Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Thursday, 13 Feb 2025 06:00
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়

ড: মিহির কুমার রায়: ঢাকার পটভূমি: ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির ফলে ঢাকা পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানী হয় এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্থান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ঢাকা স্বাধীন দেশের কেন্দ্রীয় রাজধানীর স্বিকৃতি  পায়। বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন শহর হিসাবে দুটি সিটি কপোরেশনের মর্যাদা দ্বারা পরিচালিত। এখানে উল্লেখ্য যে ১৮৬৪ সালে ঢাকা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৭৮ সালে কর্পোরেশনের মর্যাদা অর্জন করে যা বর্তমানে উত্তর ও দক্ষিন হিসাবে দুটি ভাগে বিভক্ত। ঢাকা ক্রমবর্ধনশীল শহর হিসাবে দুই কোটিরও বেশী  লোকের আশ্রয়ে পরিনত হয়েছে যা বর্তমানে বিশ্বের অষ্ঠমতম  এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের বিচারে বিশ্বের ২৮তম শহর। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৬ সালে যার কলেবর বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৩৩টি থানায় যেখানে প্রায় ২৩ হাজার পুলিশ কর্মকর্তা কাজ করছে। বর্তমানে ঢাকা এলাকায় ২৫ সংসদীয় আসন রয়েছে। এই ঢাকা শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৪.২ শতাংশ যা এশিয়া মহাদেশে সর্বোচ্চ এবং যার ইষ্টার্ন ইকোনমি রিভিও এর মতে  ২০২৫ সালের মধ্যে ঢাকার জনসংখ্যা দাড়াবে ২ কোটি ৫০ লক্ষের উপরে।

এমতাবস্তায় ব্যবসা, বানিজ্য,  শিক্ষা ও চিকিৎসার সন্ধানে ক্রমাগতভাবে জনসংখ্যার আগমন এই শহরের জন্য সেবা তথা অবকাঠামো খাতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের  জম্ম দিয়েছে যার মধ্যে অন্যতম প্রধান হল যানজট ও জলাবদ্ধতা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে সড়কের প্রসার না হওয়ায় যানবাহনের বিশাল বহর জানজটের সৃষ্টি করছে। তাছাড়াও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা বাড়ীঘর, হাটবাজার, অপর্যাপ্ত ও অনুন্নত সড়ক ব্যবস্থা, অনিয়ন্ত্রিত গাড়ী পাকিং ওভারব্রিজসহ আন্ডারপাসের অপ্রতুল জটের প্রধান কারন হিসাবে উল্লেখ করছেন বিশিষ্টজনেরা। এই সংকটগুলো একদিনে সৃষ্টি হয়নি এবং এর সমাধান একদিনেও সম্ভব নয়। কারন এগুলোর সৃষ্টি কিছু সরকার কর্তৃক এবং অনেকগুলো মানুষ কর্তৃক। 

এখন আন্দোলন কেন?
গত আগষ্ঠ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ নানা দাবিতে আন্দোলনে নামছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী,  চাকরিজীবী, রাজনৈতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের দাবি আদায়ের জন্য সড়কে নেমে আসায় শহর কার্যত অচল হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ছয় মাসে অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৩৬টি আন্দোলন সামলাতে হয়েছে। এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। সরকার কিছু ক্ষেত্রে আশ্বাস দিলেও বেশিরভাগ দাবি উপেক্ষিত থাকছে। ফলে আন্দোলন থামার বদলে আরও তীব্র হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দাবি-দাওয়া আদায় নিয়ে চলছে এমন অরাজক অবস্থা। এর পরিমাণ ও প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। তবে একথাও সত্য, গত দেড় দশকে পুর্বের শাসনামলে বিভিন্ন পেশাজীবীদের অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন। এখন রাস্তায় নামলে সরকার কিছু বলবে না, বরং দাবি পূরণের সুযোগ থাকবে—এমন আশাতেই অনেকে রাস্তায় নামতে আগ্রহী হচ্ছেন।

