শফিক শামীম ১

সাক্ষাৎকারে সেনাকল্যান ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রি. জে. শফিক শামীম

অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বীমা খাত এখন অনেক বেশি ট্রান্সপারেন্ট

 

অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমান সময়ের বীমা খাত অনেক বেশি ট্রান্সপারেন্ট বলে মন্তব্য করেছেন সেনাকল্যান ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শফিক শামীম, পিএসসি।

 

তিনি বলেন, কমিশন বন্ধ করা, ঠিকমত রি-ইন্স্যুরেন্স করা, সরকারের নিয়ম-কানুনগুলো মেনে চলা, কোন ফাঁকিবাজি না করা- এসব বিষয়গুলো কিন্তু এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রনের মধ্যে চলে এসেছে। আস্তে আস্তে বাজে প্র্যাক্টিসগুলো বীমা ইন্ডাস্ট্রি থেকে একদম বিলুপ্ত না হলেও অনেকাংশে কমে গেছে। এ ধারা বজায় থাকলে অচিরেই জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান দৃশ্যমান হবে।

 

বিনিয়োগবার্তা’র সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শফিক শামীম। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শামীম আল মাসুদ। আর সহযোগিতায় ছিলেন দেওয়ান ফজলে এলাহী। সাক্ষাৎকারটির বিস্তারিত পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরা হলোঃ

 

বিনিয়োগবার্তা: বীমা খাতের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে বলুন।

 

ব্রি. জে. শফিক শামীম: আমি বীমা সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত আছি ৮ বছর হল ৮ বছর আগে আমি যখন এ খাতে এসেছিলাম, তখনকার তুলনায় এখনকার বীমা খাত অনেক বেশি ট্রান্সপারেন্ট, অনেক বেশি সম্ভাবনাময়। আমার এক্সপেরিয়েন্স থেকে বলছি–৮ বছর আগে যখন এসেছিলাম এই খাতের প্রধান সমস্যা ছিল ইমেজ সংকট, লোকজন বীমা শুনলেই বিশ্বাস নিয়ে কথা বলতো না। সেই জিনিসটাকে কিন্তু আমাদের বর্তমান  নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ আইডিআরএ প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। এরমধ্যে কিন্তু অনেকগুলা যুগোপযোগী এবং ভালো ভালো কিছু সংস্কার হয়েছে বীমা খাতে। যে নিয়মগুলো হয়েছে বীমা ‘ল’ এর যে ইম্পলিমেন্টেশনগুলো হয়েছে, এটা কিন্তু আমার দেখা মতে গত ৮ বছরে আমার একটা বিশাল অভিজ্ঞতা। স্পেশালি গত ৫ বছরে বীমা খাত একটা ইউটার্ন নিয়েছে, ভালো একটা দিকে যাচ্ছে। এটা যদি আমরা বজায় রাখতে পারি সবাই তাহলে আমরা ভাল একটা জায়গায় ল্যান্ড আপ করবো এটা একটা সাইড, আরেকটা হল, আমি আমার এই সময়কালে আমি কিন্তু এই কোম্পানির ফার্স্টম্যান। সুতরাং এই কোম্পানির শুরু থেকে আজকে যে অবস্থায় এসেছে প্রত্যেকটা জিনিস আমি দেখেছি এবং আমার টিম বা আমরা যে জায়গায় এসেছি সেখানে কিন্তু অনেক কিছুর ভিতর দিয়ে আসতে হয়েছে। আমি প্রথম দিকে যখন দেখতাম যে বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) একরকম ভাবে কাজ করছে, ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন আরেকরকম ভাবে কাজ করছে, আবার আমরা অর্থাৎ বীমাকারীরা মালিক পক্ষের কথা অনুযায়ী অন্যভাবে কাজ করছি। এখন কিন্তু সেই অবস্থা নাই। গত ২/৩ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৯ থেকে ৩টা স্টেকহোল্ডার একসাথে কাজ করা আরম্ভ করল। এই সেক্টরের জন্য অর্থাৎ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন, মালিকদের পক্ষ, নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, আমরা বীমাকারীরাও সবাই কিন্তু একই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ শুরু করলাম। কমিশন বন্ধ করা, ঠিকমত রি-ইন্স্যুরেন্স করা, সরকারের নিয়ম-কানুনগুলো মেনে চলা, কোন ফাঁকিবাজি না করা- এসব বিষয়গুলো কিন্তু এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রনের মধ্যে চলে এসেছে। এই জিনিসগুলো কিন্তু অনেকে ইনিশিয়ালি ঠিকমতো করতে চায় নাই। আস্তে আস্তে বাজে প্র্যাক্টিসগুলো ইন্ডাস্ট্রি থেকে একদম বিলুপ্ত না হলেও অনেকাংশে কমে গেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হতে চলেছি। একথা তো অস্বীকার করার কিছু নাই। সারা পৃথিবীই আমাদের বলে এখন ইকোনমিতে আমরা উন্নয়নের রোল মডেল। তবে সেই অনুযায়ী বীমা খাত কিন্তু রোল মডেলের জায়গায় যেতে পারে নি। কিন্তু এ খাতটি একটি সম্ভাবনার জায়গায় উঠে এসেছে। এ খাতে এখন যে সংস্কারগুলো চলছে, এগুলো আমরা যদি মেনে চলি তাহলে আমাদের টার্গেট আছে যে ২০২৫ এর আগে অর্থাৎ ২৩/২৪ এর মধ্যে ৫% পর্যন্ত জিডিপিতে বীমা খাতের উল্লেখযোগ্য পরিমান অগ্রগতি হবে বলে আমি বিশ্বাস করি

 

বিনিয়োগবার্তা: কমিশন রেটের কারণে কি বীমা ব্যবসায় কোন সমস্যা হচ্ছে?

 

ব্রি. জে. শফিক শামীম: না, আমার তো সমস্যা হয়-ই নাই। বরং আমরা এর জন্য অত্যন্ত খুশি।   আপনারা জানেন, আমাদের কোম্পানি সেনাশাসিত প্রতিষ্ঠান। আমরা কখনোই লাগামহীন কমিশন দিয়ে ব্যবসা করি নাই। আমাদের কোম্পানির দুটি বৈশিষ্ট্য। একটা হলো- আমাদের কিন্তু ঐরকম ইনডিভিজুয়াল কোন মালিক নাই, এই কোম্পানি একমাত্র বীমা কোম্পানি যাদের ইনস্টিটিউশনাল শেয়ারহোল্ডিং বেশি। আমাদের কোম্পানির বেশিরভাগ শেয়ারের মালিক হল সেনা কল্যাণ সংস্থা বা সশস্ত্র বাহিনী। তাই এখানে আমাদের উপর কোন প্রেশার নাই যে- আমাকে বছরে এত টাকা টার্গেট ফিলআপ করতে হবে, এতোটাকা ইনকাম করতেই হবে। এজন্য আমার জন্য নিয়ম কানুন মেনে চলা অন্যদের তুলনায় বেটার প্লাস। আমাদের ব্যাকগ্রাউন্ডে যেহেতু আমরা মিলিটারিম্যান, মিলিটারি থেকে এসে আমরা সাধারনত: সবসময় চেষ্টা করি সরকারের নিয়ম-কানুন মেনে চলতে। এটা আমাদের একদম বেসিক্যালি ঐভাবে ঢুকে গেছে। আর সেকেন্ড যে সেটা হলো- আমাদের যে মুনাফা এটা ব্যক্তিগতভাবে কারো কাছে যায় না। এর পুরোটাই একটা ওয়েলফেয়ার ফান্ডে চলে যায়- যে ফান্ডের কন্ট্রোল করেন মাননীয় সেনাপ্রধান। যার ফলে যে-ই আমাদের একটা পলিসি নিক বা যাই হোক না কেন -তিনিও কিন্তু একটা কল্যাণমূলক কাজে অংশীদার হয়ে যান। আপনারা দেখেছেন যে, করোনার সময় বা বন্যা, জলেচ্ছাসের সময় সেনাবাহিনীর লোকজন রেশন নিয়ে নিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে পৌছে দিচ্ছে- এগুলো কিন্তু এই ধরনের অর্গানাইজেশনগুলোর ইনকাম থেকেই আসে সুতরাং এই দুইটা কাজে আমরা যেহেতু করি, তাই আমাদের জন্য নিয়ম কানুন মেনে চলার একটা বাধ্যবাধকতা থাকে। আবার এটা সহজও অন্যদের তুলনায়, যেহেতু আমাদের কোন প্রেশার নাই তাই কমিশন দিয়ে ব্যবসা বাড়ানোর বিষয়ে প্রথম থেকেই আমরা আগ্রহী ছিলাম না। তারপরে যখন ১৪.২৫% করা হলো তখন আমাদের সেনাকল্যাণের ব্যবসা কিন্তু বেড়েছে। এর কারণ হলো- অনেকেই কমিশনের জন্য আমাদের কাছে আসতে পারতো না। তবে গ্রাহকরা একটা ভালো কোম্পানিতে আসতে চায়। সেজন্য আমাদের কাছে আসতে চাইতো। এই কমিশন ১৪.২৫% হওয়ার পর আমাদের ব্যবসা বেড়েছিল, প্রায় ডাবল হয়েছিল এরপরে করোনা এমন একটা সময়ে এদেশে হানা দিল, বীমা সেক্টর যখন সুন্দরভাবে ঘুরে দাড়িয়ে উপরের দিকে যাচ্ছে এইসময় করোনাটা আসলো আমাদের সেক্টরে যে ভাল জিনিসগুলো দৃশ্যমান হচ্ছিল ঐ জিনিসটা ভিজিবল হওয়ার আগেই করোনায় আবার কিছুটা চাপা পড়ে গেল আমরা আশা করছি যে, এখন আবার এটা ঘুড়ে দাড়িয়েছে। কমিশন এখন ০% হয়ে গেছে, অনেকেই ০% এ অভ্যস্ত না। আমি বলবো যারা বীমা গ্রহিতা তাদের কথা, বীমা গ্রহিতারা ০% এ অভ্যস্ত না। এজন্য অনেকেই ইন্স্যুরেন্সের পরিমাণই কমিয়ে দিয়েছে অনেকে মটর ইন্স্যুরেন্স করছেন না এখন, অনেকে ফায়ার ইন্স্যুরেন্স আগে যেটা করতেন তার অর্ধেক করছেন সো ০% হয়ে যাওয়ায় কিছুটা ব্যবসার উপর নেতিবাচক প্রভাব পরলেও, আমি মনে করি এটি যদি ধরে রাখা যায় সবাই একসময় না একসময় ইন্স্যুরেন্স করবেই। আর এটি ধরে রাখা গেলে বীমাকারীদের যেমন লাভ হবে, তেমনি সরকারেরও বিভিন্ন দিক দিয়ে লাভ হবে সো আমি মনে করি, কমিশন উঠে যাওয়াই বেটার

 

বিনিয়োগবার্তা: আপনার কোম্পানি সম্পর্কে কিছু বলুন

 

