বিনিয়োগবার্তা ডেস্ক, ঢাকা: মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে আর পেরে উঠলেন না দেশ বরেণ্য সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলী আকবর রুপু ।বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টা ৪০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে তার মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন গীতিকার লিটন অধিকারী রিন্টু।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন আলী আকবর রুপু। তার হার্ট ও কিডনিতেও সমস্যা ছিল। গত শুক্রবার স্ট্রোক হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে আইসিউতে রাখা হয়েছিলো। আজ সকালে আবার স্ট্রোক হয় তার। সেখান থেকে আর ফিরে আসতে পারলো না সে। আমার অতিপ্রিয় বন্ধুটি চিরতরের মতো বিদায় নিয়ে চলে গেল। তার বিদেহি আত্মার জন্য দোয়া চাই সবার কাছে।’
এদিকে আলী আকবর রুপুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সংগীতাঙ্গনে। অনেকে ছুটে যাচ্ছেন ইউনাইটেড হাসপাতালে। কেউ কেউ ফেসবুকে রুপুর জন্য জান্নাত কামনায় প্রার্থনা করে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী নারগিস আকবর, পুত্র সিডনি ও একমাত্র মেয়ে ফারিয়া নাজসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
সংগীতে আলী আকবর রুপুর শুরুটা গিটারিস্ট ও কিবোর্ড বাদক হিসেবে। ১৯৮০ সালে ‘একটি দুর্ঘটনা’ অ্যালবাম দিয়ে অডিও গানে তার অভিষেক ঘটে। প্রথম অ্যালবামেই তিনি বাজিমাত করেন। গানগুলো বেশ প্রশংসিত হয়।
১৯৮২ সালের দিকে ‘উচ্চারণ’ ব্যান্ডে কিছুদিন গিটার ও কি-বোর্ড বাজিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে উচ্চারণ ছেড়ে দেন। তারপর ‘উইন্ডস’ নামে একটি ব্যান্ড গঠন করেছিলেন।
১৯৮৪ সালে মালেক আফসারী পরিচালিত ‘রাস্তার ছেলে’ ছবিতে গান করে জনপ্রিয়তা পান এ সুরকার। মাত্র ছয়টি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন তিনি। আব্দুল্লাহ আল মামুনের ‘দুই বেয়াইর কীর্তি’ তার সংগীত পরিচালনায় সর্বশেষ চলচ্চিত্র।
তবে আলী আকবর রুপু দেশের সর্বত্র পরিচিতি পেয়েছিলেন বিটিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র হাত ধরে। প্রায় দুই যুগ ধরে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র অসংখ্য গানের সুর করছেন তিনি। হানিফ সংকেতের মুখে অনুষ্ঠানটির প্রতি পর্বে আলী আকবর রুপুর নাম শোনাটা হয়ে উঠেছিলো নিয়মিত বিষয়।
আলী আকবর রুপুর সুর ও সংগীত পরিচালনায় অসংখ্য গান জনপ্রিয় হয়েছে। গানের তালিকায় রয়েছে সাবিনা ইয়াসমিনের ‘প্রতিটি শিশুর মুখে হাসি’, এন্ড্রু কিশোরের ‘পদ্ম পাতার পানি নয়’, মুরাদের ‘আমি আগের ঠিকানায় আছি’, কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া ‘একদিন কান্নার রোল পড়বে আমার বাড়িতে’, ‘যারে ঘর দিলা সংসার দিলা রে’, ‘দস্যু যেমন মুখোশ পরে প্রবেশ করে ঘরে’, ‘দরদিয়া’, ‘এ অনিশ্চয়তা’, ‘এ পশলা বৃষ্টি’, শাকিলা শর্মার ‘তোমাকে দেখলেই মৌনতা ভুলে যাই’, সাবিনা ইয়াসমিন, কনক চাঁপা ও সামিনা চৌধুরীর ‘সব চাওয়া কাছে পাওয়া’, নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর ‘কবিতার মতো মেয়েটি, গল্পের মতো ছেলেটি’, সামিনা চৌধুরীর ‘জানতে চেয়ো না কোন সে বেদনাতে’, দিনাত জাহান মুন্নীর ‘পুরোনো কাপড়ের মতো আমি আজ অবহেলিত’, মৌটুসীর ‘বারে বারে পোড়া বাঁশি এত রাতে আর ডেকো না’ ইত্যাদি।
এছাড়াও তিনটি টিভি চ্যানেলের উদ্বোধনী সংগীত তৈরি করেছেন তিনি। গানগুলো হলো একুশে টিভির ‘নব শতকের সম্ভাবনার দিনে’, এনটিভির ‘বাংলাদেশর বিজয়ের আলো জ্বেলে’ আর এটিএন বাংলার ‘দিনরাত এটিএন এশিয়া ইউরোপে’।
সর্বশেষ বেসরকারি টেলিভিশন বাংলাভিশনে কর্মরত ছিলেন আলী আকবর রুপু।
(এম এস/ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮)