ডেস্ক রিপোর্ট: ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর ধারণা করা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে ঐক্যের কারণে তারা বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় জোটবদ্ধভাবে কাজ করবে।
নির্বাচনের পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের আচরণ এবং গতিবিধিও প্রায় সেই রকম ছিল। তিনি স্বাভাবিকভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা দিয়েছেন।
কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, নতুন সরকারের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। আগের মতোই নানা বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে, সরকারকে চাপে রাখার চেষ্টা করছে।
বিষয়টি সরকারকেও ভাবিয়ে তুলেছে। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও যুক্তরাষ্ট্রের খোলামেলা সমালোচনা শুরু করেছেন। মন্ত্রীদের কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নীতি ও বিষয়ের সমালোচনাও করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক দুটি ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণতন্ত্রের সংকট ইত্যাদি নিয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছেন।
সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের ওপর নতুন করে চাপ প্রয়োগ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আর সে কারণে সরকার আবারও যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
মূলত পাঁচটি বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উপর নজর রাখছে বলে কূটনৈতিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে-
১. ড. ইউনূস: ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হচ্ছে, সেই মামলাগুলো দুর্নীতি দমন কমিশনের। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলাগুলোর কয়েকটির চার্জশীটও হয়েছে। বিষয়গুলো কড়া নজরে রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিক কোন বক্তৃতা-বিবৃতি না দিলেও এই ড. ইউনূস ইস্যুর পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সে ব্যাপারে মার্কিন দূতাবাস এবং ওয়াশিংটন সার্বক্ষণিকভাবে খবর রাখছে।
২. শ্রম আইন: শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রকাশ্য এবং তারা বারবার শ্রম আইন নিয়ে কথা বলছে। সংশোধিত শ্রম আইনের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও করেছেন। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার বিষয় বলেই মনে করা হচ্ছে। যে কারণে প্রায় প্রতি মাসেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নানা সংস্থার প্রতিনিধিদের আগমণ দেখা যায়।
৩. নির্বাচন: ভবিষ্যতে নির্বাচনগুলো কতটা অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে এবং এসব নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের মতামত পাওয়া যায় কিনা সেটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি অগ্রাধিকার এজেন্ডা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিষ্কারভাবেই বলছে যে, কোন দেশের গণতন্ত্রের কি অবস্থা সেটি নজর রাখা তাদের কুটনৈতিক দায়িত্ব।
৪. মানবাধিকার: মানবাধিকার ইস্যুতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর নজর রাখছে। বিশেষ করে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কীভাবে মানবাধিকার সুরক্ষার কাজে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছে এবং সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির গতি-প্রকৃতি সম্পর্কেও তারা লক্ষ্য রাখছে।
৫. বেগম জিয়া: বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়ার বিদেশ ভ্রমণ, তার কারাজীবন এবং তার চিকিৎসার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নজরদারি করছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে সাম্প্রতিক মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে বেগম জিয়াকে গৃহবন্দী দাবি করা হয়েছে। তার প্রতিবাদ করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, বেগম খালেদা জিয়া গৃহবন্দী নন, তিনি জামিনে আছেন। তবে বেগম জিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র নজর রাখছে।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//