সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি, বিনিয়োগবার্তা, ঢাকা: কৃষক-জনতার সব প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে সুনামগঞ্জের লালুগোয়ালা হাওররক্ষা বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে জেলার তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের বোরো জমির ফসল।
গত ২৪ দিন ধরে এ হাওরের ফসলরক্ষার জন্য কৃষকরা অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানির সঙ্গে প্রাণপণ যুদ্ধ করে বছরের খোরাকি গোলায় তোলার চেষ্ট করছিলেন।কিন্তু শনিবার (২২ এপ্রিল) মধ্যরাতে কৃষক-জনতা ও প্রশাসনের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল লালু গোয়ালা বাঁধ ভেঙে শনির হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘গত ২৪ দিন উপজেলা পরিষদ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এ হাওরটি রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে।’
তবে সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিফতরের উপ-পরিচালক জাহিদুল হক জানিয়েছেন, নতুন করে প্লাবিত হয়ে ৮ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।
এর আগে গত ৩১ মার্চ দিরাই উপজেলার বরাম হাওরের তুফানখালি বাঁধ ভেঙে বরাম হাওর এবং পর দিন একই উপজেলার বৈশাখীর বাঁধ ভেঙে চাপতির হাওর, উদগল, টাংনি, গোরমার হাওর প্লাবিত হয়। এরপর এক এক করে জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার বৃহত্তম নলুয়ার হাওর, জেলার বৃহত্তম দেখার হাওর, জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওর, শাল্লার ছায়ার হাওর ও বেড়ামোহনাসহ জেলার সবক’টি হাওর প্লাবিত হয়। বর্তমানে একমাত্র জামালগঞ্জ উপজেলার পাকনার হাওরে কৃষকরা সর্বস্ব দিয়ে বাঁধরক্ষার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন।
গত ৩০ মার্চ থেকে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির (পিআইসি) হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে একে একে জেলার সবক’টি হাওরের ফসল তলিয়ে যায়।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলার ১১টি উপজেলায় বোরো চাষাবাদ হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে। যার ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।জেলার ১১টি উপজেলায় ৩ লাখ ৩৩ হাজার কৃষি পরিবার আছে।
অধিদফতরের উপ-পরিচালক জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত জেলার ১ লাখ ৩৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো তলিয়ে গেছে। তবে স্থানীয় কৃষককদের দাবি, জেলার ৯০ ভাগ ফসল তলিয়ে গেছে।
(এমএ/এসএএম/ ২৪ এপ্রিল ২০১৭)