প্রতিবেদক, বিনিয়োগবার্তা, ঢাকা: নীতিনির্ধারকদের বলিষ্ঠ ভূমিকার অভাবে দেশে কার্যরত বহুজাতিক কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসছে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ডঃ এম খায়রুল হোসেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে কার্য়রত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আনতে অনেক দিন ধরেই আলাপ আলোচনা চলছে। তাদেরকে বাজারে আনতে আইনি সংস্কারেরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এসব বিষয়ে নীতিনির্ধারনী মহলের বলিষ্ঠ ভুমিকা নিতে হবে। তাদের বলিষ্ঠ ভুমিকা ছাড়া এসব কোম্পানিকে বাজারে আনা যাবে না।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্য পূরণ করতে হলে পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করতে হবে।
‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ – ২০১৭’ উপলক্ষ্যে রাজধানীতে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দি ইন্সটিটিউট অফ কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) এ সেমিনারের আয়োজন করে। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে এ সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী, ড. স্বপন কুমার বালা , ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান প্রমুখ।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আইসিএমএবি সভাপতি জামাল আহমেদ চৌধুরী। সমাপনী বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান খান।
ডঃ এম খায়রুল হোসেন বলেন, পুঁজিবাজারে উঠানামা থাকবে- এটা স্বাভাবিক। এ বাজারে ঝুঁকি নিয়েই বিনিয়োগ করতে হবে। আর ঝুঁকি নেওয়ার আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। জেনে বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যত বড় বড় প্রকল্প চলমান আছে; অর্থবাজার তার জন্য যথেষ্ট না। এর জন্য পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করতে হবে। এ বাজারকে ব্যবহার করলেই বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে পারবে।
খায়রুল হোসেন বলেন, ২০১০ সালের ধ্বসের পর বাজারে অনেক সংস্কার হয়েছে। কিন্তু এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আসেনি। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শিক্ষার অনেক বড় ঘাটতি আছে। এর সমাধানের জন্য আমরা দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছি।
তিনি বলেন, নিজের টাকা নিজেকেই পাহারা দিতে হবে। এর জন্য পড়াশুনার বিকল্প নেই। যার জ্ঞানের গভীরতা যত বেশি হবে, তিনি তত ভালো করতে পারবেন। তবে আইনগত কোনো সমস্যা থাকলে বিএসইসি তার সমাধান করবে।
মূলপ্রবন্ধে আরিফ খান বলেন, বিনিয়োগের কয়েকটি জায়গা আছে। তার মধ্যে হলো আবাসন, স্বর্ণ, ফিক্সড ইনকাম বিনিয়োগ ও পুজিবাজার। এর মধ্যে গত কয়েক বছরে ব্যপক হারে আবাসন, স্বর্ণ , ফিক্সড ইনকাম বিনিয়োগে খারাপ পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে পুঁজিবাজার গত ৩ বছরের গড় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
তিনি বলেন, গত ৮ বছরের হিসাব করলে দেখা যায়, পুঁজিবাজারে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে আমাদের বিনিয়োগকারীরা ৭ দিনেই রিটার্ন চান। ফলে তারা লোকসান করে। পুঁজিবাজার হলো দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের জায়গা। যারা এভাবে কররবে তারাই এখান থেকে ভালো মুনাফা নিতে পারবে।
অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, ২০১০ সালের ধ্বসের পর এই কমিশন বাজারে ব্যাপক সংস্কার করেছে। ফলে আ্ইওস্কোর ১৫০টি দেশের মধ্যে ৯৯ তম অবস্থানে আসতে পেরেছে। পুঁজিবাজারকে একটি স্থিতিশীয় জায়গায় দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের পুঁজিবাজার অনেক সম্ভাবনাময়। এখান থেকে টাকা নিয়ে দেশের শিল্পায়ন করার যথেষ্ট সুযোগ আছে।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের ক্ষুদা বুঝতে হবে। এ বাজারে নতুন নতুন প্রোডাক্ট চালু করা অতীব জরুরী। এসব প্রোডাক্ট চালু করার জন্য প্রধান বাজার হিসাবে ডিএসইকে বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখতে হবে। ডিএসইর দাবির প্রেক্ষিতে কমিশনসহ সরকারের নীতিনির্ধারকরা বাজারের কলেবর আরও বড় করতে কাজ করবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতির আকারের তুলনায় আমাদের পুঁজিবাজারের সাইজ খুব বড় নয়। এ বাজারকে বড় করার জন্য নতুন প্রোডাক্টের কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া যেকোনো উপায়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে হবে। এসব কোম্পানির প্রতি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যথেষ্ট আকর্ষণ রয়েছে। আর এসব কোম্পানি বাজারে আসলে পুঁজিবাজারে আরও বিনিয়োগকারী সম্পৃক্ত হবে। এরফলে জাতীয় অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারে অবদান বাড়বে।
(এসএএম/ ০৪ অক্টোবর ২০১৭)