Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Friday, 29 Mar 2024 06:00
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়

ড: মিহির কুমার রায়: ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে (এনবিএফআই) আমানতকারীর সংখ্যা এক বছরের ব্যবধানে কমে গেছে টাকা ফেরত দিতে না পারায় আস্থাহীনতার কারণে। তবে এই সময়ে আমানত কিছুটা বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে লিজ ও ঋণ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সাল শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ৪৩ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অন্যদিকে গত বছর শেষে আমানত হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ২২১। তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালে আমানত হিসাবের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ২১ হাজার ৫৫৬। সে হিসাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত হিসাব কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঋণের স্থিতি ছিল ৭৩ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। আগের বছরের চেয়ে যা ৩ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালে এসব প্রতিষ্ঠানে ঋণের স্থিতি ছিল ৭০ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ঋণের সুবিধাভোগী হিসাবের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ১৯ হাজার ৭০৫। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে স্থায়ী আমানতের পরিমাণ ২০২২ সালের চেয়ে টাকার অঙ্কে বাড়লেও মোট আমানতের আনুপাতিক হারে কমেছে। গত ডিসেম্বর শেষে স্থায়ী আমানতের পরিমাণ ছিল ৪৩ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা, যা  মোট আমানতের ৯৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ২০২২ সাল শেষে তা ৯৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ ছিল। মোট আমানতের মধ্যে ৪১ হাজার ৪৪৩  কোটি টাকা বা ৯২ দশমিক ৪৫ শতাংশই ঢাকা বিভাগের। আর সর্বনিম্ন ৫৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকার আমানত রয়েছে বরিশাল বিভাগের, যা মোট আমানতের শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ। আমানতের মতো ঋণের সিংহভাগও ঢাকা বিভাগে। গত ডিসেম্বর শেষে মোট ঋণের মধ্যে ৬১ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা বা ৮৩ দশমিক ৩১ শতাংশ ঢাকা বিভাগেই দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে কম ঋণ স্থিতিও বরিশাল বিভাগে, ৩৭১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। 

বর্তমানে সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৩৫টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ৩০৮টি শাখা রয়েছে, যার ২৮৬টি শহর এলাকায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে এ খাতে গড় সুদ হার ছিল ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এর মধ্যে ঋণের ক্ষেত্রে  গড় সুদ হার ছিল ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ভোক্তা ঋণে সর্বোচ্চ সুদ হার ছিল ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। বছর তিনেকেরও বেশি সময় ধরে ব্যাংকগুলো নয় শতাংশ সুদে ঋণ দিয়েছে এবং আমানত নিয়েছে ছয় শতাংশ সুদে। ব্যাংকিং খাতে সেই ‘নয়-ছয়’ এখন অতীত। সুদ হারের সীমা তুলে দেওয়ার পেছনে মূল্যস্ফীতির উচ্চ হারের রাশ টেনে ধরাকে প্রধান কারণ মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু সেই ঋণের সুদ হার ৯ থেকে চলতি মাসে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়েছে। ঋণের সঙ্গে অবশ্য আমানতেরও সুদ হার বেড়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে কোনো কোনো দুর্বল ব্যাংক আমানতে সর্বোচ্চ ১৩-১৪ শতাংশ পর্যন্ত সুদ অফার করছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুদের হারও ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমানে ১৫ শতাংশের ঘরে অবস্থান করছে আর্থিক ঋণের সুদ হার। দুর্বল নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানত পেতে সর্বোচ্চ ১৭-১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ প্রস্তাব করছে। ঋণ-আমানতের এই সুদহারকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাষায় বলা হচ্ছে ‘স্মার্ট সুদহার করিডর’। প্রতি ছয় মাসের ট্রেজারি বিল ও বন্ডের গড় সুদহার বের করে হিসাব করা হয় ‘স্মার্ট’ রেট। প্রতি মাসের শেষে বা প্রথম দিনে স্মার্ট সুদহার কতো হবে তা জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত সুদহার নীতিকে এ যাবৎ কালের সবচেয়ে ‘আনস্মার্ট’ সুদ হার নীতি হিসেবে মনে করেছেন ব্যবসায়ীরা। এই সুদহারের কারণে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা প্রকৃত ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়বেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। জানা গেছে, মুদ্রা নীতির আধুনিকায়ন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা চালু করতে আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়নে গত বছরের জুলাই মাস থেকে ‘স্মার্ট সুদহার করিডর’ চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের বাজার সুদকে ভিত্তি ধরে ‘রেফারেন্স রেট’ অর্থাৎ সুদ গণনা করা হয়। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘এসএমএআরটি’ (স্মার্ট সিক্স মান্থ মুভিং অ্যাভারেজ)।

