সম্পাদক

সম্পাদকীয়

টেকসই পুঁজিবাজার উন্নয়নে বিনিয়োগ শিক্ষাকে আরো বেগবান করতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী দিকনির্দেশনায় দেশের পুঁজিবাজারকে বিস্তৃত ও স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ণ করে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্ঠা অব্যাহত রেখেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিনিয়োকারীদের সচেতন করতে ২০১৭ সালের ৩ মার্চ দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী। যা এখনো কমবেশি চলমান। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্দেশনায় সকল অংশীজনরাও এ কাজে সম্পৃক্ত হয়েছে। তারাও প্রাতিষ্ঠানিক বা সাংগঠনিকভাবে যে যতটুকু পারছে বিনিয়োগ সংক্রান্ত শিক্ষার প্রসারে কাজ করছে। কিন্তু বাজারের বর্তমান অবস্থায় এ শিক্ষা যথেষ্ট নয় বলে বিশ্লেষকদের ধারনা। তারা মনে করেন, একমাত্র বিনিয়োগ শিক্ষার প্রসারই পারে পুঁজিবাজারে সচেতন বিনিয়োগকারী সৃষ্টি করতে। এ শিক্ষা তৃনমূলে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা।

তবে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরিতে বিএসইসির তত্ত্বাবধানে বিআইসিএম ও বিএএসএম নামের দুটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। ইতোমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমও কিছুটা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠান দুটির কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও বহুমাত্রিকীকরণ করতে হবে।

এবারের বাজেটে করপোরেট করহার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এ হার আরও কমিয়ে দেওয়া হবে বলেও নীতি নির্ধারণী মহল থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাজার উন্নয়নে ‘Capital Market Stabilization Fund’ নামে একটি বিশেষ তহবিল গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। প্রাথমিকভাবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিতরন না হওয়া লভ্যাংশ নিয়ে এ তহবিল গঠন করা হচ্ছে। বর্তমান পুঁজিবাজারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের বিতরন না হওয়া লভ্যাংশ রয়েছে, যার মধ্যে নগদ লভ্যাংশের পরিমান তিন হাজার কোটি টাকা আর বোনাস লভ্যাংশের বাজার মূল্য প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা।

বিনিয়োগকারীরা যাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানীর সব তথ্য নির্ভূলভাবে পান সেজন্য নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নীতিমালার আওতায় নিয়ে এসেছে সরকার। ফলে ভুল তথ্য প্রদানকারী নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানও শাস্তির আওতায় চলে এসেছে। এছাড়া সরকার ও কমিশন কর্তৃক গৃহীত অনান্য ইতিবাচক পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে- কোম্পানীর উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ এবং ব্যক্তিগতভাবে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ, তালিকাভুক্ত কোম্পানীর করপোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দ্রুত স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ, আইনের কঠোর প্রয়োগ, জেড গ্রুপের শেয়ারের ক্ষেত্রে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া, ওটিসি মার্কেটে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা কোম্পানিগুলোকে সচল করার পদক্ষেপ, কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়া, মার্জিন ঋণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন করা, সার্কুলার ট্রেড, ইনসাইডার ট্রেডিং ও মার্কেট ম্যানিপূলেশনকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে পুঁজিবাজারে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জোর পদক্ষেপ নিয়েছে বর্তমান কমিশন।

এছাড়া নতুন আইপিও আসার ক্ষেত্রে নিয়েছে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এখন শুধু প্রকৃত বিনিয়োগকারীরাই বরাদ্দ পাবেন আইপিওর শেয়ার। দুর্বল কোম্পানী যাতে মার্কেটে আসতে না পারে সেজন্য বিএসইসি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আর এসবের সুফল ইতোমধ্যেই পেতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

তবে প্রশ্ন হলো -বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে পারবে তো পুঁজিবাজার?

বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশের পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল করতে হলে বিনিয়োগকারীদেরকে কার্যকর শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

তাদের মতে, দেশের পুঁজিবাজারে আর্থিক জ্ঞানহীন বিনিয়োগকারীর সংখ্যাই বেশী। আর এজন্যই তারা বিভিন্ন গুজব ও ট্রেডারদের কথামত বিনিয়োগে আগ্রহী হয় এবং ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই বিনিয়োগকারীদের দক্ষতা ও কারিগরি জ্ঞান বৃদ্ধির উপর এখনই জোর দিতে হবে। বিনিয়োগের পূর্বে প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন তারা।

প্রধানমন্ত্রীর দর্শনের সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও বলতে চাই, একমাত্র পুঁজিবাজারই হবে আমাদের জাতীয় অর্থনীতি ও শিল্পায়নের অর্থের মূল উৎস। এর মাধ্যমে দেশে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং পুঁজিবাজারও অনেক এগিয়ে যাবে। সব বিনিয়োগকারী যদি জেনে-বুঝে ও তথ্য বিশ্লেষণ করে ভাল মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন, তাহলে লোকসানে পড়বেন না বলেই আমাদের দৃঢ বিশ্বাস। আর একমাত্র শিক্ষিত ও সচেতন বিনিয়োগকারী সৃষ্টির মাধ্যমেই দেশি-বিদেশি বড় বিনিয়োগকারীদের আস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছাবে পুঁজিবাজার।

(এসএএম/০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১)


Comment As:

Comment (0)