নিজস্ব প্রতিবেদক: বঙ্গোপসাগরের ২৪টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্র ডেকেছে পেট্রোবাংলা। এ দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার ৫৫টি তেল-গ্যাস কোম্পানিকে। আমন্ত্রণ জানিয়ে গত ১০ মার্চ এসব কোম্পানিকে মেইলও পাঠানো হয়েছে।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) এসব তথ্য জানিয়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
এতে জানানো হয়, এক্সনমবিল, শেভরন, কনোকোফিলিপস, গ্যাজপ্রম, ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম ও ক্রিস এনার্জির মতো কোম্পানিকে এবারের দরপত্রে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগরে করা জরিপের তথ্য সংগ্রহ করেছে বিভিন্ন কোম্পানি। এশিয়া ও আমেরিকার অনেক দেশ এ দরপত্রে অংশ নেবে বলে প্রত্যাশা করছে পেট্রোবাংলা।
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের জন্য উপযোগী করে এবারের পিএসসি (প্রডাকশন শেয়ারিং কনট্রাক্ট বা উৎপাদন বণ্টন চুক্তি) তৈরি করা হয়েছে। বেশকিছু বিষয় যুক্ত করে এটিকে আকর্ষণীয় করা হয়েছে। আগ্রহীদের জন্য চার বছরের সার্ভে করার সুযোগ থাকছে। এরপর তারা অনুসন্ধানে যেতে আবার সময় পাবে। যারা এতদিন আগ্রহ দেখিয়েছিল, তারা এগিয়ে আসবে বলে আশা করছি। সমালোচনা যারা করেন তাদের মুখে ছাই দিয়ে আমরা আর্থিক ব্যবস্থাপনার ওপর একটি ইতিবাচক জায়গা দেখাতে পেরেছি।’
পেট্রোবাংলা যেসব কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে এগুলোর মধ্যে আমেরিকার কোম্পানি রয়েছে ১১টি: শেভরন, কনোকোফিলিপস, অক্সিডেন্টাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (ওএক্সওয়াই), এক্সনমবিল, রেপসল এনার্জি নর্থ আমেরিকা করপোরেশন, মারফি এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি, তালিসমান ইউএসএ, সিনোভাস এনার্জি ইনকরপোরেশন, সানকোর এনার্জি ইনকরপোরেশন, পেট্রোলিয়োস মেক্সিকানোস (পেমেক্স) ও পেট্রোব্রাস।
ইউরোপের ১২ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে ইকুইনর (স্ট্যাটঅয়েল এএসএ), গ্যাজপ্রম ইন্টারন্যাশনাল, হারবার এনার্জি (সাবেক প্রিমিয়ার অয়েল ফার ইস্ট লিমিটেড), শেল, ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম (বিপি), রজনেফট, নোভাটেক, টোটাল এনার্জিস, ইনিস্পা, সোনাট্রাক পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, তাল্লো অয়েল পিএলসি ও কেয়ার্ন এনার্জি পিএলসি।
এশিয়ার ২৭ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে পেট্রোনাস, সৌদি আরামকো, কুয়েত অয়েল কোম্পানি (কেওসি), পিটিটি এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড, পেট্রোভিয়েতনাম, পারটামিনা, অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড, মিতসুই অয়েল এক্সপ্লোরেশন কোম্পানি লিমিটেড, ক্রিস এনার্জি লিমিটেড, ওএনজিসি ভিদেশ লিমিটেড, বাহরাইন পেট্রোলিয়াম কোম্পানি (বিএপিসিও), দাইয়ু ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন, কোরিয়া ন্যাশনাল অয়েল করপোরেশন (কেএনওসি), চায়না ন্যাশনাল অফশোর অয়েল কোম্পানি, সিএনপিসি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, সিনোপ্যাক, ইদেমিতসু অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, পার্ল এনার্জি লিমিটেড, মেডকো এনার্জি গ্লোবাল প্রাইভেট লিমিটেড, প্যাভিলিয়ন এনার্জি প্রাইভেট লিমিটেড, পসকো ইন্টারন্যাশনাল, জেএক্স নিপ্পন অয়েল অ্যান্ড গ্যাস এক্সপ্লোরেশন করপোরেশন, আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি, কাতার পেট্রোলিয়াম (কিউপি), রিলায়েন্স এনার্জি, ইনপেক্স করপোরেশন ও মুবাডালা এনার্জি।
অস্ট্রেলিয়ার পাঁচ কোম্পানি হলো কার্নারভন এনার্জি লিমিটেড, সান্তোস লিমিটেড, উডসাইড পেট্রোলিয়াম, ক্যালটেক্স অস্ট্রেলিয়া লিমিটেড ও বিএইচপি বিলিটন লিমিটেড।
সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘২০১৬ সালে সমুদ্রে বহুমাত্রিক জরিপের উদ্যোগ শুরু হয়। এটি শেষ হয়েছে। মাঝখানে পিএসসি তৈরি করতে তিন বছর ও করোনায় দুই বছর চলে গেছে। তাই দরপত্র আহ্বানে দেরি হয়েছে। এশিয়া ও আমেরিকার অনেক দেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। এবারের দরপত্রে ভালো সাড়া পাওয়া যাবে।’
দরপত্র ডাকা ২৪টি ব্লকের মধ্যে গভীর সমুদ্রে পড়েছে ১৫টি, অগভীর সমুদ্রে নয়টি। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ‘এবারের দরপত্রে কোনো কোম্পানি এক বা একাধিক ব্লকে অংশ নিতে পারবে। নতুন পিএসসিতে বিনিয়োগের খরচ বছরে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত তুলে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। ঠিকাদার কোম্পানি দ্রুত বিনিয়োগ তুলে নিতে পারলে পেট্রোবাংলার লভ্যাংশ বাড়বে। গ্যাসের দাম একই না রেখে ব্রেন্ট ক্রুড (অপরিশোধিত) অয়েলের ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।’
গত ১০ মার্চ নিজেদের ওয়েবসাইটের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন ছেপে দরপত্র ডাকে পেট্রোবাংলা। এতে বলা হয়, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১টার মধ্যে আগ্রহী তেল-গ্যাস কোম্পানিকে দরপত্র জমা দিতে হবে। দরপত্রে অংশ নিতে হলে নিজ দেশের বাইরে অন্তত একটি কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। দিনে অন্তত ১৫ হাজার ব্যারেল তেল বা ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের অভিজ্ঞতাও লাগবে। অগভীর সমুদ্রে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানির (বাপেক্স) ১০ শতাংশ মালিকানা সংরক্ষিত থাকবে। অনুসন্ধানকাজের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনতে কোনো আমদানি শুল্ক দিতে হবে না। করপোরেট আয়কর পরিশোধ করবে পেট্রোবাংলা।
দরপত্র আহ্বানে বিলম্বিত হওয়ার কারণ জানিয়ে গতকাল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০১৯ সালে অফশোর ও অনশোরের জন্য আলাদাভাবে পিএসসি হালনাগাদ করা হলেও করোনা মহামারীর জন্য দরপত্র আহ্বান করা যায়নি। মহামারীর কারণে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে তেলের বাজারেও বেশ অস্থিরতা দেখা যায়। ফলে অনুসন্ধান কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। সে পরিপ্রেক্ষিতে অফশোর মডেল পিএসসিকে আরো যুগোপযোগী ও প্রতিযোগিতামূলক করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। পরবর্তী সময়ে পরামর্শকের মতামত এবং পেট্রোবাংলার নিজস্ব পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ অফশোর মডেল পিএসসি প্রণয়ন করা হয়। এটি ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন পায়।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//