ডেস্ক রিপোর্ট: বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ বাতিল করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সই করা অধ্যাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশ হয়েছে গত ২৮ নভেম্বর। অধ্যাদেশে বিতর্কিত আইনটি বাতিলের ঘোষণা দেয়া হলেও এর আওতায় চলমান প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম চালু থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈধ বলে গণ্য করা হবে এ আইনের আওতায় করা চুক্তিগুলোকেও। তবে অধ্যাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিতর্কিত এ বিশেষ আইনের অধীনে করা চুক্তিগুলো জনস্বার্থে পর্যালোচনা ও এ-সংক্রান্ত পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশটি জারির পর থেকেই বিতর্কিত এ বিশেষ আইনের আওতায় করা চুক্তি ও প্রকল্পগুলোকে বৈধতা দেয়া এবং কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এ অধ্যাদেশে বিগত সরকারের দায়মুক্তি আইন বাতিলের ঘোষণা দেয়া হয়েছে ঠিকই কিন্তু এর আওতায় করা বিতর্কিত চুক্তি ও প্রকল্পগুলোকে দায়মুক্তির বড় সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। বৈধতা দেয়া হয়েছে আইনটির আড়ালে সংঘটিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ব্যাপক দুর্নীতি ও লুণ্ঠনকে।
বিশেষ আইন বাতিলের ঘোষণা দিয়ে জারি করা অধ্যাদেশটি গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ। ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ রহিতকরণকল্পে প্রণীত অধ্যাদেশ’ শীর্ষক অধ্যাদেশের দুই নম্বর ধারার অনুচ্ছেদ-২-এর দফা ক-তে উল্লেখ করা রয়েছে, এ আইন রহিত করা হলেও আইনটির আওতায় এর আগে সম্পাদিত চুক্তি বা সম্পাদিত চুক্তির অধীনে গৃহীত ব্যবস্থাগুলো বৈধভাবে সম্পাদিত বা গৃহীত হয়েছে গণ্য করা হবে। দফা খ-তে বলা হয়েছে, আইনটির আওতায় সম্পাদিত চুক্তির অধীনে চলমান কোনো কার্যক্রম এমনভাবে অব্যাহত থাকবে বা নিষ্পন্ন করতে হবে যাতে প্রতীয়মান হয় যে এ আইন রহিত করা হয়নি।
তবে বিশেষ আইন বাতিল করে ঘোষিত অধ্যাদেশের অনুচ্ছেদ-২-এর দফা গ-তে বলা হয়েছে, দফা ক ও খ-তে যা কিছুই থাকুক না কেন সরকার জনস্বার্থে এ আইনের অধীনে গৃহীত কোনো কার্যক্রম পর্যালোচনা করার অধিকার সংরক্ষণ করবে এবং এ বিষয়ে যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বড় একটি চিন্তার বিষয় যে আমরা চুক্তিগুলো বাতিল করে ফেলব কিনা। চুক্তিগুলো পর্যালোচনার বিষয়ে আমরা আদালত থেকে নির্দেশনা পেয়েছি। সেখানে যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে আমরা চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেব। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে কাজ করবে সরকার।’
এর আগে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ ২০২৪’ জারির প্রস্তাবে গত ২০ নভেম্বর নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য ২০১০ সালে এ বিশেষ আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করে। আইনটির অধীন নেয়া কোনো সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে আদালতে চ্যালেঞ্জ করার কোনো সুযোগ ছিল না। এ আইনের অধীনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রায় একশ প্রকল্প নিয়েছিল বিগত সরকার।
বিশেষ আইনের আওতায় করা বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তি পর্যালোচনার জন্য অন্তবর্তী সরকার একটি জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি করেছে। এর মধ্যে যেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে, তার অন্যতম হলো ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় স্থাপিত আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আদানির সঙ্গে করা বিদ্যুতের ক্রয় চুক্তিটি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালতও।
যদিও আদানি পাওয়ারের দাবি, বাংলাদেশ সরকার তাদের সঙ্গে করা ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করছে, এমন কোনো ইঙ্গিত তারা পায়নি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সে সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আদানি পাওয়ারের এমন বক্তব্যের কথা উঠে আসে। এর আগে রয়টার্সের রোববার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আদানির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা করবে বলে জানানো হয়। ওই প্রতিবেদনে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে বলেন, ‘চুক্তিতে অসংগতি পাওয়া গেলে তা নিয়ে পুনরালোচনা করা হবে। দুর্নীতি বা ঘুসের মতো গুরুতর অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে চুক্তি বাতিল করা হবে। আদালতের নির্দেশে চলমান তদন্তের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কিছু সমস্যার বিষয়ে আদানি গোষ্ঠীকে এরই মধ্যে জানানো হয়েছে। যেমন ভারতের বিদ্যুৎ কেন্দ্র যে কর সুবিধা পেয়ে থাকে, তা থেকে বাংলাদেশের উপকৃত না হওয়া। বিষয়টি চুক্তি নিয়ে পুনরালোচনার আংশিক কারণ হতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের আদানির বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগের প্রভাব সরাসরি বাংলাদেশের চুক্তিতে পড়বে না।’
