Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Thursday, 01 Jan 1970 06:00
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়

নরসিংদী প্রতিনিধি, বিনিয়োগবার্তা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নরসিংদী-১ আসনে পাল্টে যাচ্ছে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ। স্বীয় আসন ফিরে পেতে মরিয়া বিএনপি, আওয়ামীলীগও চায় যেকোন মূল্যে তা ধরে রাখতে। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছে ৩ জন, আর বিএনপির ২জন। তবে আসনটিতে বিএনপি’র মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত হলেও আওয়ামীলীগ থেকে কে মনোনয়ন পাবেন সেটাই এখন স্থানীয় রাজনীতিতে প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলের বেশ কয়েকজন নেতা পোষ্টার, বিল বোর্ড টাঙ্গিয়ে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আকাঙ্কায় ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর মধ্য দিয়ে প্রার্থী হবার কথা জানান দিচ্ছেন। আওয়ামীলীগের ৩ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও বিএনপির প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম্ মহাসচিব, জেলা বিএনপির সভাপতি, ডাকসুর সাবেক জিএস ও সাবেক এমপি খায়রুল কবির খোকন অনেকটাই নিশ্চিত।

এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নরসিংদী-১ (সদর) আসনে ব্যাপক প্রচারণা ও নির্বাচনী গণসংযোগ করছেন আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এরই মধ্যে ৭ জুলাই নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লে: কর্ণেল (অব:) মোঃ নজরুল ইসলাম হিরু (বীরপ্রতীক) এমপি, জেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। এদিকে স্বীয় আসন ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি। জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকন জামিনে মুক্তি পাবার পর থেকে প্রায়সই ছুটে আসেন নরসিংদীতে এবং জনগণের কাছে গিছে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। তিনি বর্তমান সরকারে বিরুদ্ধে কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে মিটিং মিছিল করে যাচ্ছেন।

পটভূমি: স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নরসিংদী ছিল ঢাকা জেলার আওতাধীন একটি থানা শহর। তখন এখানে সংসদীয় আসন ছিল মাত্র একটি। এ আসন থেকে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ট সহচর মোছলেহ উদ্দিন ভূইয়া সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৭৫’র পর দেশের পট পরিবর্তনের হলে ক্ষমতায় আসেন সেনা প্রধান জিয়াউর রহমান। ১৯৭৭ সাথে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসন আমলে থানা শহর থেকে নরসিংদী মহকুমা শহরে রূপান্তরিত করা হয়। তখনও সংসদীয় আসন ছিল মাত্র একটি। জিয়াউর রহমানের হত্যার পর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুর ছাত্তারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেশের সরকার প্রধান হন আর এক সেনা কর্মকর্তা লে: জে: হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ। ক্ষমাতায় এসে জাতীয় পাটি নামে তার একটি নিজস্ব দল গঠন করেন। তিনি দেশে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীয় করণের মাধ্যমে নরসিংদীকে জেলা হিসেবে রূপ দেয় এবং ৬টি উপজেলা গঠন করে ৫টি সংসদীয় আসন সৃষ্টি করে। এরশাদের শাসন আমলে তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি থেকে নরসিংদী-১ (সদর) আসন থেকে মেজর (অবঃ) সামসুল হুদা বাচ্চু সংসদ সদস্য পদে বিজয়ী হয়। পরে ১৯৮৬ জাতীয় পার্টি থেকে এড. মোস্তফা জামান বেবী মনোনয়ন পেয়ে সংসদ্য সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীকালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির প্রার্থী নরসিংদী জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি সামসুদ্দিন আহমেদ এছাক ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন এবং ২০০৩ সাল পর্যন্ত তার মৃত্যুর সময়কাল পর্যন্ত এ আসনটি তার দখলে থাকে। তার সময়ে নরসিংদীর এ আসনটিসহ পুরো নরসিংদী জেলা বিএনপির দুর্গ হিসাবে পরিচিতি ছিল। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোটের ব্যবধানে জেলা আওয়ামীগীগের তৎকালীন সভাপতি মোছলেহ উদ্দিন ভূইয়াকে পরাজিত করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি আওয়ামীগীগের মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট আসাদুজ্জামানকে পরাজিত করে দ্বিতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী সাবেক সচিব মোহাম্মদ আলীকে পরাজিত করে পূণরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় ২০০৩ সালে তিনি মারা যাওয়ায় উপ-নির্বাচনে ঢাকসুর সাবেক জি.এস. খায়রুল কবীর খোকন বিএনপির প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন। সামসুদ্দিন আহমেদ এছাকের মৃত্যুর পর নরসিংদী জেলা বিএনপি রাজনীতিতে টানাপোড়ন শুরু হয়। জেলা বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তার একটি অংশের নেতৃত্ব দেন খায়রুল কবীর খোকন এবং অপর অংশটির নেতৃত্বে ছিলেন মেজবাহ উদ্দিন ইরান ও মিয়া মোহাম্মদ সেলিম। সেই থেকে নরসিংদী জেলা বিএনপির অবস্থা নাজুক হতে থাকে।

