীর্ঘ দিন ধরে গণমাধ্যম এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলাম। একটা সময় ১৫ শতাংশ ট্যাক্স ছিল তখন জমি–ফ্ল্যাট বিক্রি অনেক হ্রাস পেয়েছিল। চার বছর আগে কিছুটা হ্রাস করার পর এই ট্যাক্স ছিল ১০-১২.৫% পর্যন্ত। নতুন করে ৪ শতাংশ ট্যাক্স বৃদ্ধিতে এই খাতে স্থবিরতা নেমে আসবে। অধিক ট্যাক্স কালেকশন করতে গিয়ে উল্টো ট্যাক্স কমবে বলে আমাদের শংকা। 

ড্যাপ এ ফার হ্রাস, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি সহ নানাবিধ কারণে ব্যবসা সংকটে রয়েছে, এ অবস্থায় স্বস্তির কোনো উদ্যোগ নেই বাজেটে। উল্টো জমি-ফ্ল্যাট নিবন্ধন ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে।  

প্রস্তাবিত বাজেটে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি সিমেন্ট, পাথর, টাইলস, লিফট, সিরামিক, গ্লাস, সুইচ-সকেট, ক্যাবল, কিচেনওয়্যারসহ কম পক্ষে ১২-১৩টি পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যে সকল পণ্যের দাম বাড়বে তার ক্রেতা হচ্ছি আমরা যারা ফ্ল্যাট তৈরি করি। আর সব শেষ এই পণ্যের দাম গিয়ে পড়বে ফ্ল্যাট ক্রেতার উপর। ফ্ল্যাটের দাম আরেক দফা বাড়বে। সব মিলিয়ে সামনের দিনগুলোতে অনেকেই ফ্ল্যাট কেনার সক্ষমতা হারাবেন এবং আবাসন ব্যবসায়ীরা ক্রেতা হারাবেন। নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা আরও কঠিন হয়ে যাবে।  মৌলিক চাহিদার অন্যতম আবাসন অনেকেই সঠিকভাবে পাবেন না। এমনিতেই ফ্ল্যাট তৈরি কমে গেছে ফলে আগামীতে ফ্ল্যাটের সংকট তৈরি হবে।যার প্রভাব পড়বে বাড়ি ভাড়ায়। বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পাবে। ফলে ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে স্বল্প আয়ের কর্মজীবদের কষ্ট আরো বাড়বে। 

রিহ্যাব জাতীয় বাজেট উপলক্ষে আবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন সংস্থায় যোগাযোগ করেছে কয়েক বছর ধরে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে তার কোনটার প্রতিফলন হয়নি।  

নীতি সহায়তার অভাবে ক্রমে দেশের আবাসন খাত মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পতিত হয়েছে।  অতিরিক্ত কর আরোপ এর কারণে এই আবাসন খাতকে ভয়ংকর সংকটের দিকে ঠেলে দিবে। 

এই অবস্থায় আশু পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই সংকট উত্তরণ অসম্ভব। এই মুহূর্তে নতুন করে নানা পণ্যের কর বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে এর একটা বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমাদের শংকা। আবাসন খাত মানে শুধু আবাসন খাত নয়। এর সাথে ৪ শতাধিক লিংকেজ শিল্প জড়িত। আবাসন খাতে সংকট মানে এই সব উপখাতে সংকট। আবাসন খাতে ৪০ লক্ষ নাগরিকের কর্মস্থান। এই খাতের সংকট অর্থনীতিতে সংকট তৈরি করবে আমাদের শংকা। কাজেই বাজেট পাশের আগেএই দিকে অবশ্যই সুনজর দেওয়ার আহ্বান জানাই।

লেখক; কামাল মাহমুদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রথম), রিহ্যাব।

বিনিয়োগবার্তা/কেএইচকে/এসএএম//