রাজধানীর শিশুমেলা মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে আহতরা। গত কয়েকদিনে রাজধানীতে অন্তত ২০টি বড় ধরনের বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সবশেষ গত রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে পাঁচ-ছয়টি পৃথক দাবিতে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নামেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আশ্বাস পেলেও এবার তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে বিক্ষোভ-অনশন করছেন। তারা মহাখালী, গুলশান ও বিমান বন্দর সড়ক অবরোধ করলে তীব্র যানজট দেখা দেয়। গত কয়েক দিনে রাজধানীতে অন্তত ২০টি বড় ধরনের বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হয়েছে। চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে রোববার হাইকোর্ট এলাকায় আন্দোলন করেন আওয়ামী লীগের শাসনামলে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা। উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবিতে টানা দুই দিন বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেছেন জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে আহতরা। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের সামনে অবরোধের পর রোববার সকালে তারা অবরোধ করেন শিশু মেলা মোড়। এতে শ্যামলী-আগারগাঁও সড়ক ছাড়াও মিরপুর রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওই সড়কের যাত্রী এম নুরুল আমিন গণমাধ্যমে বলেন, প্রায় আড়াই ঘণ্টা শিশু মেলা এলাকায় আটকে ছিলেন। এরপর মতিঝিল পৌঁছাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত অলিগলি হয়ে মিরপুরে নিজ বাসায় ফিরে গেছেন। দিনভর বিক্ষোভ করেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে আহতরা সন্ধ্যার পর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার পথে রওয়ানা দেন। পুলিশের বাধার মুখে তারা হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। মধ্যরাত পেরিয়েও তারা সেখানেই বিক্ষোভ করছিলেন। এদিকে চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা হাইকোর্ট মাজার চত্বরে বিক্ষোভ করেন। তাদের অভিযোগ,  রাজনৈতিক কারণে তারা চাকরি হারিয়েছেন। এখন সে চাকরি ফিরে পেতে চান তারা। আবার রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলেই ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডে’ জড়িতদের ‘সেফ এক্সিট’ দেওয়ার প্রতিবাদ ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে ইনকিলাব মঞ্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে মিছিল বের করে, যা হাইকোর্ট মাজার গেটে আটকে দেওয়া হয়। এছাড়াও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ছিল বেশ কয়েকটি কর্মসূচি। কেবল গত ১ জানুয়ারী নয়, প্রেস ক্লাব এলাকায় প্রতিদিনই বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলন চলছে। এতে যানজটে তোপখানা সড়ক স্থবির হয়ে যাওয়া এখন নিয়মিত চিত্র। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে এভাবে একের পর এক অবরোধ কর্মসূচির কারণে সাধারণ মানুষকে পড়তে হচ্ছে অসহনীয় দুর্ভোগে। কর্মজীবীরা সময় মতো অফিসে পৌঁছাতে পারছেন না, ব্যাহত হচ্ছে রোগী পরিবহন। নাগরিকদের ক্ষোভও বাড়ছে। অনেকে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন দীর্ঘপথ। ঢাকা শহরে ফুটপাতের যে দশা, সেখানে হাঁটার অভিজ্ঞতা কতটুকু সুখকর, তা নিশ্চয় বলার অপেক্ষা রাখে না।

আন্দোলন কি যানজটে জনদুর্ভোগের একমাত্র কারন:
সেটা আসলে একমাত্র কারন নয়। বিষয়টির আরও বিশ্লেষনের দাবি রাখে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের উৎস্য মতে ঢাকা শহরে যানবাহন চলাচলের জন্য বর্তমানে রাস্তা রয়েছে ২২৫০ কিলোমিটার যার মধ্যে এক লেনের রাস্তা ৩৮৬ কিলোমিটার, দু লেনের রাস্তা ১৪০৮ কিলোমিটার, চার লেনের রাস্তা ৪৩৪ কিলোমিটার যার মধ্য দিয়ে প্রতিদিন যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল করে ৫ লাখ ২৭ হাজার যার মধ্যে কেবল বিগত ৫ বছরে বেড়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বি.আর.টি.এ) এর সুত্র মতে রোড পারমিটের হিসাব ধরে ঢাকা শহরে বাস মিনিবাসের সংখ্যা ৫ হাজার ১০৩টি এবং জনসংখ্যাভিত্তিক বাসের প্রান্তিক দাড়ায় ৩০০০:২ অর্থ্যাৎ প্রতি তিন হাজার মানুষের জন্য বাস রয়েছে মাত্র ২টি। সাধারন হিসাবে দেখা যায় একটি বাস প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ জন যাত্রী বহন করে। একটি ব্যক্তিগত মালিকানার গাড়ী এক অথবা দুজন মানুষ চলাচলের জন্য যে স্থান দখল করে এবং দ্বিগুন স্থান দখল করা একটি বাসে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ জন যাত্রী চলতে পারে আর দ্বিতল বাস হলে এ সংখ্যাটি দ্বিগুন হবে। ঢাকায় যানজট ঠেকাতে শহরের চারটি ট্রাফিক ডিভিশনের ৩ হাজারের বেশী ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। দু সহশ্রাধিক ট্রাফিক কর্মকতার সাথে অধিক সংখ্যক আনসার সদস্য/কমিউনিটি পুলিশ নিরলস কাজ করার পরও যানজটের তেমন কোন সুফল আসেনি। রাজধানীর তেরটি পয়েন্টে ফোর লেন পদ্ধতি চালু ও ট্রাফিক পুলিশের কর্মতৎপরতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ ও যান কমাতে তেমন কোন সহায়ক ভুমিকা পালন করেনি। তারপরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও ব্যাংকের সময়সূচি পরিবর্তন করেও যানজট নিরসনের চেষ্টা করা হয়েছে। শহরকে সাতটি অঞ্চলে ভাগ করে মার্কেটসহ বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষনা করেও কোন সুফল আসেনি। শহরের বাকি অংশে লাঠি ও ট্রাফিক পুলিশের বাঁশী দ্বারা যানবাহন নিয়ন্ত্রনের কাজ চলছে। ঢাকা শহরের জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ ব্যাক্তি গাড়ী ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে থাকে এবং বাকী সাধারন মানুষের একমাত্র ভরসা ১০০ থেকে ২০০ সংস্থার বাস সার্ভিস তথা গনপরিবহন। বিশেষজ্ঞগনের মতে এক একটি কোম্পানীকে এক একটি রুটের বাস পরিচালনার দায়িত্ব দিলে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তথা সেবার মান আরও বাড়বে। ঢাকা মহানগরীর গনপরিবহন লক্ষ্যে একটিমাত্র পরিবহন সংস্থা গঠন করা দরকার। দেশের যানবাহনের মাত্র ০.১ শতাংশ বাস বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন (বিআরটিসি) পরিচালনা করে যাদের সংখ্যা এক হাজার আর ট্রাকের সংখ্যা একশত পঞ্চাশটি। কাজেই প্রাইভেট বাস সার্ভিস নিয়ন্ত্রন এবং বেশী সংখ্যক পাবলিক বাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে না পারলে যানজট কমানো সম্ভব না।

এই যানজটের গতিপ্রকৃতি নিয়ে অনেক লেখালেখি, টকশো, জনজীবনের দুর্ভোগ, ইত্যাদি প্রচারিত হলেও এর কোন সমাধান স্থায়ী যাচ্ছে না। আরও মজার ব্যাপার হলো যে ঢাকা শহরে বাস দুঃর্ঘটনা প্রতিদিনই কারও না কারও জীবন কেড়ে নিচ্ছে অথবা কাউকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরন করতে হচ্ছে। সে যাই হোক না কেন এই যানজটের আমাদের কর্মজীবনে কি প্রভাব ফেলছে তার উপর গবেষকগন তথ্য উপাত্ত পরিবেশন করছে। এতে বলা হচ্ছে আগে যেখানে যানবাহনের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ৪০ কিলোমিটার এখন যানজটের কারনে তা নেমে এসেছে ঘন্টায় ৫ কিলোমিটার যার ফলশ্রুতিতে প্রতিদিন ৫০ লাখ শ্রমঘন্টা নষ্ট হচ্ছে যার আর্থিক মূল্য ৩৭ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর একটি গবেষনায় দেখা যায় ঢাকার যানজট ৬০ শতাংশ কমানো গেলে প্রতি বছর ২২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব হতো। বিশ্বব্যাংক এর প্রতিবেদন বলছে যানজটের ঢাকা শহরে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘন্টা নষ্ট হয় এবং বিগত দশ বছরের ঢাকায় প্রতিদিনে যান চলাচল গতিবেগ ২১ কিলোমিটার থেকে ৭ কিলোমিটার নেমে এসেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম এই ঘনবসতির্পূণ শহরে ১৯৯৫ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার হয়েছে ৫০ শতাংশ, রাস্তাঘাট বেড়েছে ৫ শতাংশ আর যান চলাচল বেড়েছে ১৩৪ শতাংশ। আরও চিন্তার কারন এই যে সুষ্টভাবে যান চলাচল করতে যে কোন শহরের মোট আয়তনের যেখানে ২০ শতাংশ রাস্তা থাকা প্রয়োজন সেখানে ঢাকা শহরে আছে মাত্র ৭-৮ শতাংশের কাছাকাছি। উন্নয়ন কার্যক্রম ও সড়ক অবকাঠামো অপর্যাপ্ততায় রাজধানীর যানজট ক্রমেই অসহনীয় হয়ে উঠেছে। দেশের সার্বিক অর্থনীতিতেও এর প্রভাব এখন ক্রমেই দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনেও উঠে আসছে, অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণের কারণ হয়ে উঠছে অতিমাত্রায় যানজট। সর্বশেষ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস)  চলমান সম্মেলনে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, শুধু রাজধানীর যানজটের কারণেই প্রতিবছর প্রত্যক্ষ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় আড়াই শতাংশে। পরোক্ষ লোকসান যুক্ত হলে এ ক্ষতি পৌঁছায় ৬ শতাংশের কাছাকাছিতে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার যানজটের কারণে দেশের জিডিপিতে প্রতিবছর ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২ দশমিক ৫ শতাংশে। পরোক্ষ ক্ষতি যোগ করে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৮ শতাংশে। অর্থনীতির এ ক্ষতকে আরো গভীর করে তুলেছে রাজধানীর অপরিকল্পিত নগরায়ণ। এসব সমস্যা নিরসনে নীতি নির্ধারকদের উদ্দেশে অর্থনৈতিক কমিশন গঠনের মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়া চালুর সুপারিশ করেছেন অনেক গবেষক এবং তাদের ভাষ্য মতে, নগর প্রশাসনের হাতে নীতি নির্ধারণী ক্ষমতা দেয়া প্রয়োজন। এছাড়া বিকেন্দ্রীকরণ-সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। এ অবস্থা থেকে বের হতে হলে ঢাকার সঠিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও পরিবহন ব্যবস্থাপনা, পথচারী বান্ধব অবকাঠামো গড়ে তোলা, উন্নত গণপরিবহন প্রবর্তন, গণপরিবহনের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ, পার্কিং ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের পাশাপাশি সড়ক ব্যবহারকারীদেরও মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তাছাড়া ফুটপাত দখলমুক্ত করা ও অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে সড়কে যান চলাচলের পথ সুগম করতে হবে। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ করতে হবে, পর্যাপ্ত সংখ্যক আন্ডারপাস ফুট ওভারব্রিজ নির্মান করে তা জনগনকে ব্যবহারের উপযুক্ত করলে যানজট নিরসন সম্ভব হবে।

অন্তর্বর্তি সরকার কি করবে?
সরকারের ভাষ্য দেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে সব দাবি বাস্তবায়নযোগ্যও নয়। তবে সংকট নিরসনে কার্যকর আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা জরুরি। সরকার যদি দ্রুত সিদ্ধান্ত না নেয়, তবে আন্দোলন-অবরোধ ও যানজটের এই দুষ্ট চক্র চলতেই থাকবে। এতে রাজধানীবাসীকেও প্রতিদিন নতুন ভোগান্তির শিকার হতে হবে। একটি শহরে নাগরিকরা এত যন্ত্রণার ভেতর আর থাকতে পারে না। যারা আন্দোলন করছেন, তারা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করুন। কথায় কথায় রাস্তায় নেমে আসবেন না। কারণ আপনার দাবির কারণে অন্যকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আর যারা সরকারে আছেন, তারাও এসব বিষয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে উদ্যোগী হোন। রাস্তায় নামার আগেই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করুন। যুক্তি থাকলে দাবি মেনে নিন, অযৌক্তিক হলে বুঝিয়ে-শুনিয়ে ফিরিয়ে দিন। কিন্তু রাস্তায় নামার পথ বন্ধ করুন। 

এখানে উল্লেখ্য, যে সকল সমস্যা উদ্ভুত হয়েছে সেগুলো গনতান্ত্রিক সরকারই করবে। বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান কাজই হওয়া উচিত চলমান সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। গনতান্ত্রিক সরকারই বাকি সকল কাজগুলো সম্পন্ন করবে।

লেখক: অধ্যাপক (অর্থনীতি), সাবেক পরিচালক, বার্ড (কুমিল্লা), সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই/এসএএম//