ব্রি. জে. শফিক শামীম:  ২০১৩ সালে আমাদের কোম্পানি লাইসেন্স পায় ২০১৩ সালে লাইসেন্স পেলেও একচ্যুয়ালি ২০১৪ থেকে আমরা ব্যভসা শুরু করি। যেহেতু লাইসেন্স পেয়েছি আমরা ২০১৩ এর লাস্টে অর্থাৎ নভেম্বর মাসে আমরা ২০১৪ সালে শুধু লসে ছিলাম। কারণ ঐবার আমাদের এস্টাবলিশমেন্ট কস্ট, ইনিশিয়াল এস্টাবলিস্টমেন্টে যে জিনিসগুলো ছিল, এরপরে আমরা ২০১৫ সাল থেকেই লাভজনক পর্যায়ে যাই অর্থাৎ ১ বছরের মধ্যেই আমরা লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হই। তারপরে আর আমাদেরকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে আমাদের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ৩ মাস পর পরই একটা এ্যাসেসমেন্ট করে- কোন কোন কোম্পানির মার্কেট শেয়ার কি ইত্যাদি ইত্যাদি সে হিসাবে আল্লাহর রহমতে আমরা প্রথম কিছু কোম্পানির মধ্যেই চলে এসেছি আমাদের কোম্পানি ভাল করছে। আপনারা জানেন যে, আমরা কিন্তু ইয়াংগেস্ট, নন লাইফ কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নতুন কোম্পানি। তারপরও আমরা ২৬/২৭টা কোম্পানি যারা এখনও শেয়ারমার্কেটে যেতে পারেনি, তাদের মধ্যে প্রথমেই মার্কেটে গেলাম। সবচেয়ে নবীন হওয়া সত্বেও আমরা এপ্লিকেশন করার মাত্র সাড়ে ৩ মাসের মধ্যে আইপিও অনুমোদন পেয়েছি। আমাদের নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ ও সংস্থাগুলোও বলেছে যে আমাদের পারফরমেন্স এবং কম্প্লায়েন্স এর জন্য আমরা এত তাড়াতাড়ি এ অনুমোদন পেলাম। আপনারা জানেন যে, কোভিডের মধ্যেও ২০২০ সালে আমাদের ইপিএস অর্থাৎ পার শেয়ার ইনকাম ছিল ৩ টাকা ৯৭ পয়সা, ১০ টাকার শেয়ারে ৩ টাকা ৯৭ পয়সা, তার আগের বছরে ছিল ৪ টাকা ২৩ পয়সা সো আমরা ভাল করছি আল্লাহর রহমতে আশা করছি, যদি কোভিডটা যেরকম উঠে যাচ্ছে সেভাবে চলে যায়, তাহলে আগামী ১/২ বছরের মধ্যে আরো বেটার হবো ইনশাল্লাহ

 

বিনিয়োগবার্তা: বেশ কিছু বীমা কোম্পানিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেয়ারবাজারে আসতে না পারার কারনে বছরের পর বছর ধরে জরিমানা গুনতে হচ্ছে এখন আইন-কানুন শিথিল করে তাদেরকে শেয়ারবাজারে নিয়ে আসা হচ্ছে। আপনার মূল্যায়নে তাদের ভবিষ্যৎ কেমন হবে? শেয়ারবাজারে আসলে তারা ট্রান্সপারেন্ট হবে বলে আপনি মনে করেন কি?         

 