জাতীয় নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার জটিলতায় ওয়ান এলিভেনের পর ২০০৮ সালে সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেঃ কর্নেল (অবঃ) মোঃ নজরুল ইসলাম হিরু (বীর প্রতীক) রাজনীতিতে এসেই তিনি আওয়ামী লীগের তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আসাদুজ্জামানকে টেক্কা দিয়ে আওয়ামীগীগের মনোনয়ন লাভ করেন। রাজনীতিবিদ না হয়েও একজন সেনা কর্মকর্তা নৌকার জোয়ারে বিজয়ী হন তিনি। দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে বিজয়ী হওয়ার পর নরসিংদীর তৎকালীন জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হত্যার ইস্যুতে নরিসংদী-৫ (রায়পুরা)’র এমপি সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুকে মন্ত্রী না করে এমপি হীরুকে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন আওয়ামীলীগের সর্বোচ্চ ফোরাম। পরবর্তীতে জেলার আওয়ামীলীগের আভ্যন্তরিন কোন্দলে সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু ও তৎকালীন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এড. আসাদোজ্জামান একাংশে এবং অপর দিকে বর্তমান পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী লেঃ কর্নেল (অবঃ) মো: নজরুল ইসলাম হীরু (বীর প্রতীক) ও জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন ভূঁইয়াসহ বেশ কয়েকজন জেলা আওয়ামীলীগের নেতাসহ বিভক্ত হয়ে যায়। নজরুল ইসলাম হিরু জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী হওয়ায় সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুকে কোন ঠাসা করে জেলার বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা কমিটি গুলো গঠণ করে তার পছন্দের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন পদে আসীন করেন। পরবর্তীতে জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে তাদের ভোটে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে আওয়ামীগীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন-বর্তমান পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামীগীগের সভাপতি লেঃ কর্নেল (অবঃ) মো: নজরুল ইসলাম হীরু (বীর প্রতীক), ফ্লোরিডা আওয়ামীগীগের উপদেষ্টা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্শিবাদপুষ্ট আইয়ুব খান (মন্টু) ও নরসিংদী-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান পোটন।

বিগত ইউপি নির্বাচনে সদর উপজেলার হাজীপুর ও শিলমান্দী ইউনিয়ন থেকে গত ইউপি নির্বাচনে নির্বাচিত চেয়ারম্যনদের মনোনয়ন না দিয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লে: কর্ণেল (অব:) মোঃ নজরুল ইসলাম হিরু ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়ে। তার মনোনয়নকে চ্যালেন্স করে আইয়ুব খান মন্টু হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তার ছোট ভাইয়ের দলীয় মনোনয়ন সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নিয়ে আসেন। অপর দিকে শিলমান্দির চেয়ারম্যান আব্দুল বাকিরও মন্ত্রীর মনোনয়ন দেওয়া প্রাথীকে চ্যালেন্স করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামীলীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে বিজয়ী হন। বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত প্রার্থী এড. আসাদুজ্জামানকে সমর্থন না দিয়ে নজরুল ইসলাম হিরু নির্বাচনে তার প্রতিদ্বব্ন্ধি হিসেবে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন ভূঁইয়াকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে মতিন ভূঁইয়া পক্ষে কাজ করেও এড. আসাদুজ্জামানের বিজয় ঠেকাতে পারেনি। এতে করে তিনি আওয়ামীলীগের বিভিন্ন নেতা কর্মীদের কাছে সমালোচিত হন। সেই ক্ষেত্রে নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীই চাচ্ছে নরসিংদী-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান পোটন এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করুক।

বর্তমানে নরসিংদী সদরে আওয়ামী লীগ তিনটি ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। যার একটি ধারা রয়েছে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লে: কর্ণেল (অব:) মোঃ নজরুল ইসলাম হিরু সাথে। আরেকটি রয়েছে আমেরিকার ফ্লোরিডা আওয়ামীলীগের সভাপতি আইয়ূব খান মন্টুর সাথে এবং অন্য আরেকটি বর্তমানে নরসিংদী-২ আসনের এমপি কামরুল আশরাফ খান পোটন’র সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লে: কর্ণেল (অব:) মোঃ নজরুল ইসলাম হিরু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা মার্কায় মনোনয়ন দেওয়ার পর আমি প্রথমে এমপি নির্বাচিত হয়েছি, ২য় বার এমপি নির্বাচিত হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব ভার অর্পণ করেন। আমি নরসিংদী সদর- ১ আসনে ব্যাপক উন্নয়ন মূলক কাজ করেছি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ৫৫০ কোটি টাকা অনুদান এনেছি, কাজগুলো চলমান রয়েছে। সামনের নির্বাচনে ইনশাল্লাহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিবেন।
অপরদিকে সাবেক ছাত্রনেতা ও আমেরিকার ফ্লোরিডা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা আইয়ূব খান মন্টু আওয়ামীলীগের মনোনয়ন লাভের প্রত্যাশায় কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট আসাদুজ্জামানের পক্ষে কাজ করে তাকে বিজয়ী করে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। নরসিংদী সদর-১ আসন নির্বাচনী এলাকায় তিনি গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। আইয়ুব খান মন্টু জানান, “আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি এবং অন্যায়ের কাছে মাথা নত করি না”। জেলা আওয়ামীলীগ থেকে ছিটকে পড়া দলের দু:সময়ের অনেক নেতাই আমার সাথে রয়েছেন। আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকার মাঝি হিসেবে মনোনয়ন দিবেন। নরসিংদীর সাধারন ভোটার ও আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের দাবি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি হিসেবে নতুন মুখ দেখতে চায়।

নরসিংদী- ২ (পলাশ) আসনের এমপি কামরুল আশরাফ খান পোটন নিজের আসনটি তার বড় ভাই সাবেক এমপি ডা. আনোরুল আশরাফ খান দিলীপকে ছেড়ে দিয়ে নরসিংদী- ১, আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে গুঞ্জণ শুনা যাচ্ছে। নরসিংদী সদর উপজেলার অনেক ত্যাগী আওয়ামী নেতাকর্মী ও জনগণের অনুরোধে নরসিংদী- ১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন নিতে পারেন বলে জানা গেছে।

তবে কামরুল আশরাফ খান পোটন জানান, অবহেলিত নরসিংদী সদরে ব্যাপক উন্নয়নের দরকার, সেই লক্ষ্যে নরসিংদী সদরের আ’লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা ও জনগন প্রায়ই আমার কাছে আসেন। তাদের অনুরোধ আমি যেন নরসিংদী সদর- ১ আসন থেকে আ’লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করি। কিন্তু আমি এব্যাপাওে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট মনোয়নের বিষয়ে কোন কথা হয়নি। আমি মনোনয়ন প্রত্যাশাও করিনি। যেহেতু আমার নির্বাচনী এলাকা নরসিংদী-২ আসনটি বড় ভাই সাবেক এমপি ডা. আনোরুল আশরাফ খান দিলীপ ওই আসন থেকে নির্বাচন করবে বলে ইচ্ছা পোষণ করছে। সেহেতু আমি ওই আসনে প্রার্থী হব না।

অপরদিকে বিএনপির এ আসনে প্রার্থী হবেন দলের যুগ্ম সহাসচিব সাবেক ঢাকসুর জি.এস. খায়রুল কবীর খোকন। তার প্রার্থীতা নিশ্চিত হলেও জেলা বিএনপির সহ সভাপতি সদর উপজেলা থেকে পরপর দুইবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান মনজুর এলাহীরও জনপ্রিয়তা রয়েছে বেশ। অর্থবিত্তেও তিনি অনেক সমৃদ্ধ। বিএনপির একটি অংশের নেতা কর্মীরা চাচ্ছেন মনজুর এলাহী এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করুক।

জানতে চাইলে সাবেক এমপি ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে নরসিংদীতে বিএনপি এখন সুসংগঠিত। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। খালি মাঠে আওয়ামীলীগকে গোল করতে দেওয়া হবে না। তবে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমার উপর আস্থা রেখেই আমাকে মনোনয়ন দিবে বলে আমার ধারনা। আর নির্বাচন যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তবে এই আসনে ধানের শীষের জয় হবেই ইনশাল্লাহ। বর্তমান সরকারের নেতা-কর্মীদের অত্যাচারে এলাকার মানুষ আজ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তাই তারা আবার বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়।

আলহাজ্ব মঞ্জুর এলাহি বলেন, নরসিংদী সদরবাসী আমার অত্যন্ত আপনজন ও পরিচিত। আমি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, প্রত্যেক ইউনিয়ন, গ্রাম-গঞ্জে আমার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। সদরবাসী পরিবর্তন এবং সেই সাথে নতুন মুখ চায়। সেই লক্ষ্যে দলনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে কাজ করে যাব।

জাতীয় পার্টি থেকে নরসিংদী জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শফিকুল ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমীর আ ফ ম আবদুস সাত্তার জোটের বাহিরে গিয়ে দল নির্বাচনে অংশ নিলে সে ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করবেন বলে জানা গেছে। এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবার ঘোষণা দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন গ্রীণহীল স্কুল এবং চিনিশপুর পাবলিক লাইব্রেরীর প্রতিষ্ঠাতা আমিনুল ইসলাম (আমিন স্যার)।

নরসিংদী জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শফিকুল ইসলাম’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, দল যদি চায় মহাজোটে থেকেই নির্বাচন করবে সেক্ষেত্রে আমি মহাজোটের প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন চাইব। যদি নরসিংদী-১ আসনটি মহাজোটের শরিক দলকে ছেড়ে দেয় তাহলে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে আমিই নির্বাচনে অংশ নিব। আর যদি দল জোট থেকে বের হয়ে নিজেদের দলীয় প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিও প্রার্থী হিসেবে আমার মনোনয়ন নিশ্চিত।

এদিকে নির্বাচনে আওয়ামীগীগে প্রার্থী যেই হোক না কেন বিএনপির প্রার্থীর সাথে তাকে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে হবে। কারণ বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিতি সদর আসনের মাধবদী এলাকা ও চরাঞ্চল বিএনপির ভোট ব্যাংক হিসেবেই পরিচিত ছিল। যদিও মাধবদীর বর্তমান মেয়র আওয়ামীলীগের এবং ওই এলাকার প্রত্যেকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদও আওয়ামীলীগের আয়ত্ত্বে আছে। অপরদিকে আওয়ামীগীগ সব কটি ইউনিয়নেই তাদের কমিটি সুসংঘটিত করেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হিরু জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী হওয়ায় জেলার বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা কমিটি গুলো গঠণ করে তার পছন্দের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন পদে আসীন করেন। পরবর্তীতে জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে তাদের ভোটে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে আওয়ামীগীগের মনোনয়নে তিনি তাদেও সার্পোট পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই তিনি যদি এ আসনে মনোনয়ন পান তবে খায়রুল কবির খোকনের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

সাম্প্রতিক সময়ের এক জড়িপে দেখা গেছে, এখনো পর্যন্ত এই এলাকাগুলোতে বিএনপির ব্যাপক নিরব ভোট রয়েছে। সাধারণ ভোটাররা মনে করেন নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে এবং আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তবে এ আসন থেকে বিএনপি প্রার্থী খায়রুল কবীর খোকন অথবা মনজুর এলাহী যে কেউই ধানের শীষ প্রতীক পান তার বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত। তবে আওয়ামী লীগ থেকে কে মনোনয়ন পাবে তার হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্ববন্ধিতা হবে এবং ভোটের ব্যবধান নির্ণয় হবে।

(এসএইচআর, এসএএম, ২৩ জুলাই ২০১৭)