নিজস্ব প্রতিবেদক: তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর ২০২৪-২৬ সাল মেয়াদি নেতৃত্ব নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদ ৩৫টি সদস্যপদের সবকটিতে জয়ী হয়েছে। শনিবার ঢাকা ও চট্টগ্রামে একযোগে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এবারের নির্বাচনে মোট ২ হাজার ৪৯৬ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২ হাজার ২২৬ জন, যা শতকরা হিসাবে ৮৯ দশমিক ১২। এর মধ্যে ঢাকায় ২ হাজার ৩২ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১ হাজার ৮৩৯ জন, যা ৯০ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর চট্টগ্রামে ৪৬৪ ভোটের মধ্যে ৩৮৭ জন ভোট দিয়েছেন, যা ৮৩ দশমিক ৪০ শতাংশ।
শনিবার সকাল ১০টা থেকে ভোটগ্রহণ চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। নির্বাচনে ‘ফোরাম’ ও ‘সম্মিলিত পরিষদ’ নামে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন সেহা ডিজাইন লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং বিজিএমইএর বতর্মান সিনিয়র সহসভাপতি এসএম মান্নান কচি। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আর ফোরামের নেতৃত্ব দেন সুরমা গার্মেন্টসের পরিচালক ফয়সাল সামাদ। তিনি বর্তমান কমিটির পরিচালক। এর আগে একবার সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
দ্বিবার্ষিক এ নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে মোট ৩৫টি পরিচালক পদের বিপরীতে লড়েন ৭০ প্রার্থী। এর মধ্যে ঢাকা থেকে নির্বাচিত হন ২৬ এবং চট্টগ্রাম থেকে ৯ জন। ঢাকা থেকে নির্বাচিতরা হলেন শহীদুল আজম, এসএম মান্নান (কচি), আসিফ আশরাফ, আব্দুল্লাহ হিল রাকিব, মো. ইমরানুর রহমান, আরশাদ জামাল (দীপু), মিরান আলি, শোভন ইসলাম, হারুন অর রশিদ, মোহাম্মদ সোহেল সাদাত, মো. আশিকুর রহমান (তুহিন), আনোয়ার হোসাইন (মানিক), শামস মাহমুদ, মেসবাহ উদ্দিন খান, খন্দকার রাফিকুল ইসলাম, মো. নাসির উদ্দিন, রাজিব চৌধুরী, আবরার হোসাইন সায়েম, মো. শাহাদাত হোসেন, মো. জাকির হোসাইন, নুসরাত বারি আশা, মো. মহিউদ্দিন রুবেল, শেহরিন সালাম ওইশি, মো. নুরুল ইসলাম, সাইফুদ্দিন সিদ্দিক সাগর, মো. রাসেল আলম (মিরু)। চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত ৯ জন হচ্ছেন রাকিবুল আলম চৌধুরী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ মুসা, আমজাদ হোসাইন চৌধুরী, এম আহসানুল হক, মোস্তাফা সরওয়ার রিয়াদ, মোহাম্মদ রাকিব আল নাসের, গাজি মো. শহিদ উল্লাহ, মো. আবসার হোসাইন।
সকাল পৌনে ১০টার দিকে ভোট কেন্দ্রের নিচে প্রার্থীদের দাঁড়ানো নিয়ে সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম প্যানেলের নেতাদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে ফোরামের একজন প্রার্থী সামান্য আহত হন। পরে উভয় প্যানেলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ভোট গ্রহণ চলাকালে গতকাল দুপুরে ফোরাম প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ বলেন, ‘সকালের ঘটনা নিয়ে আর কিছু বলব না। ভোট গণনা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সেখানে প্রভাব বিস্তারের শঙ্কা রয়েছে। নির্বাচনে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিজিএমইএর ইতিহাসে কখনো আমরা দেখিনি। মাছের বাজারের মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। আমার আর কিছু বলার নেই। কমিশন শক্ত অবস্থান নিলে সুষ্ঠু পরিবেশ থাকবে। আমরা চাই ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হয়ে আসুক।’
অন্যদিকে ভোটের ফল ঘোষণার পর সম্মিলিত পরিষদের নেতা এসএম মান্নান কচি বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ খুবই সুন্দর রয়েছে। পুরো প্যানেলকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করায় ভোটারদের ধন্যবাদ জানাই। আমরা আগামীতে ব্যবসায়ীদের কল্যাণে সব ধরনের উদ্যোগ নেব। জয়ী এবং পরাজিত যাই হোক না কেন, আমরা সবাই ব্যবসায়ী। আগামীতে একসঙ্গে কাজ করব। প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধুই নির্বাচনের প্রয়োজনে। ভোট শেষে আমরা সবাই আবার এক হয়ে কাজ করব। বিজিএমইএকে আগমীতে আরো উচ্চতায় নিয়ে যেতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব। শান্তিপূর্ণভাবে এ নির্বাচন আয়োজন করায় নির্বাচকদের বিশেষ ধন্যবাদ জানাই।’
ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত এ পরিচালকদের মধ্য থেকে সংগঠনের সভাপতি, প্রথম সহসভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি এবং দুজন সহসভাপতির নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা নেবে নির্বাচন কমিশন। তাদের মনোনয়ন বাছাই শেষে ১৯ মার্চ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন। নেতা নির্বাচন নিয়ে আপত্তি থাকলে আপিলের সুযোগও আছে। সেক্ষেত্রে আপিল নিষ্পত্তির পর ২৮ মার্চ চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হবে। তখন জানা যাবে কারা ২০২৪-২৬ মেয়াদের জন্য দায়িত্ব নেবেন।’
এবারের নির্বাচনে বেড়েছে তরুণ উদ্যোক্তা প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা। এদের অধিকাংশ পারিবারিক ব্যবসার উত্তরাধিকারী হিসেবে আসা তরুণ শিল্পোদ্যোক্তা। সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম মিলিয়ে মোট ২১ জন দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যবসায়ী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//