Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Saturday, 28 Sep 2024 19:00
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিরবিচ্ছিন্নভাবে পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে রপ্তানি অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা জোরদারের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনার উপর জোরারোপ করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি আশারাফ আহমেদ। 

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪) ডিসিসিআই আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির দ্বি-বার্ষিক পর্যালোচনা (জানুয়ারি-জুন, অর্থবছর ২০২৪); প্রেক্ষিত বেসরকারিখাত’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ অভিমত জ্ঞাপন করেন।
 
ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ উক্ত সেমিনারে ২০২৪ অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়কালে অর্থনীতির সার্বিক প্রেক্ষাপটের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈশ্বিক ভূ-অর্থনীতির প্রভাব, বাজেট ও মুদ্রানীতির বাস্তবায়ন অবস্থা, মূল্যস্ফীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, তৈরি পোষাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ঔষধ শিল্প, সিএমএসএমই, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এবং আর্থিক খাত নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন।
 
এ সময় তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত উচ্চ সুদ হার এবং মুদ্রা বিনিময় নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে, তবে দেশে মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়ার পরিস্থিতি বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত পুণঃবিবেচনা করা প্রয়োজন বলে, তিনি মত প্রকাশ করেন। ডিসিসিআই সভাপতি আরো বলেন, আমাদের শিল্প-কারখানায় প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন বাড়িয়ে রপ্তানি অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি আশা করেন, বেলেন্স অফ পেমেন্ট-এর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জটিলতা অচিরেই নিরসন হবে এবং মার্কিন ডলারের সুদ হার হ্রাসের ফলে বাংলাদেশী টাকার মান বৃদ্ধি পাবে।
 
সেই সাথে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নে মধ্য-মেয়াদী নীতিমালা গ্রহণ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভিন্ন সংস্থাসমূহের কার্যপরিধি সংষ্কার করা আবশ্যক বলে মনে করেন, ঢাকা চেম্বার সভাপতি। তিনি বলেন, আমরা দেখতে পারছি দেশের ব্যাংকখাতের কিছু ব্যাংক, যার সংখ্যা ১০ হতে পারে, মন্দ ঋণের সমস্যায় মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, তবে অন্যান্য ব্যাংকসমূহের অবস্থা বেশ ভলো। মন্দ ঋণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকসমূহের আমানতকারী এবং ঋণ গ্রহীতারা যেন অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাংকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পান, তা নিশ্চিতকরণে ব্যাংকখাতে কার্যকর স্থিতিশীলতা অপরিহার্য বলে, তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।
 
আশরাফ আহমেদ উল্লেখ করেন, উচ্চ সুদ হার, উচ্চ বিনিময় হার, ব্যবসায়িক মূলধনের খরচ বৃদ্ধির কারণে সিএমএসএমই খাতে প্রকৃত ঋণপ্রবাহের কার্যকর হার সংকুচিত করছে, তারপরও দেশের অর্থনীতির সার্বিক উন্নয়নে বিশেষকরে সিএমএসএমই খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন। ডিসিসিআই সভাপতি, মূল্যস্ফীতি সহনীয় হলে, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি নমনীয় করার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, কর আহরণের হার বৃদ্ধি পেলে সরকারের গৃহীত ঋণের সুদ পরিশোধের সক্ষমতাও বাড়াবে। ঢাকা চেম্বার সভাপতি উল্লেখ করেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থার উন্নয়ন, পণ্যের পঁচন হ্রাসে স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বাড়ানো, লজিস্টিক ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং আধুনিক বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের জোরারোপ করেন। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আস্থার পরিবেশের উন্নয়নে হলে দেশে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্প্রসারণ হবে। এছাড়াও নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে রপ্তানি অব্যাহত রাখার পরামর্শ প্রদান করেন ডিসিসিআই সভাপতি, যার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার আহরণ বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে তৈরি পোষাকের পর ইলেকট্রনিকস এবং সেমিকন্ডাক্টর খাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।       
 
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর সাবেক মহাপরিচালক ড. খান আহমেদ সৈয়দ মুরশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেপলমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও র‌্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক ড. আবু ইউসুফ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক-এর পরিচালক (গবেষণা) ড. মো: সেলিম আল মামুন উক্ত সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
 
ড. খান আহমেদ সৈয়দ মুরশিদ বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক বহির্ভূত অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তাই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর মাধ্যমে বেসরকারিখাতের আস্থা বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের শুধুমাত্র জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর উপর নজর দিলেই হবে না, সুশাসন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেওয়ার সময় এসেছে। এছাড়াও খাদ্য নিরাপত্তা, নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে শিক্ষা কার্যক্রমের সংস্কারের উপর তিনি জোরারোপ করেন। বিশেষ করে শিল্প-কারখানায় নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবারহ নিশ্চিতকল্পে জ্বালানি মূল্য নির্ধারণে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।   
 
ড. আবু ইউসুফ বলেন, কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নে খাতভিত্তিক পরিসংখ্যানের কোন বিকল্প নেই, যেখানে আমাদের ঘাটতি রয়েছে এবং সময় এসেছে বিশেষ করে অর্থনীতি ভিত্তিক পরিসংখ্যানগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের। তিনি উল্লেখ করেন, চামড়া শিল্পে শুধুমাত্র কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা সম্ভব হলে, এখাত থেকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি সম্ভব। তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা লক্ষ্য করছি, শুল্ক হ্রাস করা হলেও বাজারে পণ্যের মূল্য হ্রাসে তেমন প্রভাব পড়ছে না, এক্ষেত্রে মুদ্রানীতি, বাজেট এবং বাজার ব্যবস্থাপনার মধ্যকার সমন্বয় বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়াও দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বৃদ্ধির উপর তিনি জোরারোপ করেন। সেই সাথে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখাই অর্থনীতির জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।     
 
ড. মো: সেলিম আল মামুন বলেন, মুদ্রানীতি বিনিময় হার ও পণ্যের সাপ্লাইচেইনে অস্থিতিশীলতা এবং সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অপ্রত্যাশিত বন্যা আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, চলমান সংস্কার কার্যক্রমের একটি অন্যতম অনুষঙ্গ হলো আর্থিক খাতের সংস্কার বাস্তবায়ন, যেখানে এতে বেসরকারিখাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, দেশের নিম্ন আয়ের মানুষকে মূল্যস্ফীতির প্রভাব থেকে রেহাই দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে, মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে আবার টাকার প্রবাহ বাড়বে এবং বেসরকারিখাত সুফল পাবে, স্বল্প সময়ের জন্য বেসরকারিখাতকে ধৈর্য্য ধারনের আহ্বান জানান। 
 
ঢাকা চেম্বারে উর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ সহ সরকারি-বেসরকারি খাতের আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//