ডেস্ক রিপোর্ট: আন্তর্জাতিক ক্রীড়ায় আজ ‘সুপার সানডে’। আমেরিকা ও ইউরোপের ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণের ম্যাচ আজ। সেই সঙ্গে টেনিসের মর্যাদাপূর্ণ গ্র্যান্ড স্লাম আসর উইম্বলডনে ছেলেদের এককের ফাইনালও আজ। জার্মানির বার্লিন অলিম্পিক স্টেডিয়ামে রাত ১টায় ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে লড়বে স্পেন ও ইংল্যান্ড। যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে হার্ড রক স্টেডিয়ামে কোপা আমেরিকা ফাইনালে লড়বে আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া। মিয়ামির স্থানীয় সময় রোববার রাত ৮টায় ম্যাচটি শুরু হবে। তবে বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী শুরু হবে সোমবার ভোর ৬টায়।
স্পেন তিনবারের ইউরোপিয়ান ও একবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ১৯৬৮ সালে ইউরোপ জয়ের পর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ২০০৮ সালে জাভি হার্নান্দেজ, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, ইকার ক্যাসিয়াসদের সোনালি প্রজন্মের হাত ধরে আবারো ইউরোপসেরার মুকুট যায় স্পেনে। ‘তিকিতাকা’ ফুটবলের জাদুতে ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ও ২০১২ সালে আবারো ইউরোপ জয় করে ‘লা রোজা’রা। আজও ইউরোর ফাইনালে ফেভারিট হিসেবে নামছে লুইস ডে লা ফুয়েন্তের দল। যদিও প্রতি ম্যাচে শেষ মুহূর্তে কামব্যাক করে চমক জাগানো ইংলিশরা ছেড়ে কথা বলবে না মোটেও।
বিপরীতে ইংলিশ ফুটবলে দীর্ঘ হতাশা। ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর আর কখনই বড় কোনো শিরোপার স্বাদ পায়নি তারা। ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠলেও ওয়েম্বলিতে ইতালির কাছে টাইব্রেকারে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় হ্যারি কেনদের। ৫৮ বছরের যন্ত্রণার অবসান ঘটানোর আরেকটি সুযোগ এসেছে ‘থ্রি লায়ন্স’দের সামনে। সেই স্বপ্নপূরণে আজ বার্লিনে ৯০ মিনিটের যুদ্ধে জিততে হবে ইউরোপের অন্যতম সেরা দল স্পেনের বিপক্ষে।
ইংল্যান্ডকে আশা দেখাচ্ছেন গ্যারেথ সাউথগেট। ৫৩ বছর বয়সী কোচ দায়িত্ব নেয়ার পর বদলে যায় ইংলিশ ফুটবল। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল, ২০২১ সালের ইউরোতে রানার্সআপ হওয়ার পর ২০২৪ সালের ইউরোতেও ফাইনালে উঠে গেছে থ্রি লায়ন্সরা। এবার তার দলকে ঘিরে স্বপ্ন বোনা শুরু হয়েছে ইংলিশ সমর্থকদের।
তবে এবার সতর্ক ইংলিশরা। ফাইনাল সামনে রেখে শান্তই আছেন সাউথগেট ও তার শিষ্যরা। ইংল্যান্ডের কোচ বলেন, ‘এবারের অনুভূতি ভিন্ন। একটি দল হিসেবে আমরা এখন ভিন্ন একটি মুহূর্তে। দুটি বড় টুর্নামেন্ট এবং অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে আমাদের। আমি তো মনে করি, এবার উদযাপন কম হয়েছে, তেমনি ফাইনালে ওঠায় আত্মতৃপ্তিও আগের চেয়ে কম প্রদর্শিত হয়েছে। হ্যাঁ, বলতে পারেন এটা আমাদের জন্য স্বাভাবিক বিষয় মনে হচ্ছে।’
এখন জয়টা বড্ড প্রয়োজন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সাউথগেট বলেন, ‘হ্যাঁ, আমাদের সর্বশেষটি জেতা উচিত ছিল। আমরা পারিনি। এখন যেটা বুঝি, ভবিষ্যতে মানুষজন আমাদের কীভাবে বিচার করবে তা অনেকটাই নির্ভর করবে রোববারের ফলাফলেরও ওপর।’
স্পেনের সামনে চতুর্থ শিরোপার হাতছানি। লা রোজাদের আশার পালে হাওয়া দিচ্ছেন একঝাঁক তরুণ। লামিনে ইয়ামাল, নিকো উইলিয়ামস, দানি ওলমো, পেদ্রির মতো তরুণরা দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়ে স্পেনকে শিরোপার মঞ্চে তুলে এনেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় সদ্যই ১৭ বছরে পা দেয়া ইয়ামাল।
ব্রাজিল কিংবদন্তি পেলের রেকর্ড এরই মধ্যে ভেঙেছেন। ইউরোর সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়, সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে গোলে অ্যাসিস্ট করা ও সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার কীর্তি গড়েছেন কিশোর ইয়ামাল। এবার সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ইউরো শিরোপার স্বাদ নেয়ার কীর্তির সামনে তিনি, যদি আজ তার দল বার্লিন ফাইনালে হারাতে পারে ইংল্যান্ডকে। স্পেন ফুটবল দলকে ডাকা হয় ‘লা রোজা’ বা ‘দ্য রেড ওয়ান’ নামে। চলতি ১৭তম ইউরোর সেরা দলটির হাতেই কি আজ উঠছে শিরোপা? যদি তা-ই হয় তবে বার্লিন অলিম্পিক স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচায় আর গ্যালারিতে উঠবে লাল ঢেউ। মাঠের অন্য প্রান্তে তখন নেমে আসবে রাজ্যের হতাশা আর বিষাদ। অপেক্ষা আরো বাড়বে ‘থ্রি লায়ন্স’দের।
ইউরোর ফাইনাল শুরুর ঠিক ৫ ঘণ্টা পর মাঠে গড়াবে ৪৮তম কোপা আমেরিকার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ। এদিন কোপায় ১৬তম শিরোপার লক্ষ্যে খেলবে আর্জেন্টিনা। ১৫টি শিরোপা জিতে উরুগুয়ের সঙ্গে রেকর্ড ভাগাভাগি করছে ‘আলবিসেলেস্তে’রা। ১৯২১ সালে প্রথম ও ২০২১ সালে ১৫তম শিরোপা জয় করে লাতিন ফুটবল পরাশক্তি। কলম্বিয়ার চোখ দ্বিতীয় শিরোপায়। ২০০১ সালে প্রথমবার শিরোপা জয় করে ‘লস ক্যাফেটেরোস’রা। সেবার আয়োজকও ছিল তারা। ২০২১ সালে ব্রাজিলের মাটিতে অনুষ্ঠিত আসরে তৃতীয় হয় কলম্বিয়া। তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের মাঠে ২০১৬ সালের আসরেও তৃতীয় হয়েছিল তারা। এবার সেই যুক্তরাষ্ট্রে শেষ চারে উঠে এসেছে হামেশ রদ্রিগেজের নেতৃত্বাধীন দল।
কোপা ফাইনালে লড়াইয়ের মধ্যে থাকছে ভিন্ন লড়াই। লিওনেল মেসি বনাম হামেশ রদ্রিগেজ লড়াই। ৩৭ বছর বয়সী মেসি আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগের প্রাণভোমরা। ৩৩ বছর বয়সী হামেশও তাই। মেসি অবসরের ঘোষণা না দিলেও এটা স্পষ্ট যে তিনি শেষলগ্নে চলে এসেছেন। আবার হামেশও ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবের বর্ণাঢ্য অধ্যায় শেষ করে এখন খেলছেন ব্রাজিলের সাও পাওলোয়। জিতলে হয়তো খেলে যাবেন, আর হারলে বিদায়ও বলে দিতে পারেন কলম্বিয়াকে। দুই দলের দুই খ্যাতিমান তারকা কোপার শিরোপা জিতে ক্যারিয়ারের শেষটা রাঙাতে মরিয়া।
মেসি আটবার ব্যালন ডি’রসহ অসংখ্য ব্যক্তিগত পুরস্কার জিতেছেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা ও ২০২২ সালে বিশ্বকাপ জিতে ক্যারিয়ারকে পূর্ণতা দিতে পেরেছেন। কৃতী এ ফরোয়ার্ড ক্যারিয়ারের শেষলগ্নটাও রাঙাতে চান কোপায় নিজেদের রেকর্ড ১৬তম শিরোপা জিতে। চলতি আসরে সতীর্থদের সাতটি বড় সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন, আর ১৫টি মূল্যবান পাস দিয়েছেন।
রদ্রিগেজও কলম্বিয়ার হয়ে দারুণ ফর্মে রয়েছেন। ২০১৪ বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুটজয়ী এ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার এবারের কোপা শুরুর আগে আলোচনাতেই ছিলেন না। পোর্তো, মোনাকো, রিয়াল মাদ্রিদ, বায়ার্ন মিউনিখ ও এভারটনে খেলা এ তারকা আবার দেশের হয়ে বড় টুর্নামেন্টে জ্বলছেন তারা হয়ে। দুর্দান্ত পারফর্ম করে তিনি দলকে নিয়ে গেছেন ফাইনালে। এ পথে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাঁচটি বড় সুযোগ তৈরি করেছেন, আর ১৭টি মূল্যবান পাস দিয়েছেন সতীর্থদের। এবার ফাইনালেও দলকে গৌরবের আসনে বসাতে চাইবেন তিনি।
দুই দলের দুই ‘নাম্বার টেন’ বিশ্বের প্রাচীনতম এ টুর্নামেন্টে এর আগে দুবার মুখোমুখি হয়েছেন। ২০১৫ সালের কোয়ার্টার ফাইনালটা আর্জেন্টিনা জিতে যায় টাইব্রেকারে। দুই খেলোয়াড়ই স্পট-কিক থেকে সেবার গোল করেন। ২০১৯ সালের কোপায় গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হয় দুই দল, যেখানে কলম্বিয়া ২-০ গোলের জয় পায়। ওই ম্যাচে একটি গোলে অ্যাসিস্ট করেন রদ্রিগেজ। এবার কোপার বড় মঞ্চে মুখোমুখি আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়ার অধিনায়ক। কে হাসবেন শেষ হাসি?
মেসির জন্যই কোপা ফাইনালের টিকিটের দাম আকাশচুম্বী। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের টিকিটের দাম সর্বোচ্চ ৬৬ হাজার ৭৬৫ ডলারে ঠেকেছে (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৭৮ লাখ টাকা)। আবার গড় সর্বনিম্ন দাম ২ হাজার ১৩৭ ডলার (প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা)!
হয়তো মেসির হাতে শেষবারের মতো শিরোপা দেখার আশায় চড়া দামেও টিকিট কিনতে মরিয়া সমর্থকরা।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//