বিশেষ আইন বাতিল করে ঘোষিত অধ্যাদেশটি সম্পর্কে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘এখানে মূলত যেটা বোঝানো হচ্ছে, যেসব চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে সেসব চুক্তি বলবৎ থাকবে এবং সেসব চুক্তির কার্যকারিতায় এ রহিতকরণের কোনো প্রভাব থাকবে না। চুক্তিগুলো পরিচালনা বা সেসব চুক্তির ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় রহিতকৃত আইনের আওতায় নির্ধারিত হবে। এছাড়া কোনো উপায় নেই। আইনের মূল উদ্দেশ্য হলো বিদ্যমান চুক্তিবদ্ধ বাধ্যবাধকতাগুলোর সুরক্ষা। অনেক ক্ষেত্রে লেটার অব ইনটেন্ট বাতিল করা হয়। এর কারণ হলো ওইসব ক্ষেত্রে চুক্তি হয়নি। চুক্তি না হওয়ার ফলে চুক্তিবদ্ধ অধিকারও কারো নেই। কিন্তু যেখানে কোনো প্রাইভেট পার্টির চুক্তিবদ্ধ অধিকার রয়েছে, সেখানে আইনের মাধ্যমে চুক্তিকে অস্বীকার করা যাবে না। কারণ তখন চুক্তির আওতায় ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন চলে আসে। যেসব চুক্তি এরই মধ্যে সম্পাদিত হয়ে গেছে, সেসব চুক্তির কার্যকারিতা সরকার অস্বীকার করতে পারবে না। সেখানে সরকার যেটা করতে পারে সেটা হলো কোনো চুক্তি সম্পাদনের দুর্নীতি বা অবৈধ প্রভাবের প্রমাণ পেলে সেসব চুক্তি বাতিলের এখতিয়ার সরকারের আছে।’
বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে ২০১০ সালে আইনটি প্রণয়নের পর এটিকে কাজে লাগিয়ে দেশে ব্যাপক হারে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয়। দুই ও পাঁচ বছর মেয়াদি এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুই-তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়ে উৎপাদনে রাখা হয়। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী সরকারঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা এসব প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। সর্বশেষ বিশেষ আইনটির মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়িয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। আইনটির আওতায় কেনাকাটা হয়েছে কয়েক লাখ কোটি টাকার। দীর্ঘদিন ধরে এটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কালো আইনটি বাতিলের দাবিতে জনমত তৈরি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ আগস্ট বিশেষ এ আইন স্থগিত করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। সে সময় এ আইনের অধীনে চলমান সব ধরনের আলোচনা, প্রকল্প বাছাই-প্রক্রিয়াকরণ ও ক্রয় প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম বন্ধ রাখে মন্ত্রণালয়। তবে তখনো এ আইনের অধীনে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় গৃহীত সব কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছিল।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ক জাতীয় শ্বেতপত্র কমিটির পক্ষ থেকে গত রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আওয়ামী লীগের দেড় দশকের আমলের দুর্নীতি ও লুণ্ঠন নিয়ে একটি শ্বেতপত্র হস্তান্তর করা হয়। এতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিপুল পরিমাণ দুর্নীতির পেছনে বিতর্কিত এ বিশেষ আইনকে বহুলাংশে দায়ী করা হয়। শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ‘(তৎকালীন) সরকার ২০১৬ সালের বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা পুনর্মূল্যায়ন পরিকল্পনার আওতায় ২০৩০ ও ২০৪০ সালের জন্য বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা নির্ধারণ করেছিল যথাক্রমে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ৭৯ হাজার মেগাওয়াট (পরে সংশোধন করে ৬০ হাজার মেগাওয়াট)। বিষয়টিকে ন্যায্যতা দিতে গিয়ে সামনে নিয়ে আসা হয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উচ্চাভিলাষ ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অতি উচ্চাশাকে। এর ফলে বিদ্যুৎ বিভাগ এমন এক পরিকল্পনা গ্রহণ করে যা বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০-কে কাজে লাগিয়ে উৎপাদনকারী ইউনিটের সংখ্যায় অনিয়ন্ত্রিত সম্প্রসারণ, দুর্নীতি ও অযৌক্তিকভাবে বরাদ্দ বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল।’
অধ্যাদেশটির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিগত সরকারের কাজগুলোকে বৈধতা দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘আগের সব চুক্তি বহাল রাখার মাধ্যমে বিগত সরকারের কাজগুলোকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। এটার প্রয়োজন কেন হলো? তাদের আইনের হাত থেকে রক্ষা করার দায় এ সরকার কেন নিতে গেল? আগের সরকার তাদের নিজস্ব লোকজনকে রাজনৈতিক সুরক্ষা দিয়েছে, তাদের হয়তো দায় ছিল। এ সরকার কেন সেটি দিতে গেল? দায়মুক্তি আইন রহিত করার অধ্যাদেশের মাধ্যমে বর্তমান সরকার আরেকটি কালো ইতিহাস সৃষ্টি করল।’