ব্রি. জে, শফিক শামীম: আমি মনে করি, শেয়ারবাজারে আসলে তাদেরকে অটোমেটিক্যালি ট্রান্সপারেন্ট হতেই হবে। আমার এক্সপেরিয়েন্সে আমি যেটা বলছি বর্তমানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কিন্তু যুগোপযোগী কিছু নিয়ম কানুন চালু করেছে। যে নিয়ম-কানুনগুলো আপাত দৃষ্টিতে অত্যন্ত কঠোর মনে হলেও এগুলো পাবলিক ইন্টারেস্টে করা হয়েছে। দেখুন আমাদের কোম্পানি কিন্তু প্রথম একটা টেস্ট এন্ড ড্রাইভ এর মধ্যে আছে। আমাদের কোম্পানির শেয়ারে কেউ ১০,০০০ টাকার বেশি বিনিয়োগ করতে পারে নাই। একদিকে যেমন যারা শেয়ার কিনতে আগ্রহী তারা মনক্ষুন্ন হলো আমরা কেন ১০০০০ টাকার বেশি শেয়ার কিনতে পারবো না, একটা ভালো কোম্পানির শেয়ার আমরা বেশি কিনতে চাই, বাট আলটিমেটলি তো এটা ম্যাক্সিমাম পাবলিককে কেনার একটা সুযোগ করে দিল কমিশন। এটি আমাদের দিয়েই শুরু হলো। জরিমানা গোনার পরেও বীমা কোম্পানিগুলো আসতে পারছিলো না বিভিন্ন কারনে। হয়তো একেক কোম্পানির একেক কারণ আছে। বাট আমি দেখছি যে, বাজারে আসতে কম্প্লায়েন্স যেগুলো পালন করতে হবে তাতে ট্রান্সপারেন্সি বাড়তে বাধ্য। সো পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি যেগুলো শেয়ারবাজারে আসার কথা তাদের শেয়ারবাজারে আরও দ্রুত আনার ব্যবস্থা করা হোক। এরফলে অটোমেটিক্যালি বীমা সেক্টরে ট্রান্সপারেন্সি বাড়বে। এই জন্যই আইডিআরএ বার বার চেষ্টা করছে ম্যাক্সিমাম পসিবল কোম্পানিকে শেয়ারমার্কেটে আনার জন্য। এত চেষ্টার পরও কিন্তু ২৭টার মধ্যে কেবল ৩টা না ৪টা এখন পর্যন্ত আসতে পেরেছে। তবে আইডিআরএ ও বিএসইসি যেভাবে চেষ্টা করছে, তাতে আমি মনে করি যে, তাড়াতাড়িই বাকীদেরও আসতে হবে। কারন, না আসলে জরিমানার পরিমানতো দিন দিন বাড়তেই থাকবে। আর এত জরিমানা দিয়েতো পারা যাবে না, একটা কোম্পানি কত জরিমানা দিবে। তাই আমি মনে করি এই নিয়ম-কানুনের জন্য কোম্পানিগুলোতে ট্রান্সপারেন্সি বাড়বে

 

বিনিয়োগবার্তা: দেশের পুঁজিবাজার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ণ কি?

 

