নিজস্ব প্রতিবেদক: দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে চার বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও রাইট শেয়ারের অর্থ ব্যবহার করতে পারেনি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
রাইট শেয়ারের অর্থ ব্যবহার করতে না পারার কারণ অনুসন্ধানে সম্প্রতি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোল্লা মোঃ মিরাজ উস সুন্নাহ’র নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-সংস্থাটির উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আসিফ ইকবাল ও সহকারী পরিচালক মোঃ মেহেদী হাসান রনি।
তদন্ত কমিটি কোম্পানিটির রাইট শেয়ারের অর্থ ব্যবহারের সম্পুর্ন প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম তদন্ত করবে। শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির তালিকাভুক্তির পর আনুষঙ্গিক কার্যক্রমও পর্যালোচনা করবে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটিকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে কোম্পানির পর্যালোচনা করে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
২০১৯ সালে গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ১০ টাকা ফেস ভ্যালুর ৮ কোটি ৯৯ লাখ ৩২ হাজার ৩৪২টি শেয়ার বাজারে ছেড়ে শেয়ারবাজার থেকে ৮৯ কোটি ৯৩ লাখ ২৩ হাজার ৪২০ টাকা সংগ্রহ করেছিল। কোম্পানিটি বিদ্যমান চারটি শেয়ারের বিপরীতে তিনটি রাইট শেয়ার ইস্যু করেছিল।
চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানিটি রাইট অর্থের ৭০ কোটি টাকা ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। বাকি টাকা এখনও ব্যবহার করতে পারেনি।
কোম্পানিটি ইতোমধ্যে আবারও তহবিল ব্যবহার করার জন্য সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে বিএসইসি’র কাছে আবেদন করেছে। কিন্তু বিএসইসি আবেদনে সিদ্ধান্ত মুলতুবি করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
গোল্ডেন হারভেস্টের একজন কর্মকর্তা জানান, বিলম্বের পিছনে মূল কারণ ছিল মহামারি কোভিড । এছাড়াও, ডলার সংকট এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে কোম্পানিটি যন্ত্রপাতি অধিগ্রহণের জন্য ক্রেডিট লেটার (এলসি) খুলতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে।
তিনি জানান, কোম্পানিটি এখন যন্ত্রপাতির জন্য এলসি খোলার জন্য বাকি পরিমাণ ব্যবহার করার জন্য আরও সময় চেয়েছে।
বিএসইসি সূত্র বলছে, কোম্পানিটি ব্রেইনট্রেন স্টুডিও লিমিটেড থেকে তহবিল ব্যবহার করেছে, যেটি গোল্ডেন হারভেস্টের নিজস্ব কোম্পানি। কমিশন দেখতে পেয়েছে যে একই ব্যক্তি গোল্ডেন হার্ভেস্ট এবং ব্রেইনট্রেন স্টুডিও উভয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে নিয়োজিত রয়েছেন।
এছাড়া, কোম্পানিটি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই আইপিও অর্থ লেনদেন করেছে।
ব্যবসার উত্থান-পতন
শেয়ারমার্কেট তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে ২০১১ সালে কোম্পানিটির ব্যবসা খুব ভালো ছিল। ২০১১ সালে কোম্পানিটি রাজস্ব ছিল ৫২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং কর পরবর্তী নিট মুনাফা ছিল ১৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ওই বছর ছিল গোল্ডেন হার্ভেস্টের ব্যবসার জন্য সেরা বছর।
তারপরে ২০১৮ সালে কোম্পানিটি তার ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য রাইট শেয়ার ইস্যু করার জন্য আবেদন করে এবং ২০১৯ সালের অক্টোবরে বিএসইসির অনুমোদন লাভ। ব্যবসা সম্প্রসারণ ও মুনাফা বাড়ানোর জন্য রাইট শেয়ারের অর্থ সংগ্রহ করা হলেও রাইট শেয়ার ইস্যুর পর এর রাজস্ব ও মুনাফা হ্রাস পায়।
২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে কোম্পানিটির রাজস্ব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ফলে ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোম্পানি থেকে তাদের প্রত্যাশিত মুনাফা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন।
তালিকাভুক্তির আগের বছর ২০১২ সালে কোম্পানিটি যেখানে ২০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল, ২০২৩ সালে ডিভিডেন্ড নেমে এসেছে ১ শতাংশে।
চলতি বছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে বা ৬ মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১৩ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ০৪ পয়সা।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//