তরফদার-মো

দেশের বৃহত্তর স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দরকে স্মোথলি অপারেশনে রাখতে হবে: তরফদার মো. রুহুল আমিন

নিজস্ব প্রতিবেদক, বিনিয়োগবার্তা:  দেশের বৃহত্তর স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দরকে স্মোথলি অপারেশনে রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন।

 

তিনি বলেন, সরকার পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল বানিয়েছে। বে টার্মিনালের উন্নয়ন কাজ চলছে। আমার জানা মতে, বর্তমান বন্দর চেয়ারম্যান আন্তরিকভাবে বে টার্মিনাল বাস্তবায়নে কাজ করছেন। এ টার্মিনালের মাস্টারপ্ল্যান হচ্ছে। এটি অনেক বড় কাজ। বন্দরের নিজস্ব একটি টার্মিনাল থাকবে সেখানে। ফার্স্ট ট্রেকে নিতে হবে।

 

সোমবার (৩১ মে) আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

 

তরফদার মো. রুহুল আমিন বলেন, বন্দরের ভেতর প্রতিদিন ৪ হাজার কনটেইনার ডেলিভারি হয়। এক কনটেইনারে ৩টি ট্রাক ধরলে ১২ হাজার ট্রাক চলাচল করছে। আশপাশে কনটেইনার ডিপো আছে। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি বাইরে নিয়ে যাওয়া হোক। তারই অংশ হিসেবে বে টার্মিনাল এলাকায় ডেলিভারি ইয়ার্ড ও ট্রাক টার্মিনাল তৈরি করা হচ্ছে। তিন বছর আগে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। নগরে যানজট, অচলাবস্থা নিরসনে এ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

তিনি বলেন, সিসিটি, এনসিটি ও মেইন জেটি ২০-৩০ বছর আগে হয়েছে। নতুন জেটি যেগুলো হচ্ছে সেগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয় মাথায় রেখে উঁচু করতে হবে। হেজার্ড ম্যাটেরিয়াল নিয়ে বন্দর কাজ করছে। বন্দর আরও স্ক্যানার কিনবে। পানগাঁওতে স্ক্যানার বসাতে হবে।

 

সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, একটি শিল্পগ্রুপের একটি কারখানা খেলাপি হলে বাকি কারখানা বা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতির মুখে পড়ছে। একদিন দেখা যাবে ওই উদ্যোক্তা দেউলিয়া হয়ে গেছে। বিজনেসম্যানদের সুরক্ষা দিতে হবে। কোনো শিল্পগ্রুপের একটি কারখানা ব্যাংক ঋণে খেলাপি হলে যদি অন্য কারখানাগুলো সচল থাকে তাহলে রুগ্ন কারখানাটিকে সাপোর্ট দিতে পারবে।

 

তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান ব্যাংকঋণ নিয়েছে, তাদেরকে ঋণ শোধের জন্য আরও এক বছর সুযোগ দেওয়া হোক। আমরা কর্মী ছাঁটাই করতে চাই না। কখন ছাঁটাই করে, যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। আমি একটি প্রোডাক্ট আমদানি করলাম। পাইকারি বিক্রি করলাম ডিলারকে। এরপর সাব ডিলারের কাছে গেল। ট্রেডিং বিজনেসে ট্যাক্স বন্ধ করতে হবে। অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স সমন্বয়ের আওতায় আনতে হবে।

 

তরফদার রুহুল আমিন বলেন, জীবনযাত্রার মান বেড়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে স্বাভাবিকভাবে বাজেটের আকার বাড়ছে। আমরা চাই কৃষি ও স্বাস্থ্যখাতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোভিডের সময়ে বিদেশে যাতায়াত সীমিত হয়ে পড়ায় উন্নত দেশের বিজনেস মিটিংগুলো ইউএইতে হচ্ছে। সিঙ্গাপুর থেকে গ্লোবালি বিজনেস নিয়ন্ত্রণ করে। বিদেশে যেসব বাংলাদেশি ব্যবসা করছে বিশেষ করে ইউএইতে তারা দেশ থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল নিতে পারছে না।

 

ব্যবসায়ী হিসেবে আমি মনে করি, বাংলাদেশিদের ব্যবসায় মেধা অনেক বেশি। সরকারি সাপোর্ট দিতে হবে, ছাড় দিতে হবে। তার যে ক্যাপিটাল লাগবে তা অ্যাসেসমেন্ট করে নিয়ে যাওয়ার পারমিশন দিতে হবে। আইনকানুনের বেড়াজালে কেউ নিতে পারে না। আমাদের দাবি, যারা বিদেশে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল নিতে চায় তাদের সুযোগ দেওয়া হোক। নির্দিষ্ট সময় পর ওই টাকা দেশে ফেরত আনবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদারনীতি গ্রহণ করা উচিত।

 

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, মাতারবাড়ীতে সমুদ্রবন্দর, জ্বালানি হাব হচ্ছে। বন্দরের বে টার্মিনাল হচ্ছে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল হচ্ছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন হচ্ছে। কিন্তু এখনো সরকারিভাবে অফিশিয়ালি চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী ঘোষণা করা হয়নি। আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী ঘোষণা করা হোক। চট্টগ্রামের মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অর্থ সংকট থাকলে বাজেটে বরাদ্দ দিতে হবে।

 

আমরা যারা বিভিন্ন সেক্টরে ইন্ডাস্ট্রি করেছি অনেক কাঁচামাল আমদানি করি। কমপ্লায়েন্স মেনটেইন করি। কিছু অসৎ ব্যবসায়ী বেনামে কাঁচামাল আমদানি করে প্রোডাক্ট তৈরি করে। এনবিআরের কঠোর নজরদারিতে আনা উচিত। সরকারি দফতরে রেজিস্টার্ড বা বৈধ ব্যাটারি উৎপাদকদের পাশাপাশি অনেকে বিভিন্ন নামে অবৈধ ব্যাটারি বাজারজাত করছে। ইজিবাইকে এ ধরনের নকল ব্যাটারি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে অনেক বৈধ, নামীদামি ব্যাটারি ইন্ডাস্ট্রি লোকসানে পড়ছে, ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। শোরুমে অভিযান চালাতে হবে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ সারা দেশে যেসব অঞ্চলে ইজিবাইক চলছে সেখানে ব্যাটারির ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।

 

(এসএএম/০১ জুন ২০২১) 


Comment As:

Comment (0)