ডেস্ক রিপোর্ট: দেশে বর্তমানে ৪-৫ লাখ বিদেশি অবৈধভাবে অবস্থান করছে। আইনের ফাঁকফোকর গলে টাকা রোজগার করছে তারা, কিন্তু কর দিচ্ছে না। সম্প্রতি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং নতুন করে যেন কোনো বিদেশি অবৈধভাবে অবস্থান করতে না পারে, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভিসানীতি কঠোর করার পরিকল্পনা করছে সরকার।
সম্প্রতি বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) অফিসে এ-সংক্রান্ত একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, দেশে ৪-৫ লাখ অবৈধ বিদেশি আছেন। যদিও অবৈধ বিদেশি খেদাও আন্দোলন বলছে, বর্তমানে ১০ লাখ বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ জানায়, অবৈধ বিদেশিদের রাখার মতো কোনো ডিটেনশন সেন্টার বা আটক কেন্দ্র নেই। তাদের কারাগারে রাখতে হলে মামলা করতে হয়। সেটা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, বিডা, বেপজা, বেজা, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও এনজিও বিষয়ক ব্যুরো কাজ শুরু করেছে। অবৈধ নাগরিকদের দৈনিক ভিত্তিতে জরিমানা আরোপের পাশাপাশি তাদের যারা চাকরি দেবেন বা বাসা ভাড়া দেবেন তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন জানান, সম্প্রতি বিডায় মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্র সচিবও সেখানে অংশ নেন। সভায় অন্যান্য দেশের অবৈধ নাগরিকদের ভিসা এক্সপায়ার, এক ভিসায় এসে অন্য ক্যাটাগরিতে অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিডার বৈঠকের পর এ-সংক্রান্ত অগ্রগতি প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, অবৈধ বিদেশিদের ব্যাপারে বিডার বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্ত এসেছে। সেগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। ভিসা পলিসি নিয়েও কাজ করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ১৬৯টি দেশের নাগরিক বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডার মতো দেশের নাগরিকরাও আছেন। এছাড়া প্রতিবেশী ভারত, চীন, মায়ানমার ও থাইল্যান্ডের নাগরিকরাও অবৈধভাবে বসবাস করছেন।
অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট’ (রামরু)-এর নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার বলেন, অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নিতে হবে। বৈধভাবে অবস্থানকারীরা সঠিক ভিসায় অবস্থান করছেন কি না, সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে।
অবৈধ বিদেশির সংখ্যা কত?
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলছেন, দেশে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশির সংখ্যা চার-পাঁচ লাখ। আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ৩৪ হাজার অবৈধ বিদেশি নাগরিক দেশে অবস্থান করছে। অন্যদিকে অবৈধ বিদেশি খেদাও আন্দোলনের দাবি, এই সংখ্যা ১০ লাখ।
এ প্রসঙ্গে অবৈধ বিদেশি খেদাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে ১০ লাখের বেশি বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তারা বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছেন। ফলে দেশের মানুষ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কাজ পাচ্ছেন না।
ব্যারিস্টার সারোয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, একদিকে এ দেশের নাগরিকরা কর্মসংস্থান খুঁজতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে ভূমধ্যসাগরে মৃত্যুবরণ করছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশে কর্মরত অবৈধ বিদেশিরা ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর ১০ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এ দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি বিজিএমইএ, বিটিএমইএ, এমসিসিআই, ডিসিসিআই এবং এফবিসিসিআইকে তাদের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত অবৈধ বিদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে অবৈধ বিদেশি খেদাও আন্দোলন। পাশাপাশি চিঠিটির অনুলিপি একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব, ডিজিএফআই মহাপরিচালক, এনএসআই মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক, পুলিশের বিশেষ শাখা এবং বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে অবগতির জন্য পাঠানো হয়েছে।
ব্যারিস্টার সারোয়ার জানান, এরই মধ্যে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয়, শ্রীলংকা হাইকমিশনসহ বিভিন্ন হাইকমিশন ও দূতাবাসে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, আমাদের অবস্থান বিশেষ কোনো ব্যক্তি বা দেশের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের অবস্থান হলো বিদেশিরা আইনানুগভাবে এ দেশে অবস্থান করুক এবং কাজ করুক।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//