ডেস্ক রিপোর্ট: ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর চুক্তিভিত্তিক সাত রাষ্ট্রদূতকে ‘রিকল’ (দেশে ফেরত আনা) করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে ওই সাত জনের মধ্যে তিন জনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও বাতিল করা হয়েছে। বাকিরা সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা ফেরত আসবেন বলে কথা রয়েছে। এরপর পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে সরকার। এছাড়া চীন থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসিম উদ্দিনকে ঢাকায় ফেরত আসার জন্য বলা হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে আগামী ৮ বা ৯ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেবেন তিনি।
অন্যদিকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আরও আটটি দূতাবাসের। ফলে মোট ১৬টি দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত রদবদলের জন্য অন্তত ২৫টি দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত পরিবর্তন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় পরিসরে রাষ্ট্রদূত রদবদল এর আগে হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, রাষ্ট্রদূত পদে আসছেন কারা?
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, রাষ্ট্রদূত পদে উপযুক্ত ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হবে। বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাষ্ট্রদূতদের রিপ্লেসমেন্ট বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘রিপ্লেসমেন্টে কিছুটা সময় লাগবে। হুট করে তো হবে না। এটা ভেবেচিন্তে দিতে হবে উপযুক্ত যারা আছেন।’
কয়েকটি মিশন থেকে রাষ্ট্রদূতদের ফেরত আসতে বলার বিষয়ে জানতে চাইলে জবাবে তিনি বলেন, ‘কন্ট্রাক্টে যারা ছিল তাদের সবাইকে রিকল করা হয়েছে। তার মধ্যে তিন জন ছিলেন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে তাদের চুক্তি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের আমরা মোট চার সপ্তাহ সময় দিয়েছিলাম। তারা কয়েক দিনের মধ্যে চলে আসবেন।’
কতগুলো মিশনে পরিবর্তন হতে পারে
ইতোমধ্যে যেসব দূতাবাসে রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠানো হয়েছে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে স্বাভাবিক চাকরির মেয়াদ শেষ হবে, সেই তালিকায় আছে– যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান, জার্মানি, সৌদি আরব, মালদ্বীপ, ভারত, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, জাতিসংঘ স্থায়ী প্রতিনিধি (নিউ ইয়র্ক), অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল, ইরাক, সুইডেন ও ইথিওপিয়া মিশন। এর মধ্যে কয়েকটি মিশন খালি আছে অথবা ছয় মাসের মধ্যে খালি হবে।
এছাড়া বাহরাইন মিশন এখন খালি আছে। খালি চোখে মোট ১৮টি মিশনে নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেওয়ার বিষয় হলেও রাষ্ট্রদূত রদবদলের সংখ্যা আরও বেশি হবে।
এর কারণ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ মিশন, যেমন- যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতে এক বা একাধিক দেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে যারা কাজ করেছেন বা করছেন এমন কাউকে পাঠানো হয়। যেমন ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মো. জিয়াউদ্দিনের মেয়াদ শেষ হলে সেখানে ভারতের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ভারতে পাঠানো হয় জেনেভার রাষ্ট্রদূত মুস্তাফিজুর রহমানকে। জেনেভায় পাঠানো হয় অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূত মো. সুফিউর রহমানকে। অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হয় ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত আল্লামা সিদ্দিকীকে। ডেনমার্কে পাঠানো হয় ভুটানের রাষ্ট্রদূত শহীদুল করিমকে। ভুটানে ঢাকার সদর দফতর থেকে সাবেক আমলা শিবনাথ রায়কে পাঠানো হয়। ফলে গুরুত্বপূর্ণ একটি মিশনের পরিবর্তনের জন্য বেশ কিছু মিশনে রদবদল হয়ে থাকে।
উপযুক্ত রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশের প্রথা অনুযায়ী দুইভাবে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ হয়ে থাকে। প্রথমত পেশাদার কূটনীতিক অর্থাৎ পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তা যারা মহাপরিচালক বা এর চেয়েও বড় পদে কাজ করেছেন তাদের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অন্যটি হচ্ছে বিভিন্ন সেক্টরের বিশিষ্ট ব্যক্তি বা ‘এমিনেন্ট পারসোনালিটি’। এই বিশিষ্ট ব্যক্তি কারা সেটি রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে থাকে।
রাষ্ট্রদূতদের যোগ্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, ‘সাধারণভাবে বলা যায় আত্মবিশ্বাসী, কাজ করার আগ্রহ আছে, নেটওয়ার্ক তৈরি করার ক্ষমতা আছে, নেগোসিয়েশন দক্ষতা রয়েছে, মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে, কথা বলার দক্ষতা ও সুন্দর লেখার ক্ষমতা রয়েছে এবং আরও অনেক কিছু। একইসঙ্গে মাথায় রাখতে হবে, এটি একটি টিম-ওয়ার্ক। রাষ্ট্রদূতকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে এবং বুঝতে হবে কাকে দিয়ে কী কাজ করাতে হবে।’
রাজনৈতিক বিবেচনা বা বিভিন্ন কারণে অনেক ক্ষেত্রে ভুল ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদূত করা হয়েছে এবং সেই সংস্কৃতি থেকে বের হওয়াটা জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//