ডেস্ক রিপোর্ট: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি আছে। দেশটির ভোটাররা আগামী ৫ নভেম্বর তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে ভোট দেবেন। ২০২০ সালে সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন জো বাইডেন। তিনি এবারও নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু গত জুলাইয়ে প্রচারণার শেষে এসে তিনি সরে দাঁড়ান এবং কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দেন।
এখন বড় প্রশ্ন হলো, এবার কি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো নারী প্রেসিডেন্ট পাবে নাকি দ্বিতীয় মেয়াদে জয় পেয়ে ক্ষমতায় বসবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প?
যেহেতু নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। ভোটারদেরও এই নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। হোয়াইট হাউজে যাওয়ার দৌড়ে কে এগিয়ে সেদিকেই এখন সবার নজর।
কে এগিয়ে?
শুরু থেকে প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু গত জুলাইয়ের শেষ দিকে প্রার্থী ঘোষণার পর নির্বাচনের মাঠে নামে কমলা হ্যারিস। এসেই তিনি ট্রাম্পের চেয়ে ছোট একটা লিড নিয়েছেন। সম্প্রতি এবিসি নিউজের এক জরিপে দেখা গেছে, ৪৮ শতাংশ সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আছেন হ্যারিস, বিপরীতে মাত্র এক শতাংশ কম সমর্থন রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের।
নির্বাচনের প্রচারণার প্রথম দিকে কিছুটা হোঁচট খেয়েছিলেন কমলা হ্যারিস। পরে আগস্টের শেষে এসে তিনি চার পয়েন্ট নিয়ে এগিয়ে যান।
গত ১০ সেপ্টেম্বর এই দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্যে যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় তা প্রায় ৭০ মিলিয়ন মানুষ দেখেছিল। ওই বিতর্কের পর দুই জনেরই জনপ্রিয়তা তুলনামূলক স্থিতিশীল ছিল।
গত কয়েকদিনে ট্রাম্প ও হারিসের মধ্যে এই ব্যবধান আরও কমে আসছে। বিভিন্ন জরিপে সেসব চিত্র অনেকটাই স্পষ্ট হচ্ছে। যদিও এই ধরনের জরিপ কোনো ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান করা বা কারো জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সঠিক মাপকাঠি নয়।
কেননা ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। যেখানে প্রতিটি রাজ্যে তার জনসংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ভোট অনুষ্ঠিত হয়। মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজের মধ্যে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ভোট পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য রয়েছে। কিন্তু প্রায় সবসময় একই দলকে ভোট দেয় কিছু কিছু রাজ্যের ভোটাররা। আবার এমন কিছু রাজ্য আছে যেখানে দুই দলের প্রার্থীদেরই জয় পাওয়ার সুযোগ আছে।
এগুলো এমন জায়গা যেখানে কেউ এগিয়ে থাকলে নির্বাচনে জয়ী হবে এবং পিছিয়ে পড়লে হেরে যাবে। এই রাজ্যগুলো যুদ্ধক্ষেত্র বা সুইং স্টেট হিসাবে পরিচিত।
আমেরিকার নির্বাচনে রিপাবলিকান দুর্গ বলে পরিচিত অঙ্গরাজ্যগুলোকে বলা হয় ‘রেড স্টেট’ বা ‘লাল রাজ্য’ আর ডেমোক্র্যাটদের প্রাধান্য পাওয়া স্টেটগুলোকে বলা হয় ‘ব্লু স্টেট’ বা ‘নীল রাজ্য’।
ফলে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা নির্দিষ্ট কিছু ‘সুইং স্টেট’ এর দিকে নজর দেন যেখানে ভোট কোন পার্টির পক্ষে যাবে, তা নির্দিষ্ট করে বোঝা যায় না।
সুইং স্টেটগুলোতে কে জিতছে?
এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সুইং স্টেট খ্যাত এমন ৭টি রাজ্যকে মূল লড়াইয়ের কেন্দ্র ভাবা হচ্ছে যেগুলোতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলোতে কেউ এগিয়ে বা পিছিয়েও নেই।
নির্বাচনী প্রচারণায় নামার পর থেকে কমলা হ্যারিস কিছু রাজ্যে পরিবর্তন আনতে পেরেছেন কিন্তু জাতীয় জরিপগুলোতে সব রাজ্যের পুরোপুরি চিত্র প্রতিফলিত হয় না।
অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, নেভাডা ও নর্থ ক্যারোলিনায় আগস্টের শুরু থেকে বেশ কয়েকবার লিড হাতবদল হলেও এ মুহূর্তে সবগুলোতেই ট্রাম্প সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন।
অন্য তিনটি রাজ্য মিশিগান, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিনে কমলা হ্যারিস গত আগস্টের শুরু থেকে ২ বা ৩ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক জনমত জরিপে পেনসিলভানিয়ায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন।
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের আগে মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনে ডেমোক্র্যাটদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। এ তিন অঙ্গরাজ্যেই ২০১৬ সাল পর্যন্ত ঐতিহ্যগতভাবে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। তবে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে সেগুলো রিপাবলিকানদের পক্ষে চলে যায়।
তবে পরবর্তীতে বাইডেন ২০২০ সালে সেগুলোতে জয়ী হন এবং কমলা হ্যারিস যদি এই রাজ্যগুলোতে নিজের প্রতিনিধিত্ব তৈরি করতে পারেন তাহলে নির্বাচনে তারই জয়লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।
হ্যারিস ডেমোক্র্যাট প্রার্থী মনোনীত হওয়ার পর থেকে নির্বাচনী লড়াইয়ে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। কখনো কখনো কোনো কোনো রাজ্যে পাঁচ শতাংশ পয়েন্টের ব্যবধানেও ট্রাম্পকে পেছনে ফেলেছেন তিনি। পেনসিলভানিয়ায় বাইডেন তার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় সাড়ে চার শতাংশ পয়েন্টে পিছিয়ে ছিলেন।
নির্বাচনে পেনসিলভেনিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। কেননা সাতটি সুইং অঙ্গরাজ্যের মধ্যে এটিতে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যে কারণে এই রাজ্যে জয় পেলে তাদের জন্য ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজে জয় পাওয়া তুলনামূলক সহজ হয়।
কীভাবে জরিপের গড় তৈরি হয়?
বিভিন্ন জরিপ সংস্থার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে জাতীয়ভাবে এই নির্বাচনের গড় তৈরি করা হয়। ক্ষুদেবার্তা, ফোনকল বিভিন্ন মাধ্যমে এক ধরনের জরিপ তথ্য প্রকাশ করা হয়। এসব জরিপের ক্ষেত্রে দেখা হয় কতজন ভোটার এই জরিপে অংশ নিয়েছেন, কখন এই জরিপটি করা হয়েছে কিংবা কিভাবে এই জরিপ সম্পন্ন হয়েছে।
এই জরিপে কি আস্থা রাখা যায়?
এই মুহূর্তের জরিপের রিপোর্ট বলছে, কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প সব সুইং স্টেটগুলোতে খুব কাছাকাছি ব্যবধানে রয়েছেন। যখন এত কাছাকাছি ব্যবধান থাকে তখন কে জিতবে সেটা নিয়ে ভবিষ্যদ্ববাণী করাও খুব কঠিন। যেমন- ২০১৬ এবং ২০২০ সালের জরিপে ট্রাম্পকে অবমূল্যায়ণ করা হয়েছিল। জরিপ কোম্পানিগুলো এই ত্রুটি দূর করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
তবে এসব সংশোধনীও ভোটের সঠিক চিত্র পুরোপুরি তুলে ধরতে পারবে না। এছাড়া জরিপকারীদের আরও কিছু ফ্যাক্টরকে বিবেচনায় নিতে হবে এটা বুঝতে যে আগামী ৫ নভেম্বর ভোটাররা কাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করবেন।
বিনিয়োগবার্তা/কেএইচকে/ডিএফই//