Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়
Saturday, 07 Apr 2018 06:00
Biniyougbarta | বিনিয়োগবার্তা: ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-বিনিয়োগের খবর প্রতিদিন সবসময়

দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে দুই যুগেরও অধিক সময় ধরে কাজ করছেন মোহাম্মদ হাফিজ। দীর্ঘ এ পথচলায় তিনি পুঁজিবাজারের অনেক চড়াই-উৎরাই দেখেছেন। নিজ মালিকানায় তিনি পরিচালনা করছেন ‘এএএ ফাইন্যান্স এনড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড’ নামক একটি মার্চেন্ট ব্যাংক। এছাড়া ‘স্টক এন্ড বন্ড’ নামের একটি সিকিউরিটিজ হাউজেরও স্বত্তাধিকারি তিনি। দেশের মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি হিসাবেও সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন মোহাম্মদ হাফিজ।

সম্প্রতি বিনিয়োগবার্তার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে নিজের অভিজ্ঞতা ও দেশের পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন মোহাম্মদ হাফিজ। পাঠকদের উদ্দেশে তার ওই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

বিনিয়োগবার্তা: পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলুন। 

মোহাম্মদ হাফিজ: পুঁজিবাজার সবসময়ই পরিবর্তনশীল। এখানে বছরের বিভিন্ন সময়ই শেয়ার দর বাড়ে, আবার কখনো কখনো কমে। আর এটিই হচ্ছে পুঁজিবাজারের ধর্ম। পৃথিবীর সব শেয়ারবাজারেই এ ধরনের প্রবণতা দেখা যায়। গতবছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে পুরোসময় জুড়েই দেশের পুঁজিবাজার স্থিতিশীল অবস্থায় ছিল। বছরের প্রথম দিকে আবার বাজার একটু সফট দেখা গেছে। এখন আবার উত্থান প্রবণতায় ফিরে আসছে। এ বাজার আসলে শুধু নীতি নির্ধারকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এর সঙ্গে বিভিন্ন খাতের রেগুলেটরি বডি জড়িত; সরকারের নীতি জড়িত; আর্থিক খাতের সব বিষয়াদি জড়িত। সবমিলিয়েই এ বাজার চলছে। রেগুলেটরি বডির অনেক সিদ্ধান্ত বিভিন্ন সময় বাজারে এ্যাফেক্ট করে। তাই সব রেগিুলেটরি বডিকেই এ বাজার নিয়ে সচেতন হতে হবে। ক্ষণে ক্ষণে নীতি বা বিধি-বিধান পরিবর্তনে বাজারে নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ বাজারকে শক্তিশালী ভীতের ওপর দাড় করাতে সকল পক্ষের সমন্বয় ও সহযোগিতা জরুরী।

বিনিয়োগবার্তা: এ বছরের শুরু থেকেই বাজার টালমাটাল। এর কারন কি?

মোহাম্মদ হাফিজ: দেখুন, ডিসেম্বর মাসে বড় কোম্পানি বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা একাউন্টস এডজাস্ট করে, প্রফিট টেকিং করে। এ কারনে বাজারে কিছু প্রভাব পড়ে। কিন্তু গতানুগতিক হিসাবে জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে তারা আবার বাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু এ বছর আমরা তেমন দেখিনি। আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু নীতির কারনে এসব প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে ভয় পাচ্ছে। নতুন করে বাজারে বিনিয়োগে তাদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। মাঝখানে আবার বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে কিছুদিন বাজারে শঙ্কা তৈরী হয়েছিল। এখন আবার স্ট্যাটেজিক পার্টনার ইস্যুতে বর্তমানে বাজার নমনীয় হয়ে আছে। স্টাটেজিক পার্টনার নিতে ইতোমধ্যে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ বিভিন্ন দরপ্রস্তাব বিচার বিবেচনা করে চীনা কনসোর্টিয়ামকে বেছে নিয়েছে। তারা চীনের প্রস্তাবে সায় দিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতে পাঠিয়েছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। এ বিষয়টিও বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এরফলে বাজারের বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার ইমেজও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। স্টাটেজিক পার্টনার একটি বড় ইস্যু। বড় বড় বিনিয়োগকারীরা এ বিষয়টি নিয়ে ভাবছে। কারন এই বাজার অত্যন্ত স্পর্শকাতর জায়গা। দেশে

র যেকোন ধরনের বড় ইস্যু এ বাজারে প্রভাব ফেলে।এ বিষয়টির দ্রুত সুরাহা হওয়া উচিত বলেও আমার কাছে মনে হয়।

বিনিয়োগবার্তা: বড় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়?

মোহাম্মদ হাফিজ: আমাদের বাজারে বড় কোম্পানি বা ভাল মৌলভিত্তির কোম্পানির খুবই অভাব। এখানে সম্প্রতি যেসব বড় কোম্পানি আসতে আবেদন করেছে, তাদের অনেক অভিযোগ রয়েছে। একটি কোম্পানি বড় হতে একদিন বা দুদিনে হয় না। বছরের পর বছর ধরে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ধীরে ধীরে তারা বড় হয়। এসব কোম্পানির হাজার কোটি টাকা পেইডআপ ক্যাপিটাল। অথচ, পুঁজিবাজার থেকে ২০/৫০ কোটি তুলতে তাদের নানা বিরম্বনায় পড়তে হয়। একটি বড় কোম্পানির শ্রমিক কল্যান তহবিলের টাকা নিয়ে তদন্ত করা হয়; যা ক্ষেত্র বিশেষে হাস্যকর। এসব হয়রানীর কারণে বড় কোম্পানিগুলো বাজারে আসতে নিরুৎসাহিত হয়। এছাড়া প্রসপেক্টাস জমা দেওয়ার সময় একটি নির্দিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন বা নির্ধারিত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা নিয়ে আসে কোম্পানিগুলো।আইপিও অনুমোদনের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে তারা বিকল্প অর্থায়নের মাধ্যমে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ফেলে। কারণ বড় কোম্পানিগুলো কোনোভাবেই তাদের বিজনেস গ্রোথকে বাধাগ্রস্থ করতে চায় না। এতে তার ব্যবসায়িক সুনাম যেমন ঠিক থাকে, তেমনি বিজনেস প্রসারিতও হয়। তা আর একজন নিরুৎসাহিত হলে অন্যজনও বাজারবিমুখ হয়। এক পর্যায়ে বড় কোম্পানিগুলো বাজারে আসতে চায় না।

