ডেস্ক রিপোর্ট: চীনের অর্থনীতি সাম্প্রতিক সময়ে খারাপ পরিস্থিতি পার করছে। এতে তুলনামূলক নিরাপদ বিবেচনায় সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ বেড়েছে। তবে বিক্রয় চাপ বাড়ায় বন্ডের ইল্ড এখন নিম্নমুখী। (বন্ডের বিপরীতে আসা মুনাফা)। এ অবস্থায় বিদেশী বিনিয়োগকারীরা চীনা ব্যাংকগুলোর ইস্যুকৃত স্বল্পমেয়াদি বন্ডে আগ্রহী হয়েছেন। তুলনামূলক বেশি ইল্ড ছাড়াও বন্ড বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ ডলারে রূপান্তর করে লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকায় গত বছর থেকে ব্যাংক বন্ডের বিক্রি বেড়েছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস।
চীনের বন্ড মার্কেটে বর্তমানে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ প্রবণতা সামনের দিনগুলোয়ও অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে তাদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের চাহিদা বেড়েছে। ফলে বিক্রি চাপ বেড়ে বন্ডের দামও বেড়েছে। আবার একই কারণে বন্ডের ইল্ড বা মুনাফার পরিমাণ কমে ২ শতাংশে নেমে গেছে।
বন্ড মার্কেটে চাহিদা ও ইল্ডের আকস্মিক এ উত্থান-পতন প্রশমিত করার চেষ্টা করছে চীনা কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়না (পিবিওসি)। বিশ্লেষকরাও বলছেন, দ্রুত বন্ড মার্কেটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। অন্যথায় অন্য বিনিয়োগের খাতগুলোয় আস্থাহীনতা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
এদিকে ইল্ড কমায় সাম্প্রতিক মাসগুলোয় চীনা সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। এর পরিবর্তে চীনা ব্যাংকের স্বল্পমেয়াদি বন্ডে বিনিয়োগ করছেন তারা। একই সঙ্গে মার্কিন ডলারের বিপরীতে অনুকূল বিনিময় হারের সুবিধা নিয়ে মুদ্রা বিনিময় ব্যবসায়ও আগ্রহী হয়েছেন তারা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ ব্যবসা থেকে আসা মুনাফার পরিমাণ ডলারে রূপান্তর করলে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডের ইল্ডকেও ছাড়িয়ে যায়।
সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান নাইন্টি ওয়ানের বিশ্লেষক মার্ক ইভানস বলেন, ‘ব্যস্টিক কিংবা মৌলিক, যেকোনো অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ বিচার করলেও বন্ডের ইল্ড কমে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কম থাকায় বর্তমানে মূল্যস্ফীতিও কম। ফলে অন্যান্য বিনিয়োগের তুলনায় বন্ডের বিপরীতে আসা প্রকৃত মুনাফা বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশ আকর্ষণীয়।’
চীনে আবাসন খাতে সংকটের কারণে দেশটির সামগ্রিক অর্থনীতিও কিছুটা স্থবির হয়ে পড়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডের ইল্ড কমে ২ দশমিক ১ এবং ৩০ বছর মেয়াদি বন্ডের ইল্ড ২ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে গেছে।
চীনের বন্ড ইল্ডের হার যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারির তুলনায় কম। তাত্ত্বিকভাবে এ পরিস্থিতিতে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের চীনা বন্ড থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কথা। চায়নাবন্ড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মতে, তিন বছর আগে চীনা মোট বন্ডের ১০ শতাংশের মালিকানা ছিল বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে। বর্তমানে তা কমে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে ইল্ডের পরিমাণ কম হলেও অন্যান্য সুবিধার কারণে এখনো চীনা বন্ড আকর্ষণীয়। কেননা রেনমিনবিতে পাওয়া বন্ড ইল্ড ডলারে রূপান্তর করলে তা যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারির ইল্ডের চেয়ে বেশি হয়।
সাংহাই ক্লিয়ারিং হাউজের তথ্যানুসারে, এক বছর আগে চীনা সরকারি বন্ডে বিদেশী বিনিয়োগ ছিল ২৬ হাজার কোটি রেনমিনবি। জুলাই শেষে তা ১ ট্রিলিয়ন রেনমিনবি ছাড়িয়ে গেছে।
পিক্টেট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের পোর্টফোলিও ম্যানেজার সাবরিনা জ্যাকবস বলেন, ‘বিদেশী বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট দামে ভবিষ্যৎ ক্রয়চুক্তির মাধ্যমে বন্ড কিনছে, এতে ইল্ডের বাইরেও বার্ষিক প্রায় ৪ শতাংশীয় পয়েন্ট হারে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করতে পারছেন তারা। পরবর্তী সময়ে এ মুনাফা ডলারে রূপান্তর করলে মার্কিন ট্রেজারির তুলনায় বাড়তি ৬ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে।
অন্যদিকে ব্যাংকের ইস্যকৃত স্বল্পমেয়াদি বন্ডে ইল্ডের পরিমাণ সামান্য বেশি। ফলে এ ধরনের বন্ড থেকে প্রান্ত ইল্ড ডলারে রূপান্তরের মাধ্যমে বাড়তি মুনাফা করতে পারছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজারবিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান সিটিক সিকিউরিটিজের মতে, এক বছরের মধ্যে চীনা বন্ডের নিট বিক্রির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ছিল এ ধরনের বন্ড। একই সময়ে সরকারি বন্ডের বিক্রি প্রায় অর্ধেকের মতো কমেছে।
এদিকে পিবিওসি বলেছে, অর্থনৈতিক ক্ষতি এড়াতে এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো তারা বন্ড মার্কেটে হস্তক্ষেপ করতে যাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি বন্ড কমতে থাকলে তা সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের মতো আকস্মিক অর্থনৈতিক দুরবস্থা পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
তবে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, পিবিওসি পুরো বন্ড বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবে না। বরং স্বল্পমেয়াদি বন্ডের তুলনায় দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের ইল্ড খুব বেশি কমে যাওয়া প্রতিরোধের চেষ্টা করবে
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//