প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষের স্বার্থকে আমলে নেওয়া হয়নি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ বাজেটে কিছু উদ্দেশ্য ও কয়েকটি গোষ্ঠী সন্তুষ্ট হলেও সার্বিকভাবে জনগণ বিশেষত মধ্যবিত্তদের জন্য আশান্বিত হওয়ার মতো কিছু নেই এতে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বাজেট নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহল খুব একটা নেই। বাজেট কখন উত্থাপিত হয়, কখন পাস হয় সাধারণ নাগরিকরা তা নিয়ে ভাবেন না, অনেক সময় খোঁজখবরও রাখেন না তারা। তবে সাধারণ মানুষের বাজেট বিষয়ে আগ্রহ তখনই দেখা দেয় যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। আবার একশ্রেণির ব্যবসায়ী জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার আগেই বাজারে সংকেত দেওয়া শুরু করেন বাজেট আসন্ন। স্পষ্টত বেখেয়ালে ভুলে গেলেও ওসব ব্যবসায়ী কর্তৃক বাজেট পাসের আগেই পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ঘটনার পর বাজেট ভাবনাকে আর অগ্রাহ্য করা যায় না।
যাই হোক, গত বৃহস্পতিবার মহান জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত কর্তৃক ঘোষিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা দিয়েছেন। এই বাজটেকে ঘিরে সর্বস্তরের মানুষের মনোভাব মিশ্র বলে ধরে নেয়া যায়।
দেখা গেছে, বাজেটের বিশাল আকারের ব্যাখ্যায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন এ বাজেটের মূল লক্ষ্যবস্তু যেহেতু প্রবৃদ্ধি সেহেতু এর আকার ওই টার্গেটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া বাঞ্ছনীয়। তার এ যুক্তির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা কঠিন। প্রবৃদ্ধি ভিন্ন এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, এটি পুরোনো কথা। নতুন কথা হলো, প্রবৃদ্ধিই শেষ কথা নয় এবং প্রবৃদ্ধি নিজে গিয়ে সব মানুষের ভাগ্যের উন্নতি ঘটিয়ে আসবে না। সেজন্য প্রয়োজন উপযুক্ত বণ্টনমূলক ব্যবস্থা। আমরা প্রত্যাশা করব, প্রবৃদ্ধির গতি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এর প্রতিও সদয় দৃষ্টি দেবেন সংশ্লিষ্টরা।
বাজেটে সাধারণ জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হচ্ছে- স্থানীয় মধ্যবিত্ত যেসব পণ্যের চিহ্নিত গ্রাহক বাজেট বক্তৃতায় সেগুলোর ওপর বাড়তি করারোপের উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এমনকি অনলাইন সেবাকেও ভ্যাটের আওতায় আনার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে সরকারের। বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়, রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণেই এমন উদ্যোগ। এও অসহায় বাস্তবতা যে, চূড়ান্ত বিচারে সিংহভাগ ভ্যাট প্রদানকারী মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীকেই গুনতে হবে ওই কর। অনেকের প্রত্যাশা ছিল, করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হবে এবার। তেমন কোনো প্রস্তাব আসেনি। তার মানে আয়করের প্রধান টার্গেটও ওই মধ্যবিত্তই এবং এক্ষেত্রে আহরণ সুবিধাই প্রধান বিবেচ্য বলে প্রতীয়মান। অথচ আয়করের বেলায় আয়ের উচ্চস্তরে জোরটা বেশি দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। মধ্যবিত্তকে কর বেশি দিতে হয়, এ নিয়ে কারও আক্ষেপ থাকা উচিত নয়। কেননা গুটিকয়েক দেশ বাদ দিলে সাধারণভাবে মধ্যবিত্তরাই সার্বজনীন বৃহত্তম করদাতা (প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর) গোষ্ঠী এবং অর্থনীতির মেরুদণ্ড।
বিবেচনার বিষয় হলো, এই মেরুদণ্ড কতটা করভার বহনে সক্ষম, সেটি নির্ভর করে মেরুদণ্ড কতটা শক্তিশালী তার ওপর। সেজন্য অন্যান্য দেশে বাজেটের মাধ্যমে মধ্যবিত্তশ্রেণি শক্তিশালীকরণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাজেটে মধ্যবিত্তশ্রেণি শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ যতটা নাই, তার চেয়ে বেশি এই শ্রেনীর ওপর ভার চাপানোর প্রবণতা। কিন্তু এটি আসলে উচিত নয়। এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের অধিক বিচার বিবেচনা গুরুত্বপূর্ণ।
(বিনিয়োগবার্তা/ ০৯ জুন ২০১৮)