ডেস্ক রিপোর্ট: প্রযুক্তি কোম্পানি ইন্টেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা। তাদের অভিযোগ, ইন্টেল এমন কিছু তথ্য গোপন করেছে, যা কোম্পানির আর্থিক অবস্থার অবনতি, হাজারো কর্মী ছাঁটাই ও শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ বন্ধ করে দেয়ার জন্য দায়ী। খবর গ্যাজেট থ্রিসিক্সটি।
শেয়ারহোল্ডাররা জানান, ব্যবসা সম্পর্কিত এ সমস্যাগুলো লুকিয়ে রাখার কারণে কোম্পানির বাজারমূল্য মাত্র একদিনে কমে গেছে ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার। বাজারমূল্য এভাবে কমে যাওয়ার কারণে একদিকে কোম্পানিটি সরাসরি আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, অন্যদিকে ইন্টেলকে নিয়ে পুরো বিশ্বে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
শেয়ারহোল্ডাররা আরো বলেছেন, তারা ১ আগস্ট জানতে পারেন ইন্টেলের যে বিভাগ অন্য কোম্পানির জন্য সেমিকন্ডাক্টর চিপ তৈরি করে (ফাউন্ডারি ব্যবসা), সে ব্যবসায় বেশ জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছে ইন্টেল। ইন্টেলের ব্যবসার এ অংশ ভালো পারফর্ম করছিল না। যেখানে আয় কমে যাচ্ছে, সেখানে ইন্টেলের এ ব্যবসায় হাজার কোটি ডলার অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। এমন সংবাদে শেয়ারহোল্ডাররা অনেক বেশি হতবাক হয়েছিলেন। তারা বলেছে, ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক কোম্পানিটি ব্যবসা ও তাদের উৎপাদন ক্ষমতা সম্পর্কিত মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর বিবৃতি দেয়া অর্থাৎ সত্য লুকানোর বিষয়টি ২৫ জানুয়ারি থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত কোম্পানির স্টক মূল্যকে স্ফীত করেছে।
যদিও এখন পর্যন্ত ইন্টেলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
এর আগে গত সপ্তাহে ইন্টেল তাদের ১৫ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা জানায়। আর্থিক ক্ষতি থেকে কোম্পানিকে পুনরুদ্ধার ও বাজার হিস্যা সম্পর্কিত সমস্যা মোকাবেলা করতে এ সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এ কারণে চাকরি হারাবেন ইন্টেলে কর্মরত অন্তত ১৫ হাজার কর্মী।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কর্মী ছাঁটাই কোম্পানির আর্থিক স্থিতিশীলতা ও বাজারে নিজের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান উন্নত করার জন্য একটি কৌশলের অংশ। চলতি বছর ইন্টেলের বাজার হিস্যা ৪০ শতাংশ কমেছে। কোম্পানিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অ্যাপ্লিকেশনগুলোয় ব্যবহৃত চিপের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছে। সেজন্য তারা কর্মী ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে খরচ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইন্টেল জানায়, চলতি বছর দ্বিতীয় প্রান্তিকে তাদের নিট ক্ষতি হয়েছে ১৬১ কোটি ডলার। এর মানে হলো, কোম্পানিটি সেই সময়কালে আয়ের চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। এ সময় ইন্টেলের রাজস্ব বা বিক্রয় থেকে মোট আয় ১ শতাংশ কমে ১ হাজার ২৮৩ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কোম্পানিটি তাল মিলিয়ে চলতে বেশ সংগ্রাম করছে। এআই প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদা সত্ত্বেও ইন্টেলকে কার্যকরভাবে প্রতিযোগিতা করতে ও এ ক্রমবর্ধমান বাজারের সম্পূর্ণ সুবিধা নিতে অসুবিধা হচ্ছে। কারণ অ্যাডভান্স মাইক্রো ডিভাইস, এনভিডিয়া, স্যামসাং ইলেকট্রনিকস ও তাইওয়ানের টিএসএমসি চিপ শিল্পে ইন্টেলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী।
চিপ উৎপাদন খাতে একসময় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম কোম্পানি ছিল ইন্টেল। তবে বর্তমানে সংকটজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে এ প্রযুক্তি জায়ান্ট। রয়টার্সের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে কোম্পানিটি ৭০০ কোটি ডলার লোকসান দিয়েছে।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//