ডেস্ক রিপোর্ট: দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে সময়াবদ্ধ সংস্কার পরিকল্পনা নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ে। এতে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন, বন্ধ স্টেশন পুনরায় চালু, দক্ষ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছ ও পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ ১০টি বিষয়। দুই বছরের মধ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে সংস্কার পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে সেবার গুণগত মান বাড়বে বলে মনে করছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
রেলওয়ের জন্য গৃহীত সংস্কার পরিকল্পনায় প্রথমেই রাখা হয়েছে যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন। ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিতকরণ, যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধির মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেয়া ও ট্রেন চলাচল বিলম্বের কারণ উদঘাটন এবং তা হ্রাসে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে তিন মাস মেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনাগুলো হলো যাত্রীর চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন রুটে ট্রেন ও কোচের সংখ্যা সমন্বয়; অস্থায়ী গতি নিয়ন্ত্রণ আদেশ প্রত্যাহার করে সেকশনাল গতি বৃদ্ধি; দুর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক জরুরি সহযোগিতা দিতে ‘কুইক রেসপন্স টিম’ গঠন; যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে জোন ও ডিভিশনভিত্তিক মনিটরিং সেল গঠন; ট্রেনের ওয়াশ রুমসহ ক্যারেজ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সিট ও জানালা প্রভৃতি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ জোরদার করে লাইট, ফ্যান, এসি ইত্যাদি সচল রাখা নিশ্চিত করা; গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে যাত্রীদের জন্য ‘রিয়েল টাইম ট্রেন ইনফরমেশন ডিসপ্লে সিস্টেম’ প্রবর্তন; যাত্রীদের জন্য কল সেন্টার বা হটলাইন নম্বর চালু এবং স্টেশনে যাত্রীদের কাছ থেকে সেবা সম্পর্কিত মতামত গ্রহণ প্রক্রিয়া চালু। চলতি অক্টোবর থেকে আগামী ১ জানুয়ারির মধ্যে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, সময়াবদ্ধ সংস্কার পরিকল্পনার আওতায় ২০২৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিদ্যমান রেলওয়ে আইন হালনাগাদকরণ ও সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে সারা দেশে রেল নেটওয়ার্ক স্থাপনের যে মাস্টার প্ল্যান, সেটি হালনাগাদ করা হবে।
এছাড়া ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে ভূসম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০২০’-এর খসড়াটি আগামী ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে অনুমোদনের ব্যবস্থা করা হবে। এ নীতিমালার মাধ্যমে সহজে রেলের জমি ইজারা দেয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে মামলাসহ অন্যান্য বিরোধ নিষ্পত্তিও সহজ ও দ্রুত করা যাবে। নিশ্চিত হবে রেলভূমি রেকর্ড ও দখল, যার ফলে বাড়বে রাজস্ব আয়।
রেলের জন্য দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল তৈরি করে রেলসেবার পরিমাণ ও গুণগত মান বাড়ানোর লক্ষ্যে এক বছর মেয়াদি মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর আওতায় শূন্য পদে নিয়োগ, রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমি, ওয়ার্কশপ ট্রেনিং ইউনিটগুলো আধুনিকায়ন করে দক্ষতাবিষয়ক প্রশিক্ষণ, কারিকুলাম হালনাগাদ ও দক্ষতা উন্নয়নে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে আগামী বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই।
২০২৬-২৭ অর্থবছরের মধ্যে পুরনো ১০টি লোকোমোটিভ (ট্রেনের ইঞ্জিন) ও ওভারডিউ অবস্থায় থাকা ৮০টি কোচ পুনর্বাসন করার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সেই সঙ্গে টাইমটেবিল অনুযায়ী ট্রেন পরিচালনার জন্য ১০০টি কোচ সংগ্রহ করা হবে। সংস্কার পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে স্থাপন করা হবে নতুন দুটি রেললাইন। কোচ ও লোকোমোটিভ কারখানার জন্য সংগ্রহ করা হবে আধুনিক মেশিন।
সংস্কার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘সংস্কার পরিকল্পনার একটি প্রস্তাব প্রস্তুত করে আমরা রেলপথ মন্ত্রণালয়কে দিয়েছিলাম। মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ে যৌথভাবে আলোচনা করে ১০টি বিষয়ে সংস্কারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর আলোকে আমরা স্বল্পমেয়াদে কিছু কার্যক্রম বাস্তবায়ন করব। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়নের জন্যও কিছু পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য এরই মধ্যে গঠন করা হয়েছে একাধিক কমিটি। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে রেলওয়ে কর্মীদেরও সংস্কার কার্যক্রমগুলোর বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//