নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতি বাজেটে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আহরণ হয় কম। আবার এ রাজস্ব ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কোনো শৃঙ্খলা নেই। ব্যবহারকারীরা প্রকল্পের নামে এ অর্থ নয়ছয় করেন। এতে করের বোঝাও বাড়ছে। রাজস্বের যথাযথ ও দক্ষ ব্যবহার যাতে হয় সেজন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বকে ঠিক করতে হবে যে বাংলাদেশ ঋণ করে ঘি খাবে না।
সোমবার রাজধানীতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কারবিষয়ক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা বলেন। দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এ আলোচনার আয়োজন করে।
বৈঠকে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও সংস্কার কমিটির প্রধান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ‘এনবিআর থেকে নীতি বিভাগ আলাদা হয়ে গেলে ২৪ শতাংশ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আর ডিজিটালাইজেশন সম্পন্ন হলে প্রায় ৪৭ শতাংশ সমস্যার সমাধান ও সংস্কার হয়ে যাবে। বাকি থাকে কর বাড়ানো-কমানোর বিষয়। এগুলো প্রতি বছর বাজেটের আগে আলোচনা হয়। আমরা এ বিষয়েও উদ্যোগ নেব।’
এনবিআরকে আলাদা করে ক্ষমতা ও স্বাধীনতা দিতে হবে—উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এনবিআরের নীতি বিভাগ পলিসি ডিভিশন নামে আলাদা হচ্ছে। বিভাগটি শুধু নীতি তৈরি করবে। এটি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) অধীনে থাকবে। আর এনবিআর শুধু রাজস্ব সংগ্রহ করবে।’
বৈঠকে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান বলেন, ‘এনবিআর চেয়ারম্যান ও আইআরডি সচিব একই ব্যক্তি হওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়। অন্য দপ্তর থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চাপিয়ে দেয়া হয়।’
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘সরকারে যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব থাকবে, তাদের ঠিক করতে হবে যে আমরা ঋণ করে ঘি খাব না। অতিরিক্ত কর আদায় এই ঋণ করে ঘি খাওয়ার মধ্যেই পড়ে। এভাবে প্রকল্পের নামে রাজস্বের অর্থ নয়ছয় করা হচ্ছে।’
ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত করে করারোপ করা যাবে না উল্লেখ করে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও সংস্কার কমিটির সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রতি বছর অর্থবিলের নামে করহার পরিবর্তন করলে হবে না, স্থিতিশীলতা থাকতে হবে। প্রত্যক্ষ কর ও এসএমই খাতে ফোকাস করতে হবে।’
এনবিআরের সাবেক সদস্য ও সংস্কার কমিটির সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, ‘প্রকৃত ধনীদের কাছ থেকে কর আদায় হচ্ছে না। ফলে আন্ডারগ্রাউন্ড ইকোনমি ও অর্থ পাচার বাড়ছে।’
এনবিআরের সাবেক সদস্য ও সংস্কার কমিটির সদস্য ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘হোলিস্টিক ও ইন্টিগ্রেটেড ডিজিটালাইজেশন দরকার। করদাতাদের সচেতন করতে এনবিআরের কোনো উদ্যোগ নেই। ভিশনারি লিডারশিপ দরকার। পরিবর্তন আনতে হলে ১৫-১৬ হাজার কোটি টাকা লাগবে। সময় দিতে হবে কমপক্ষে চার বছর।’
এসব বিষয়ে অতীতে কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সমর্থন লাগবে। আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম কর (এটি) ও অগ্রিম আয়কর (এআইটি) সরাতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের করা শুল্ক নীতিমালা মানা উচিত।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//