Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Wednesday, 05 Mar 2025 06:00
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশের খাদ্য উৎপাদনের বিস্তার ঘটাতে চলতি অর্থবছর ব্যাংকগুলোকে ৩৮ হাজার কোটি টাকার কৃষি ও পল্লীঋণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথম ৭ মাসে ব্যাংকগুলো ১৯ হাজার ২১৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৫০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। যদিও এই সময়ে দুটি ব্যাংক কোনো ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। আর তিনটি ব্যাংকের ঋণ বিতরণের পরিমাণ ১০ শতাংশেরও কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) দুটি ব্যাংক কৃষি ও পল্লী খাতে কোনো ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। ব্যাংক দুটি হচ্ছে বেসরকারি খাতের পদ্মা ব্যাংক এবং বিদেশি ওরি ব্যাংক। এছাড়া অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে ১০ শতাংশেরও কম ঋণ বিতরণকারী ব্যাংকগুলো হচ্ছে, বেসরকারি খাতের মধুমতি ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং বিদেশি এইচএসবিসি। এছাড়া শরীয়াহ ভিত্তিক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক বিতরণ করেছে ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এর মধ্যে ১০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা থাকা ইউনিয়ন ব্যাংক ৭ মাসে মাত্র ৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকার কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণ করেছে। আর ৩৩ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা থাকা মধুমতি ব্যাংক বিতরণ করেছে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বা লক্ষ্যমাত্রার ৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এছাড়া বিদেশি এইচএসবিসি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে। ব্যাংকটির লক্ষ্য ছিল ২৮৫ কোটি। ৭ মাসে ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ২৫ কোটি টাকা।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট কাজে অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য মোট ঋণের অন্তত ২ শতাংশ কৃষি খাতে বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে। যেসব ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কৃষিঋণ বিতরণ করবে না, তাদের জরিমানার ব্যবস্থা রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে যেসব ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার অর্থ বিতরণে ব্যর্থ হবে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট তহবিলে ওই অর্থ জমা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এর ফলে প্রতি বছরই সাধারণ ঋণ বিতরণের পাশাপাশি বাড়ছে কৃষিঋণ বিতরণ। এ জন্য বছরের শুরুতে লক্ষ্যও ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। যাতে বছরের বারো মাস বিশেষ করে ফসল চাষের শুরুতে কৃষকরা সময় মতো ঋণ পান।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৮ হাজার কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে কৃষিঋণের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার কোটি টাকারও কম।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে বিতরণকৃত কৃষি ও পল্লীঋণের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৮ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলো ৭৮৩ কোটি এবং বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ১০ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা বলছেন, কৃষিঋণ বিতরণে পরিমাণের পাশাপাশি মানের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। যাতে সব ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণ করে সে জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেসব বাণিজ্যিক ব্যাংকের পল্লী অঞ্চলে নিজস্ব শাখা নেই, সেসব ব্যাংক ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার বা এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ করে সে ব্যাপারেও নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (এমআরএ) নিবন্ধিত ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার মাধ্যমে কৃষিঋণ বিতরণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুদ নির্ধারণেও এমআরএ নির্ধারিত সুদহারের চেয়ে বেশি সুদ না নিতে পারে সেজন্যও নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আলোচ্য সময়ে ২০ শতাংশের কম ঋণ বিতরণ করেছে মোট ১৪টি ব্যাংক। এর মধ্যে ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে শরীয়াহ ভিত্তিক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। আর ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ বিতরণ করেছে আইএফআইসি, সাউথইস্ট ব্যাংক ১৩ দশমিক শূন্য ৩, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ১৪ দশমিক ৪০, শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংক ১৭, এবং স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক বিতরণ করেছে ১৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এছাড়া সিটিজেন ব্যাংক ২০ এবং ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কৃষিঋণ বিতরণের পাশাপাশি কৃষকের ফেরত দেওয়া ঋণের হার সন্তোষজনক। আবার কৃষিঋণে খেলাপি কৃষকের হারও তুলনামূলক কম। তথ্য বলছে, কৃষিঋণে খেলাপির হার ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ। জানুয়ারি শেষে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৫৫ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ মাত্র ৪ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা বলছেন, কৃষকরা কখনো ঋণ জালিয়াতি করেন না। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে মাঝে মাঝে সমস্যায় পড়েন তারা। কিন্তু দেশের বৃহৎ শিল্প গ্রুপের মতো ঋণখেলাপির প্রবণতা তাদের মধ্যে একেবারেই নেই। তবুও কৃষকদের স্বল্প অর্থের ঋণ আদায়ে বেশি তৎপর ব্যাংকগুলো। তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে কৃষি খাতে বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে আদায় হয়েছে ২০ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। আর জানুয়ারি শেষে এই খাতে বকেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা।

অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসের সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)। জুলাই-জানুয়ারি মাসে মোট ৪ হাজার ৯১২ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। ১ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক। আলোচ্য সময়ে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ১ হাজার ৪১৪ কোটি, সোনালী ব্যাংক ৮৮৩ কোটি, ব্র্যাক ৬৫১ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ৬১৭ কোটি এবং পূবালী ব্যাংক বিতরণ করেছে ৬০৭ কোটি টাকা। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পল্লী ও কৃষিঋণ বিতরণ করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৫৪৫ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছর ব্যাংকগুলোকে লক্ষ্যমাত্রার নূ্ন্যতম ১৩ শতাংশ ঋণ মৎস্য খাতে দিতে হবে। প্রথম ৭ মাসে এই খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর লক্ষ্যমাত্রার অন্তত ১৫ শতাংশ ঋণ দেওয়ার কথা প্রাণিসম্পদ খাতে। আলোচ্য সময়ে পশুসম্পদ ও পোলট্রি খাতে বিতরণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ১২ দশমিক ২৭ শতাংশ। এছাড়া ৭ মাস শেষে দারিদ্র্য বিমোচনে ৭৩১ কোটি, শস্য খাতে ৯ হাজার ১০১ কোটি, কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ১৪৮ কোটি, সেচ যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ১৩৬ কোটি, শস্য গুদামজাত ও বিপণন খাতে ৬৭ কোটি এবং মৎস চাষে ২ হাজার ৯১০ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//