প্রতিবেদক, বিনিয়োগবার্তা, ঢাকা: বিগত ২০১৬ সালে বিশ্বের পণ্য রপ্তানি ৩ শতাংশের মতো কমে গেছে। সব মিলিয়ে গেল বছর ১৫ দশমিক ৭১ ট্রিলিয়ন অথবা ১৫ লাখ ৭১ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বিভিন্ন দেশ। তার আগের বছর পণ্য রপ্তানি ছিল ১৬ দশমিক ২০ ট্রিলিয়ন ডলার।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ ২০১৭’ প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে বৈশ্বিক পণ্য রপ্তানি গত বছর কমে যাওয়ার জন্য জ্বালানি ও খনিজ পণ্যের মূল্য হ্রাসকে দায়ী করা করেছে। সে জন্য গত বছর জ্বালানি ও খনিজ পণ্য রপ্তানি ১৪ শতাংশ কমেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর ১৫ দশমিক ৭১ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির ৫৩ শতাংশ ১০টি দেশের হাতে। অন্যদিকে ৪১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ। বৈশ্বিক মোট পণ্য রপ্তানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭০ শতাংশ বা ১১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার শিল্পজাত পণ্য রপ্তানি। এ ছাড়া কৃষিপণ্য ১০ শতাংশ, জ্বালানি ও খনিজ ১৩ শতাংশ এবং অন্যান্য পণ্য ৪ শতাংশ রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে শিল্পজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে ২ শতাংশ। কৃষিপণ্যের রপ্তানি ১ শতাংশ বেড়েছে। এদিকে ১১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের শিল্পজাত পণ্যের রপ্তানির মধ্যে ২ শতাংশ লোহা ও ইস্পাত, ১২ শতাংশ রাসায়নিক, ১১ শতাংশ অফিস ও টেলিকম যন্ত্রপাতি, ৯ শতাংশ অটোমোবাইল, ৫ শতাংশ পোশাক ও বস্ত্র এবং ৩৪ শতাংশ অন্যান্য পণ্য আছে।
কৃষিপণ্য রপ্তানিতে শীর্ষে আছে ২৮ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গত বছর ইইউ ৫৯ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি করেছে। পরের শীর্ষ নয়টি দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, চীন, কানাডা, ইন্দোনেশিয়া, আর্জেন্টিনা, থাইল্যান্ড, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। কৃষিপণ্যের মতো জ্বালানি ও খনিজ পণ্য রপ্তানিতে শীর্ষস্থানে ইইউ। তারপরের অবস্থানে আছে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নরওয়ে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন ও কাতার। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি কমেছে রাশিয়া ও কাতারের যথাক্রমে ৩৩ ও ৩২ শতাংশ। সে জন্য রপ্তানিতে কাতার সপ্তম থেকে দশম স্থানে চলে গেছে।
ইইউ গত বছর ১২ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে লোহা ও ইস্পাত রপ্তানি করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীন রপ্তানি করেছে ৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পণ্য। পরের অবস্থানে আছে জাপান, কোরিয়া, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, ভারত, ব্রাজিল ও ইউক্রেন। অন্যদিকে চীন গত বছর সর্বোচ্চ ৫৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের অফিস ও টেলিকম যন্ত্রপাতি রপ্তানি করেছে। তবে তাদের রপ্তানি ২০১৫ সালের চেয়ে ৮ শতাংশ কমেছে। অফিস ও টেলিকম পণ্য রপ্তানিতে পরের শীর্ষ অবস্থানে আছে ইইউ, হংকং, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, তাইওয়ান, মেক্সিকো, জাপান ও মালয়েশিয়া।
অটোমোবাইল রপ্তানিতে বরাবরের মতো এগিয়ে ইইউ। গত বছর ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে ৬৮ হাজার ২০০ কোটি ডলারের মোটরযান রপ্তানি করেছে ২৮ দেশের এই জোট। পরের অবস্থানে থাকা জাপান রপ্তানি করেছে ১৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের মোটরযান। তাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ। মোটরযান রপ্তানিতে পরের শীর্ষ দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, কানাডা, কোরিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, তুরস্ক ও ভারত। গত বছর ভারত ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের মোটরযান রপ্তানি করেছে। তাদের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ।
বস্ত্র রপ্তানিতে চীন শীর্ষে। পরের দুই অবস্থানে আছে ইইউ ও ভারত। ভিয়েতনাম অবিশ্বাস্যভাবে শীর্ষ দশের মধ্যে চলে এসেছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীন প্রথম। দ্বিতীয় ও তৃতীয় যথাক্রমে ইইউ ও বাংলাদেশ। তবে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। গত বছর শীর্ষ ১০ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। গেল বছর বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার।
(এসএএম/ ০২ আগস্ট ২০১৭)