ডেস্ক রিপোর্ট: শুরুতে গোল হজমের ধাক্কা সামলে আক্রমণের ঝড় বইয়ে দিল ম্যানচেস্টার সিটি। দ্বিতীয়ার্ধে অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর কাঙ্ক্ষিত গোলে সমতা ফিরিয়ে ম্যাচ টেনে নিল তারা অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে কেউ পেল না জালের দেখা। ম্যাচে বেশিরভাগ সময় কোণঠাসা হয়ে থাকা রিয়াল মাদ্রিদ বাজিমাত করল টাইব্রেকারে। শিরোপাধারীদের বিদায় করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে উঠল কার্লো আনচেলত্তির দল।
ইতিহাদ স্টেডিয়ামে বুধবার রাতে কোয়ার্টার-ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ১-১ সমতার পর পেনাল্টি শুটআউটে ৪-৩ ব্যবধানে জেতে রিয়াল। সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে প্রথম লেগে ৩-৩ গোলে ড্র হয়েছিল।
রদ্রিগো রিয়ালকে এগিয়ে নেওয়ার পর সমতা টানেন কেভিন ডে ব্রুইনে। টাইব্রেকারে দুটি শট ঠেকিয়ে ব্যবধান গড়ে দেন আন্দ্রি লুনিন। ম্যাচেও বেশ কয়েকটি দারুণ সেভ করেন তিনি।
টাইব্রেকারে সিটির হয়ে জালের দেখা পান হুলিয়ান আলভারেস, ফিল ফোডেন ও গোলরক্ষক এদেরসন। বের্নার্দো সিলভা দুর্বল শট করেন গোলরক্ষক বরাবর। মাতেও কোভাচিচের শটও ঠেকিয়ে দেন লুনিন।
রিয়ালের লুকা মদ্রিচের নেওয়া প্রথম শট এদেরসন ঠেকিয়ে দিলেও বাকি চার শটে গোল করেন জুড বেলিংহ্যাম, লুকাস ভাসকেস, নাচো ফের্নান্দেস ও আন্টোনিও রুডিগার। এই জার্মান ডিফেন্ডার বল জালে পাঠাতেই উৎসবে মেতে ওঠে সফরকারীরা।
গত আসরে এই মাঠেই সেমি-ফাইনালের ফিরতি লেগে রিয়ালকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে ফাইনালে ওঠার পর প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল সিটি। পেপ গুয়ার্দিওলার দলের শিরোপা ধরে রাখার অভিযান থমকে গেল শেষ আটেই। শেষ হয়ে গেল তাদের ট্রেবল জয়ের আশাও।
ম্যাচজুড়ে আক্রমণে ছড়ি ঘোরায় অবশ্য সিটিই। ৬৭ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য ৩৩টি শট নিয়ে ৯টি লক্ষ্যে রাখে তারা। সেখানে রিয়ালের ৮ শটের ৩টি লক্ষ্যে ছিল। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, রদ্রিগোর গোলের পর লক্ষ্যে আর শটই নিতে পারেনি তারা!
শেষ হাসি যদিও থাকল তাদের মুখেই। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে খেলবে প্রতিযোগিতাটির রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নরা।
এদিনই আরেক ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালকে হারিয়ে শেষ চারের টিকেট নিশ্চিত করে ছয়বারের শিরোপাজয়ী বায়ার্ন।
চমৎকার এক আক্রমণে দ্বাদশ মিনিটে এগিয়ে যায় রিয়াল। নিজেদের অর্ধ থেকে দানি কারভাহালের উঁচু করে বাড়ানো বল দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বেলিংহ্যাম দেন ফেদে ভালভের্দেকে। উরুগুয়ের এই উইঙ্গারের পাস বক্সে পেয়ে ভিনিসিউস জুনিয়র বল দেন অন্য পাশে থাকা রদ্রিগোকে। তার প্রথম শট এদেরসন ফিরিয়ে দিলেও ফিরতি শটে ঠিকানা খুঁজে নেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার।
১৯তম মিনিটে সমতায় ফিরতে পারত সিটি। বক্সের ভেতর থেকে আর্লিং হলান্ডের হেড ক্রসবারে লাগে। ফিরতি বল কাছ থেকে লক্ষ্যে রাখতে পারেননি বের্নার্দো সিলভা।
২৭তম মিনিটে দারুণ সেভে ব্যবধান ধরে রাখেন লুনিন। বক্সের বাইরে থেকে ডে ব্রুইনের জোরাল শট ঝাঁপিয়ে ব্যর্থ করে দেন ইউক্রেইনের এই গোলরক্ষক।
প্রথমার্ধের বাকি সময়ে আরও বেশ কয়েক দফায় রিয়ালের রক্ষণে ভীতি ছড়ায় সিটি। তবে কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা তারা পায়নি। যোগ করা সময়ে বক্সের বাইরে থেকে ফোডেনের শট ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে উড়ে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে জ্যাক গ্রিলিশের জোরাল ভলি ফিরিয়ে দেন লুনিন। ৫১তম মিনিটে আত্মঘাতী গোল করতে বসেছিলেন নাচো, শেষ মুহূর্তে বল ক্লিয়ার করে দলকে বাঁচান রিয়াল ডিফেন্ডার।
৭০তম মিনিটে গ্রিলিশের আরেকটি শট ঠেকিয়ে দেন লুনিন। ৭৬তম মিনিটে সমতায় ফেরে স্বাগতিকরা। বাঁ দিকের বাইলাইনের কাছাকাছি থেকে জেরেমি ডোকুর নিচু শট ক্লিয়ার করতে পারেননি রুডিগার। কাছ থেকে চমৎকার শটে বল জালে পাঠান ডে ব্রুইনে।
দুই মিনিট পর বক্সের বাইরে থেকে ডে ব্রুইনের শটে বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে পাঠান লুনিন। ৮১তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ হারান বেলজিয়ান মিডফিল্ডার। বক্সে ভালো পজিশনে বল পেয়ে উড়িয়ে মারেন তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে কর্নার পায় সিটি। মানুয়েল আকনজির ওই কর্নারে হলান্ডের প্রচেষ্টা ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়।
অতিরিক্ত সময়েও যথারীতি আক্রমণে আধিপত্য ধরে রাখে সিটি। প্রথমার্ধে গোলরক্ষককে তেমন পরীক্ষায় অবশ্য ফেলতে পারেনি তারা। এই অর্ধের যোগ করা সময়ে সুযোগ আসে রুডিগারের সামনে, তবে কাছ থেকে রিয়াল ডিফেন্ডারের প্রচেষ্টা লক্ষ্যে থাকেনি।
দ্বিতীয়ার্ধেও তেমন কিছু করে দেখাতে পারেনি কোনো দল। এরপর টাইব্রেকারে জিতে রিয়ালের উল্লাস।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//