ব্রি. জে. শফিক শামীম: পুঁজিবাজার সম্পর্কে আমার আইডিয়া খুব বেশি নাই। আমি বীমা সেক্টর নিয়ে যে রকম বলতে পারলাম- পুঁজিবাজার নিয়ে অতটুকু বলতে পারব না। তবে একজন সাধারন বিনিয়োগকারী হিসাবে যদি বলি- এ বাজার নিয়ে আমার এক্সপেরিয়েন্স খুব ভাল না। বিভিন্ন সময়ে নানাবিদ কারণে মানুষ যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে- এজন্য দায়বদ্ধতা সবারই আছে। না বুঝে শেয়ার কিনে কিংবা রাতারাতি অনেক বড়লোক হতে যেয়ে ব্যক্তির যেমন দায়বদ্ধতা আছে, তেমনি এর সাথে নিয়ন্ত্রনকারী বা সরকারী যেসব অর্গানাইজেশন আছে তারাও তো দায়বদ্ধতা এড়াতে পারে না। তবে এখন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন নানা নিয়ম-কানুন করে কঠোরতার সাথে সবাইকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাচ্ছেন। আমি মনে করি এটার রেজাল্ট অবশ্যই আসবে। আগে কিন্তু মানুষ এত ওয়াকিবহাল ছিল না, এখন সবাই অটোমেটিকলি জানতে পারছে নিয়মগুলো, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শিক্ষা বাড়ছে, তারা সচেতন হচ্ছেন। এই যে রোডশোগুলো হচ্ছে, দেশে বিভিন্ন রকম সেমিনার হচ্ছে, বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে এখন যেমন শেয়ারবাজার সম্পর্কে বিভিন্ন রকম বিশ্লেষণ আসছে- আমরাতো আগে এগুলো দেখতাম না। তাই আমি মনে করছি, আমাদের শেয়ারবাজার বা আমাদের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা অর্থাৎ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং অন্যান্য সকল শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট অর্গানগুলো নতুন একটা সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এতে তাদের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর জবাবদিহিতা যথনই বৃদ্ধি পাবে, তখন একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী উপকৃত হবেন বলে আমি মনে করি একই সাথে আমি মনে করি আমরা যারা ইনডিভিজুয়াল বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে ইন্টারেস্টেড তাদেরও সবাইকে একটু বুঝতে হবে যে, কোন বিনিয়োগেই রাতারাতি বড়লোক হওয়া যায় না। তাদেরও দেখেশুনে ঐভাবে নিয়ম কানুন, আইন কিন্তু আছে, সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন বলেন, স্টক মার্কেট বলেন- সবারই কিন্তু নিয়ম কানুন আছে। ঐগুলি মেনে যদি ঠিকমত বিনিয়োগ করা যায়, স্পেশালি যারা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী তারা যদি ঐসব মেনে বিনিয়োগ করেন তাহলে বড়সড় ক্ষতির কোন সম্ভাবনা নাই