এখন আসা যাক ব্যাকিং খাতে আমানত ঋণ বিতরণের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা যা প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায় সারা  দেশে ব্যাংকগুলোর মোট শাখা রয়েছে ১০ হাজার ৭৯৩টি। এর মধ্যে শহরে শাখা ৫ হাজার ৫৫৪টি এবং গ্রামীণ শাখা ৫ হাজার ২৩৯টি। মোট শাখার সাড়ে ৫১ শতাংশ শহরে এবং গ্রামে সাড়ে ৪৮ শতাংশ। প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, মোট আমানত ও ঋণের সিংহভাগই ঢাকা বিভাগে। এর পরেই রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের অবস্থান। মোট আমানতের ৭৯ শতাংশই শহরের, গ্রামের আমানত ২১ শতাংশ। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৬২, চট্টগ্রাম বিভাগে ২১, খুলনা বিভাগে ৪ দশমিক ২২, রাজশাহী বিভাগে ৪, বরিশাল বিভাগে ১ দশমিক ৮৭, সিলেট বিভাগে  ৩ দশমিক ৭৬ এবং রংপুর বিভাগে ২ শতাংশ আমানত রয়েছে। সবচেয়ে কম আমানত ময়মনসিংহ বিভাগে মাত্র দেড় শতাংশ। মোট ঋণের  ৮৯ শতাংশই শহর এলাকায় বিতরণ করা হয়, গ্রামে মাত্র ১১ শতাংশ। ঋণের ৬৮ শতাংশই ঢাকা বিভাগে, চট্টগ্রামে সাড়ে ১৮, খুলনায় ৩.৮১, রাজশাহীতে ৩.৭১, সিলেটে ১.১৪, রংপুরে ২.৩৮ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১.৩৬ শতাংশ। সবচেয়ে কম ঋণ বিতরণ করা হয় বরিশাল বিভাগে ১.১২ শতাংশ। এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদদের মন্তব্য হলো এটি আশার কথা যে গ্রামে ঋণ প্রবাহ বেশি বাড়ছে ও এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে গ্রামকে অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা সম্ভব হবে। বর্তমানে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয় শহর  থেকে যে কারণে শহরে ঋণ ও আমানত দুটোই বেশি। কিন্তু কৃষি বা শিল্প উৎপাদন সবই গ্রামকেন্দ্রিক, কেননা শিল্পের বেশিরভাগ কারখানাই গ্রামে তথা কৃষি উৎপাদন তো পুরোটাই গ্রামভিত্তিক।’ আগে গ্রামে আমানত বেড়েছে; কিন্তু ঋণ বাড়েনি।  ফলে গ্রামের টাকা শহরে চলে এসেছে। এখন গ্রামে আমানত বাড়ার পাশাপাশি ঋণও বাড়তে শুরু করায় গ্রামে টাকার প্রবাহ বাড়বে, যা গ্রামীণ  অর্থনীতিকে চাঙা করতে সহায়ক হবে। করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় গ্রামে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাড়নো যাচ্ছিল না। কারণ গ্রামে ঋণের চাহিদা কম। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সামগ্রীর দাম বেড়ে যায়, খাদ্য  আমদানি করতে গিয়ে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পড়ে। তাই বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য কৃষিভিত্তিক পণ্য উৎপাদনে কম সুদে ঋণ দিতে ২৫ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। তৈলবীজ উৎপাদনে গঠন করা হয়েছে আরও ৫ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল। এছাড়া চলতি অর্থবছরে ৩৫ হাজার কোটি টাকার পল্লি ও কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আরও কিছু তহবিলের আওতায় গ্রামে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো হচ্ছে। এবার চাহিদা বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে মোট  লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ১২ হাজার ৩০ কোটি টাকা এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো  ২১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা, বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ১ হাজার ৪৭ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। টেকসই উন্নয়নের নির্ধারিত লক্ষ্যের প্রথম ও প্রধান তিনটি লক্ষ্য তথা দারিদ্র বিমোচন, ক্ষুধা মুক্তি এবং সুস্বাস্থ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে কৃষি ঋণ সরবরাহের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ ঋণ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরে ৩৩ লাখ ৪ হাজার ৮১১ জন কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও এমএফআই লিংকেজের মাধ্যমে ৩৬ লাখ ১৮ হাজার ৫৪৫ জন ঋণ পেয়েছেন। ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৯৩৩ জন নারী ১২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন। এক্ষেত্রে ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার  ন্যূনতম ৫০ শতাংশ হতে হবে। আগে তা ছিল ৩০ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও  কর্মসূচিতে নতুন করে কয়েকটি বিষয় যুক্ত করা হয়। এর মধ্যে-নতুন কৃষকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ বিতরণ করতে হবে। পল্লী অঞ্চলে আয়-উৎসারী কর্মকান্ডে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা হবে ৫ লাখ টাকা। ছাদ কৃষিতে অর্থায়ন করতে পারবে ব্যাংক। অর্থাৎ বাড়ির ছাদে  বাগান করতে ঋণ পাবেন গ্রাহক। এছাড়া চিংড়ি, কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষে ঋণ বিতরণ করতে পারবে। মৎস্য খাতে লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ১৩  শতাংশ এবং প্রাণিসম্পদ খাতে লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ১৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে হবে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে  দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি বিবেচনা করে ব্যাংকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ করতে হবে।  বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর লক্ষ্যমাত্রার বাইরে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেড এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড তাদের নিজস্ব অর্থায়নে যথাক্রমে  ২৬ কোটি টাকা ও এক হাজার ৪২৩ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের  জন্য ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব নেটওয়ার্ক (শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং, দলবদ্ধ ঋণ বিতরণ এবং ব্যাংক-এমএফআই লিংকেজ)  ব্যবহার করতে পারবে। এবারে প্রথমবারের মতো বেশ কিছু কৃষিপণ্যের জন্য ঋণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এগুলোর মধ্যে  রয়েছে ছাদ কৃষি, ভেনামি চিংড়ি, কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষ। শস্য ও ফল চাষের আওতায় কালো ধান, এ্যাভোকাডো ফল ও পাতি ঘাসের জন্যও  ঋণ দেওয়া যাবে। নারীসহ চরাঞ্চল, হাওড় ও অনগ্রসর প্রত্যন্ত এলাকায় কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণে দেওয়া হবে অগ্রাধিকার। 

ব্যাংকিং খাত অনেকটা আস্থার সঙ্কটে রয়েছে এবং এই খাতে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে মন্দ ঋণের অঙ্ক। ২০২২ সালে এ ঋণ ছিল ১ লাখ ৬  হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে তা ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মন্দ ঋণ বাড়ল  ১৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। একই প্রতিবেদনের অপর সূচকে দেখা যায়,  গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সাতটি ব্যাংক কাঙ্ক্ষিত নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এসব ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা, যা ২০২২ সালের একই সময়ে আট ব্যাংকের ঘাটতি ছিল ১৯ হাজার ৪৮  কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৫ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩  সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা বা বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন দেশে খেলাপি ঋণ ছিল ২২  হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এখন তা প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ১৫ বছরে খেলাপি ঋণ প্রায় সাড়ে ছয় গুণ বেড়েছে। এই  সকল কারনে জনগন এখন ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে ভরসা পায়না। তাই এই সকল সঙ্কটের সমাধান জরুরী বলে প্রতিয়মান হয়।

লেখক: অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও সাবেক জ্যৈষ্ঠ সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবীদ সমিতি।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//