ডেস্ক রিপোর্ট: আফ্রিকার সঙ্গে চীনের বাণিজ্য চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে বেড়েছে। চীনের সাধারণ শুল্ক প্রশাসনের (জিএসি) প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, এ সময় আফ্রিকার সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ ১ দশমিক ১৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে (প্রায় ১৬৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) উন্নীত হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়সীমার তুলনায় ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। খবর: আফ্রিকা নিউজ।
এর আগে ২০২৩ সালে চীন-আফ্রিকা বাণিজ্য ২৮২ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেকর্ড তৈরি করেছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। ফলে ধারাবাহিকভাবে অঞ্চল দুটির মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ছে।
২০২৩ সালে চীনে আফ্রিকা থেকে বাদাম আমদানি আগের বছরের তুলনায় ১৩০ শতাংশ বেড়েছিল। একই বছর সবজি ৩২ শতাংশ, ফুল ১৪ শতাংশ ও ফল আমদানি ৭ শতাংশ বেড়ে যায়।
অন্যদিকে আফ্রিকায় চীনের পরিবেশবান্ধব গাড়ি রফতানি বেড়েছে ২৯১ শতাংশ। এছাড়া লিথিয়াম ব্যাটারি ১০৯ শতাংশ ও সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের সরঞ্জাম রফতানি আগের বছরের তুলনায় ৫৭ শতাংশ বাড়ে।
জিএসি জানিয়েছে, চীন ১৫ বছর ধরে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে রয়েছে। অব্যাহতভাবে এ বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ছে।
২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো চীন-আফ্রিকা বাণিজ্য সূচক প্রকাশ করে জিএসি। ওই সূচকে ২০০০ সালের তথ্যকে মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়। ২০০০ সালে সূচক ১০০ পয়েন্ট দিয়ে শুরু হয়ে ২০২২ সালে রেকর্ড ৯৯০ দশমিক ৫৫ পয়েন্টে পৌঁছেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি চীন-আফ্রিকা বাণিজ্যের দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও ইতিবাচক উন্নয়ন নির্দেশ করে।
জিএসির অধীন পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণ বিভাগের পরিচালক লিউ ডালিয়াং বলেন, ‘চীন দীর্ঘদিন ধরে আফ্রিকার সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা দৃঢ় করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শিল্প খাতে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ফলে চলতি বছর প্রথম সাত মাসে আফ্রিকায় চীনের মধ্যবর্তী পণ্য রফতানি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। এ বাণিজ্য মোট দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ৬৮ শতাংশের বেশি, যা আফ্রিকার শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে।’
সংবাদমাধ্যমে সিএনবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২০ বছরে চীন সাব-সাহারান আফ্রিকার বৃহত্তম দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অংশীদার হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্যানুসারে, বর্তমানে আফ্রিকার মোট রফতানির ২০ ভাগ চীনে চলে যায়। অন্যদিকে আফ্রিকার আমদানি করা প্রায় ১৬ শতাংশ পণ্য আসে চীন থেকে। ২০২৩ সালে এ বাণিজ্যের পরিমাণ একটি রেকর্ড ২৮২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। আফ্রিকার ধাতু, খনিজ ও জ্বালানি পণ্যের মতো প্রাথমিক পণ্যের তিন-পঞ্চমাংশ চীনে রফতানি হয়। আফ্রিকা সাধারণত চীনে উৎপাদিত শিল্পপণ্য, ইলেকট্রনিকস ও মেশিনারি আমদানি করে।
গত কয়েক বছরের মধ্যে চীন আফ্রিকার সবচেয়ে বড় দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতা হয়ে উঠেছে। আফ্রিকার দেশগুলোকে অবকাঠামো, খনিজ ও জ্বালানি খাতে অর্থায়নের একটি বড় অংশ চীন দিচ্ছে। ২০০৫ সালের আগে সাব-সাহারান আফ্রিকায় মোট বহিঃস্থ সরকারি ঋণে চীনের অংশ ছিল ২ শতাংশেরও কম। ২০২১ সাল নাগাদ এ ধরনের ঋণে চীনের হিস্যা প্রায় ১৭ শতাংশ বা ১৩৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
এছাড়া চীনের প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) গত দুই দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০০৩ সালে আফ্রিকায় চীনের বার্ষিক এফডিআই-প্রবাহ ছিল প্রায় ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা ২০২২ সালে ৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এটি আফ্রিকা অঞ্চলের মোট এফডিআইয়ের প্রায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৩ সালে শুরু হওয়া বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) হলো চীনের এফডিআই-এর কাঠামো, যার আওতায় পরিবহন, শক্তি ও খনির অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করা হয়।
২০২৪ সালের চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের শীর্ষ সম্মেলন ৪-৬ সেপ্টেম্বর বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্লেষক আশা করছেন, এ সম্মেলনের মাধ্যমে উভয় পক্ষের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতা আরো বাড়বে।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//