 

বিনিয়োগবার্তা: বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে একটি রি-ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আপনার মতামত কি?

 

ব্রি. জে. শফিক শামীম: আমাদের দেশেতো রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সাধারণ বীমা কর্পোরেশন রি-ইন্স্যুরার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বীমাকারীর সাথে সাথে উনারা পুন:বীমাকারী হিসাবেও ভূমিকা পালন করে ৫০ শতাংশ রি-ইন্স্যুরেন্স আমাদেরকে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করতে হয়। তবে বীমা সেক্টরে যারা জড়িত তারা অনেকদিন ধরেই মনে করছিলেন যে, সরকারী ছাড়াও প্রাইভেট সেক্টরে রি-ইন্স্যুরার থাকলে আমাদের যে পরিমান টাকা বাধ্য হয়ে দেশের বাইরে দিয়ে দিতে হচ্ছে, তা হয়তো দেশেই থাকতো। দেখুন, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স এভিয়েশন বীমার একটি বড় বীমাকারী বাংলাদেশে। আমার মনে হয় সাধারন বীমার পরে আমরাই সবচেয়ে বেশি এভিয়েশন সেক্টরে বীমাকারী। তো আমাদের একটি বড় অংকের টাকা বা ৫০% আমরা দেই সাধারণ বীমা করপোরেশনকে, বাকী ৫০% রি-ইন্স্যুরেন্স আমাদের বাইরে করতে হয়। প্রত্যেক বছর একটা বড় অংকের টাকা বৈদেশিক মুদ্রায় চলে যাচ্ছে। তাই দেশে এ ধরনের একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান যদি রি-ইন্স্যুরেন্সের জন্য থাকতো- তাহলেতো আমাদের ন্য খুবই ভাল হতো। তবে এটা নিয়ে অনেক আলোচনার পরে আমি লেটেস্ট যেটা বলতে পারবো- আমাদের বিগত ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের মিটিংয়ে এ বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। আমাদের মাননীয় প্রেসিডেন্ট সাহেব অলরেডি বলেছেন যে, এ বিষয়ে তিনি একটা গ্রীণ সিগনাল পেয়েছেন। প্রাইভেট সেক্টরে ২/৩টা বড় কোম্পানি মিলে একটা পুন:বীমাকারী হিসাবে কাজ করতে পারবে। তবে এজন্য কারা কারা পুন:বীমাকারী হিসাবে কাজ করতে চায়, এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। কারণ, যে কোম্পানিগুলো পুন:বীমাকারী হিসাবে কাজ করবে তাদেরতো ঐরকম ব্যাকগ্রাউন্ড, ফিনান্সিয়াল স্ট্রেন্থ থাকতে হবে। আমিতো অবশ্যই মনে করি, আমাদের দেশে প্রাইভেট সেক্টরেও একটা পুন:বীমাকারী থাকা উচিৎ। কারন পুন:বীমাকারী হওয়ার মত ক্যাপাসিটি আমাদের অনেক বীমা কোম্পানিরই আছে। এখন যদি আমরা বীমাকারী হিসাবে এতখানি ক্যাপাসিটি নিতে পারি তবে পুন:বীমাকারী হিসাবে কিছু কিছু কোম্পানি কেন নিতে পারবে না। আর যারা ইন্টারেস্টেড এটা যদি আমরা নিতে পারি এবং যাদের ঐ ইনফ্রাস্ট্রাকচার আছে তাহলে আমরা এই মূল্যবান বৈদেশিক মূদ্রার বেশ কিছু অংশ দেশেই রাখতে পারবো। এছাড়া দেশে রি-ইন্স্যুরেন্স থাকলে যে কোন একটা এক্সিডেন্ট ঘটলে ঐ রি-ইন্স্যুরেন্স এর মাধ্যমে ক্লেইমটা আরও তাড়াতাড়ি করা যাবে।