দেশের বিদ্যুৎ খাতের প্রায় অর্ধেক সক্ষমতা বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর। বিশেষ আইনের অধীনে বেসরকারি বিদ্যুৎ উদ্যোক্তারা কেন্দ্র নির্মাণ করে বিপিডিবিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এখনো অনেক বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ এ আইনের অধীনে চলমান রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা, এমনকি এ খাতের কয়েক ব্যবসায়ীও দাবি তুলেছেন, বিশেষ আইনের আওতাধীন প্রকল্পগুলোর অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চালানো হোক।
বেসরকারি বিদ্যুৎ উদ্যোক্তাদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের’ (বিআইপিপিএ) সাবেক এক শীর্ষ নেতা নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বলেন, ‘সরকার ইনডেমনিটি বাতিল করেছে। এটিকে ভালো-খারাপ কোনোটাই বলতে চাই না। তবে এ আইনের আওতায় যেসব প্রকল্প হয়েছে সেগুলোর কোনো কোনোটির বিষয়ে অস্বচ্ছতা, অনিয়ম থাকলে তার তদন্ত হওয়া উচিত। তাছাড়া যেসব প্রকল্প বাতিল বা স্থগিত করা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে পুনরায় দরকষাকষির সুযোগ রাখা যেতে পারে। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সরকার সাশ্রয়ী মূল্যে গ্যাস-বিদ্যুৎ কিনতে পারবে, সেটি না-ও হতে পারে। তাছাড়া এ আইনের আওতায় স্থগিত হওয়া প্রকল্পগুলোর বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাতে পারে। কারণ উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের নিশ্চয়তা চায় ও সুরক্ষা চায়।’
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি ও লোডশেডিং কমাতে শুরুতে বিশেষ আইনকে সমর্থন দিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এ আইনের মাধ্যমে দেয়া দায়মুক্তি নিয়ে আপত্তি ছিল শুরু থেকেই।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন জারির পর পরই তিন বছর মেয়াদি ১৭টি দ্রুত ভাড়াভিত্তিক (কুইক রেন্টাল) বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমোদন দেয় সরকার। এরপর অনুমোদন দেয়া হয় পাঁচ বছর মেয়াদি ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে।
অভিযোগ রয়েছে, জ্বালানি তেলচালিত এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হলেও ব্যবসায়ীদের বাড়তি সুবিধা দিতে এগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হয়। একপর্যায়ে সমালোচনার মুখে ‘বিদ্যুৎ নেই, বিল নেই’ শর্তে তাদের মেয়াদ বাড়ানো হয়। বর্তমানে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আর সচল নেই। জানা গেছে, বিশেষ আইনের আওতায় নির্মিত এসব কেন্দ্রকে শর্ত অনুযায়ী বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে বিপিডিবিকে।
বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, গত দেড় দশকে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা খরচ হয়েছে শুধু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভাড়ার পেছনে। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভাড়া পরিশোধে বিপিডিবির খরচ হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এটি ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপিডিবির খরচ হচ্ছে প্রায় ১১ টাকা। অথচ পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকা ২ পয়সায়। এতে আয়-ব্যয়ে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে বিপিডিবির।
বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১৪৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সচল রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৬২টি। আর বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৮১টি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর মধ্যে অন্তত ১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিশেষ আইনের আওতায় নির্মাণে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে জ্বালানি খাতে কূপ খনন, যন্ত্রাংশ ক্রয়, পাইপলাইন নির্মাণ, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ, এলএনজি আমদানির প্রকল্পগুলোও এ আইনের আওতায় করা হয়েছে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে বেসরকারি খাতে দুটি ভাসমান টার্মিনাল করা হয়েছে এ আইনে। এখন পর্যন্ত প্রায় পৌনে ২ লাখ কোটি টাকার এলএনজি আমদানি করা হয়েছে এ আইনের অধীনে। বিগত সরকারের একক সিদ্ধান্তে দরপত্র ছাড়াই আওয়ামী লীগ সরকারের পছন্দের লোককে কাজ দেয়া হয়েছে। এজন্য জ্বালানি খাতের প্রকল্পগুলো ব্যয়সাশ্রয়ী হয়নি বলে অভিযোগ বিশেষজ্ঞদের। সূত্র: বণিক বার্তা।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//