মোঃ আশিক বিল্লাহ: আমরা বিশ্বাস করি শেয়ার মার্কেট ভাল হবে নাকি খারাপ হবে সেটা শুধু মার্কেটের দায়িত্বে থাকা লোকদের উপরে নির্ভর করে না। শেয়ারের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখে কোম্পানিগুলোর ব্যসায়িক সফলতা এবং ভাল ডিভিডেন্ড। আমাদের কম বেশি ৪০০ কোম্পনির মধ্যে ৩০০ কোম্পানির ব্যবসায়ে সফলতা নেই। ভাল প্রসপেক্টাস নাই কাগজে ভাল দেখিয়ে লিষ্ট করেছে। এসব কোম্পানিকে জবাবদিহিতায় আনতে হবে, যে সমস্ত কোম্পানি ডিভিডেন্ড দিতে পারে না, তাদের পরিচালনা পর্ষদের রেমুনারেশনসহ অন্যান্য ভাতা, গাড়ি আবাসন ইত্যাদি সুবিধা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে হবে এবং তাদের কেনা বেচার সব ভাইচার পুর্নাঙ্গভাবে নিরিক্ষা করে দেখতে হবে। আসলে অনেক কোম্পানি অযথা ভাউচার করে আয় ইপিএস পর্যন্ত আসতে দেয় না। আর ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হলেও সেটা সামান্য পরিমাণে করা হয়। এবং সেই সামান্য ডিভিডেন্ড এর উপর আবার ১০/১৫% ট্যাক্স কর্তন করা হয়। আমাদের প্রস্তাব ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ডিভিডেন্ড ট্যাক্স মাওকুফ করতে হবে। কমবেশি হতে পারে আপনারা বিবেচনা করবেন। তবে একটা যৌক্তিক স্লাব পর্যন্ত ডিভিডেন্ড এর উপর কর থাকতে পারবে না। দুষ্টু পর্ষদের দোষ খুজে বের করে পর্ষদগুলো বাতিল করে দিয়ে নতুন ভাল লোক দিয়ে কোম্পানি চালাতে হবে। স্বতন্ত্র পরিচালকরা পাবলিকের সাথে বেঈমানি করেই যাচ্ছে, তারা পাবলিকের পক্ষ থেকে কোন ভাল ভুমিকা রাখে না কোম্পানি পরিচালনায়, তাদেরকে শাস্তি দিতে হবে। ভাল কোম্পানিকে লিষ্ট করতে কর সুবিধাসহ যা যা করা দরকার করতে হবে।
ব্যাংক তার অলস টাকা দিয়ে শেয়ার কিনত, মার্কেট ভাল থাকত, মার্কেটে ক্যাশ ফ্লো থাকত। কিন্তু সেই ব্যাংকের অলস টাকা ছাড়াও অতিরিক্ত টাকা লুটপাট এবং নামে বেনামে ঋণ নিয়ে শেষ ব্যাংকখাত করা হয়েছে। বাজারের খারাপ অবস্থার সবচেয়ে বড় কারণ ব্যাংক লুটপাট। তাই দ্রুত ঋণ খেলাপীদের সম্পত্তি নিলাম করে ব্যাংকের টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং ব্যাংক মার্কেটে বিনিয়োগ করবে। বাজারে টাকা আসলে এমনিতেই বাজার ভাল হবে।
মনমর্জিমত ডিভিডেন্ড ঘোষণা বন্ধ করতে হবে। অলিম্পিক ৯ টাকার উপরে ব্যাবসা করে ডিভিডেন্ড দিবে ১ টাকা, অন্তত ৭ টাকা ডিভিডেন্ড দিতে পারত। একমি ল্যাব ৭ টাকার উপরে ব্যাবসা করে ডিভিডেন্ড দিবে ৩.৫ পয়সা, অন্তত ৫ টাকা ডিভিডেন্ড দিতে পারত। স্কয়ার ফার্মা ২১ টাকার উপরে ব্যবসা করে ডিভিডেন্ড ১১ টাকা, রিজার্ভে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি তাদের উচিৎ ১০০% পে আউট মেইনটেইন করা। জেনেক্সিল এর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া উচিৎ, বাটপারি ব্যবসা শুরু করছে। কনফিডেন্স সিমেন্ট ৯ টাকার উপরে ব্যবসা করে ডিভিডেন্ড ১ টাকা। বিনিয়োগ কারীদের সাথে তামাশা করছে বেশিরভাগ কোম্পানির পর্ষদ। BSE, DSE, CSE তেমন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে না।
কোম্পানির পরিচালকরা পাবলিকের টাকায় ব্যবসা করে আর বছর শেষে পাবলিককে ঠকায়। তারা বেশি বেশি রেমুনারেশন নেন প্রতিমাসে। অনেকে গাড়ি, আবাসন সব কিছু কোম্পানির খরচে করেন, আবার প্রফিটের টাকার ভাগ দিতে চান না।
বিনিয়োগকারীদের ৯ দফা দাবি
১। ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ডিভিডেন্ড এর উপরে কর প্রতাহার করতে হবে।
২। লিস্টেড কোম্পানিকে কর সুবিধা দিতে হবে।
৩। যেসব কোম্পানি বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যবসায়িক সফলতা দেখাতে পারছে না বা লুটপাট করছে বা ওভার ইনভয়েস করে কোম্পানিকে লস দেখাচ্ছে তাদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে।
৪। ভাল কোম্পানিকে লিষ্ট করতে উদ্যোগ নিতে হবে।
৫। ফরেন পলিসি ঠিক করতে হবে যাতে সহজে বিদেশী বিনিয়োগ আসে।
৬। ব্যাংক লুটপাটের টাকা ব্যাংকে ফেরত আনতে হবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়িয়ে মার্কেটের তারল্য সংকট দূর করতে হবে।
৭। আয়ের ৮০% ডিভিডেন্ড পে-আউট রেশিও করতে হবে।
৮। কোম্পানিগুলোর অযথা খরচ বন্ধ করতে হবে, ওভার ইনভয়েস বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৯। লিষ্টেড কোম্পানির নামে ঋণ নিয়ে অন্য সাবসিডিয়ারি ব্যবসায়ে টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে।
মার্কেট খারাপ কেন?
সমাধান কি?
কিভাবে সমাধান করা যায়?
আমাদের এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুজতে হবে এবং সেই অনুসারে কাজ করতে হবে।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//