 

বিনিয়োগবার্তা: আপনার শিক্ষা ও কর্মজীবন সম্পর্কে জানতে চাই

 

ব্রি. জে. শফিক শামীম: আমার দেশের বাড়ি নড়াইল। আর পড়াশুনা ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে। আমি ক্যাডেট কলেজে পড়াশুনা করার পরে আর্মিতে কমিশন পাই। কিন্তু আর্মিতে ২৭ বছর চাকরী করার পরে আমার একটা স্বাস্থ্যগত কারনে আরলি রিটায়ারমেন্টে চলে আসি। আমার কোর্সম্যাটদের অনেকেই এখনও আর্মিতে চাকরীরত আছেন। আমি যেহেতু আগে চলে এসেছিলাম এজন্য সেনাবাহিনী প্রধানের ইচ্ছায় আমি বীমা সেক্টরে আসি। সেনাকল্যান ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমেই আমার এ সেক্টরে হাতেখড়ি। বীমা সেক্টরে আসার পরে প্রথমে আমি যেটা দেখলাম যে বীমা সেক্টরে যদি আমি মিলিটারীর লোক হিসাবে কাজ করতে চাই তবে আমাকে পড়াশুনা করতে হবে। এজন্য আমি বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা এবং এসোসিয়েটশিপ সম্পন্ন করেছি। এরপরে আমি বিভিন্ন লোকের অনুপ্রেরণায় এবং নিজের ইচ্ছায় ইউকেতে এসিআইআই করেছি। এখন আমি মোর অব এন ইন্স্যুরার দেন এ মিলিটারী অফিসার। ৮ বছর হয়ে গেছে আমি বীমা সেক্টরে। আল্লাহর রহমতে এখন আমি অতকিছু না জানলেও মোটামোটিভাবে একটা কোম্পানিকে সুন্দরভাবে নিয়মের মধ্যে চালানোর জন্য যতটুকু করা দরকার আমি মনে করি আমি ঐটা করতে পেরেছি। আমি এভিয়েশন বীমার উপরে মালয়েশিয়া থেকে একটা আলাদা ট্রেনিং করেছি, এছাড়া ব্যাংক ইন্স্যুরেন্স এর উপরেও একটা আলাদা ট্রেনিং করেছি। বীমা সেক্টরের একজন এম.ডি. হিসাবে কাজ করার জন্য মোটামোটিভাবে যতটুকু বাংলাদেশে দরকার আমি মনে করি আমি অতটুকু পড়াশুনা করেছি এবং আমি আরও করতে চাই। এই সেক্টরে আরও বেশ কিছুদিন ইনশাল্লাহ থাকতে চাই আপনাদের দোয়া এবং সহযোগীতায়। ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিবারে আমার এক মেয়ে এক ছেলে, তারা চলছে বেশ ভালই।

 

বিনিয়োগবার্তা: আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার ও আপনার প্রতিষ্ঠানের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।

 

ব্রি. জে. শফিক শামীম: আপনাদেরকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। দোয়া রাখবেন, আমরা যেন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান করে নিতে পারি।

 

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)