 

বিনিয়োগবার্তা: রাষ্টায়ত্ত ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর তালিকাভূক্তি নিয়ে বলুন।

মোহাম্মদ হাফিজ: রাষ্টায়ত্ত ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্তি নিয়ে অনেক দিন ধরেই আলোচনা চলছে। মাননীয় অর্থমন্ত্রীও এ বিষয়ে বহুবার তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না।  সরকারের নীতিনির্ধারনী মহলের নির্দেশনা এসব কোম্পানিগুলো মানছে না। এই দায়ভার কে নেবে?

আসলে এসব বিষয়ে জোড়ালো পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু নির্দেশনা দিলেই হবে না। এসব নির্দেশনা বাস্তাবয়নে নির্ধারিত টাইমফ্রেম দিয়ে দিতে হবে। ওই টাইমফ্রেমের মধ্যে না আসলে তাদেরকে সুনির্দিষ্ট কারণ দর্শাতে হবে, জবাবদিহীতার আওতায়

আনতে হবে। আর এটি করতে হবে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল থেকেই।

বিনিয়োগবার্তা: ওটিসি মার্কেটে বছরের পর বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের টাকা আটকে আছে। কিভাবে তারা এখান থেকে রিলিজ পেতে পারে?

মোহাম্মদ হাফিজ: ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে আটকে থাকা শেয়ার নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু কোনো ফল হচ্ছে না। সম্প্রতি অবশ্য এ বিষয়ে বিএসইসি একটি সাব কমিটি করেছে বলে আমরা জেনেছি। এই মার্কেটকে ঢেলে সাজাতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এসব বাস্তবায়ণ হলে এখান থেকে সহজেই বিনিয়োগকারীরা রিলিজ পাবেন। আর একটি কথা হলো- কোনো কোম্পানির শেয়ারদর ২/৪ টাকা বাড়লে কিংবা কোন বিনিয়োগকারী একই সময়ে মাত্রারিক্ত শেয়ার কিনলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নোটিশ দেয়, তদন্ত করে। কিন্তু কোনো কোম্পানির শেয়ারদর নির্ধারিত মূল্যের নীচে নেমে গেলে কোনো তদন্ত হয় না। কেনো কোম্পানিটির শেয়ার দর ফল্ট করছে, পরিচালনা পর্ষদ টাকা নিয়ে কি কাজ করেছে-এগুলো নিবিরভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। তেমনিভাবে ওটিসিতে বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকা শেয়ার নিয়েও তারা এ পর্যন্ত কোন জোড়ালো পদক্ষেপ নেয়নি। তাহলে বাজার ঘুরে দাড়াবে কি করে? নিয়ন্ত্রক সংস্থারতো উচিত সব বিষয়য়েই মনিটরিং করা। শুধু বাড়লে তদন্ত হবে আর দর বাড়লে তদন্ত হবে না – তাতো হতে পারে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত এই বলয় থেকে বেরিয়ে আসা। তানাহলে একসময় নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এসব বিষয়ে জবাবদিহীতা করতে হবে।

 

বিনিয়োগবার্তা: বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের সুফল সম্পর্কে বলুন।

মোহাম্মদ হাফিজ: দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে দিয়েছেন। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজসহ বাজারের সকল পক্ষই দেশব্যাপি এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নি:সন্দেহে এটি একটি ভাল উদ্যোগ। এর ফলে সাধারণ মানুষ পুঁজিবাজার সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরী হচ্ছে। বিনিয়োগ শিক্ষার ফলে বাজারে প্রবেশের পূর্বেই মানুষ সচেতন হয়ে উঠছেন। এতে শিক্ষিত ও সচেতন বিনিয়োকারী পাওয়া যাচ্ছে; যা একটি বাজারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সহায়তা করবে। আমি চাই এধরনের কার্যক্রম আরও জোড়ালোভাবে চালানো হোক।

 

বিনিয়োগবার্তা: বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে কিছু বলুন।

মোহাম্মদ হাফিজ: বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে আমার একটিই কথা- আপনারা জেনে-বুঝে এ বাজারে বিনিয়োগ করুন। পুঁজিবাজারে ঝুঁকি থাকবেই। ঝুঁকি থেকে উত্তরনের জন্য শিক্ষা গ্রহন করুন। বাজারের গতিবিধি লক্ষ্য করে বিনিয়োগ করুন। এ বাজারে মুনাফা করতে হলে ধৈর্য্য থাকতে হবে। বিশ্লেষন এবং ধৈর্য্য ধরে বিনিয়োগ করলে এখান থেকে লাভবান হতে পারবেন।

(এসএম/এসএএম/ ০৭ এপ্রিল ২০১৮)