দেশে এখন সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক বাণিজ্যিক ব্যাংক চালু রয়েছে; যা দেশের অর্থনীতির আকার এবং চাহিদার তুলনায় অধিক।
এরইমধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত নতুন করে আরও তিনটি ব্যাংক অনুমোদনের কথা জানিয়েছেন।
নানা অভিযোগের কারনে চতুর্থ প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংকের বিভিন্ন অনিয়ম খতিয়ে দেখতে আরও আগেই পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে নানা অভিযোগের কারনে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামীলীগ নেতা মহীউদ্দিন খান আলমগীর। তার সাথে ব্যাংকটির নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক মাহাবুব চিশতীকেও পদত্যাগ করতে হয়েছে।
আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে কয়েক বছর আগে ছয়টি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া সেই সমস্ত অনুমোদন দেয়া নিয়ে রয়েছে বিস্তর সমালোচনা। দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে যখন এত সমালোচনা তখন নতুন করে তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে রয়েছে নানান প্রশ্ন।
এদিকে সম্প্রতি ব্যাংকিং খাতে পরিবারতন্ত্রকে সুবিধা দিতে একটি আইনের সংশোধন হতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়ে একটি বিল সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি চূড়ান্ত করেছে।
প্রস্তাবিত আইনুযায়ি, যে কোন বেসরকারি ব্যাংকে একই পরিবারের চারজন সদস্য পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন- এই ধরণের আইনি পরিবর্তনের সুযোগে ব্যাংকিং খাতে লুটপাট ও চরম অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি হতে পারে।
নতুন আইনটি পাশ হলে সেটা দেশের ব্যাংকিং খাতকে কোনদিকে ধাবিত করবে তা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
তাদের মতে, স্বাধীনতার আগে ২২ পরিবার নামে পরিচিত ছিল কতিপয় ধনী যাদের কাছে দেশের শতকরা ৮০ ভাগ সম্পদ কুক্ষিগত ছিল এবং তারা প্রত্যেকে ব্যাংকের মালিক ছিলেন। বঙ্গবন্ধু এবং বাঙালিরা সে ২২ পরিবারের বিরোধিতা করেছিল। এখন কি আবার ২২ পরিবারতন্ত্রে ফিরে গেলে ভালো হবে?
এর আগে যখন নয়টি ব্যাংক দেয়া হয়েছিল তখনও বিশ্লেষকরা বাংলাদেশের অর্থনীতির যে আকার সেখান থেকে আর ব্যাংক দেয়া ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেছিলেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা গেছে, নতুন ওই ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটিই মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। আবার অনেকগুলোর ফান্ড সংকট তীব্র আকার ধারন করেছে। অনেকগুলো আবার খেলাপী লোনের কারনে বেকায়দায় রয়েছে। এসব বিষয়ে সরকার কাজ করছে বলেও অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী এর আগেও অনেক সময় স্বীকার করেছেন এতগুলো ব্যাংক অবশ্যই বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বাড়তি হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে এসবের অনেকগুলোই আলাদা আলাদা অপারেশন করতে অসফল হয়ে কয়েকটি মিলে একীভূত হবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এর বার্ষিক সেমিনার ও গবেষণা প্রতিবেদনেও এ বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
এই রকম একটা পরিস্থিতিতে আবারো তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়াটা কতখানি যুক্তিযুক্ত – তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সার্বিক অবস্থা বিচার বিশ্লেষণ না করে আযাচিত এসব ব্যাংকের অনুমোদন ক্ষুদ্র অর্থনীতির দেশে অনৈতিক প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করবে। তাই এ বিষয়ে সরকারের আরও ভাবনা চিন্তা করা উচিত বলে মনে করেন তারা।
(বিনিয়োগবার্তা/ ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭)