প্রতিবেদক, বিনিয়োগবার্তা, ঢাকা: রাষ্ট্রীয় টেলিফোন সংস্থা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) এর কাছে বকেয়া রাজস্বের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)-মূল্য সংযোজন কর শাখা নিরীক্ষার মাধ্যমে কম রাজস্ব পরিশোধের এ তথ্য উৎঘাটন করেছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি টেলিফোন কলের বিপরীতে গ্রাহক থেকে ভ্যাট আদায় করলেও সঠিকভাবে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি। পরে প্রতিষ্ঠানটির দাখিল করা দাখিলপত্র (ভ্যাট রিটার্ন) অডিট করে এ বিপুল পরিমাণ বকেয়া ফাঁকি উৎঘাটন করা হয়।
বিপুল পরিমাণ এ বকেয়া রাজস্ব আদায়ে ২০ সেপ্টেম্বর বিটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দিয়েছে এলটিইউ। রাজস্ব পরিশোধ না করা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র জানায়, বিটিসিএল এর মূসক নিবন্ধন নং ৯০৪১০৭৯৫৭৩। প্রতিষ্ঠানটির ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মূসক সংক্রান্ত কার্যক্রম নিরীক্ষা করা হয়।
নিরীক্ষায় ২০১২-১৩ থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৭৯ কোটি ৩৮ লাখ ৬০ হাজার ২৭১ টাকা ৮৬ পয়সার কম রাজস্ব পরিশোধের তথ্য উৎঘাটন হয়। এরমধ্যে ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের সিএ ফার্মের প্রতিবেদন ও দাখিলপত্রে বিক্রয়ের সাথে বিপুল পরিমাণ পার্থক্য পাওয়া যায়।
এতে প্রতিষ্ঠানটি মূসক হিসেবে ৮৪ কোটি ৯ লাখ ৪২ হাজার ৬০১ টাকা ৩৫ পয়সা দাখিলপত্রে গোপন করে ফাঁকি দিয়েছে বা কম পরিশোধ করেছে। এছাড়া একই সময় প্রতিষ্ঠানটি স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে ৪৭ লাখ ১১ হাজার ৯০০ টাকা ৩২ পয়সার মূসক পরিশোধ করেনি।
একই সময় প্রতিষ্ঠানটি ২৯৪ কোটি ৮২ লাখ ৫ হাজার ৭৭০ টাকা ১৯ পয়সার উৎসে মূসক গোপন করে পরিশোধ করেনি বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সূত্র আরও জানায়, মাত্র ৪ অর্থবছরে বিপুল পরিমাণ বকেয়া রাজস্ব পরিশোধে মূসক আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫৫(১) অনুযায়ী প্রাথমিক দাবিনামা জারি করেছে এলটিইউ। দাবি অনুযায়ী জবাব বা রাজস্ব পরিশোধ না করা হলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
ভিওআইপি ব্যবসায় সহায়তার মাধ্যমে প্রায় ৬০৮ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে সংস্থাটির সাবেক পাঁচ এমডিসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে ৪টি মামলাও করে দুদক।
বিটিসিএল এর হিসাব অনুযায়ী, ১৪ লাখ ৬০ হাজার সংযোগ সক্ষমতার বিপরীতে রয়েছে মাত্র ৭ লাখ ৮৫ হাজার সংযোগ। এর মধ্যে বেশিরভাগ লাইন বিকল।
আগে প্রতি মাসে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব আয় ৪৫-৫০ কোটি টাকা হলেও বর্তমানে তা ২১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। রাজস্ব আয়ের বড় অংশই আসছে লাইন ভাড়া থেকে। প্রতি মাসে প্রায় ১১ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয় শুধু লাইন ভাড়া থেকে। বাকিটা কল চার্জ থেকে।
(এসএএম/ ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭)